ছোট্ট কয়েকটি সেটিং। কিন্তু তার বোতাম এ দিক থেকে ও দিক সরলেই আকাশ-পাতাল পার্থক্য। অজান্তেই জীবনের গহীন কোণে কারা কখন ঢুকে পড়বে আর গোপন কথা জেনে ফেলবে তা বুঝেই উঠতে পারবেন না।
অথচ এই সেটিংয়ের দৌলতেই দেখা যাবে, বিনা প্রয়োজনেও জিনিসপত্র কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলছেন। কিংবা বেহাত হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা সিগন্যালে আদানপ্রদান করা তথাকথিত ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড’ তথ্য। নষ্ট হচ্ছে একান্ত যাপনের গোপনীয়তা।
তবে এই সব তথ্য লুটের প্রবণতাকে তালা চাবি দিয়ে আটকানোর সুযোগও রয়েছে আপনারই হাতে। শুধু কয়েকটি সেটিং বদলালেই মুক্তি মিলতে পারে এই নজরদারির হাত থেকে।
উইনডোজ়ের চোরাগোপ্তা এই চরবৃত্তি নিয়ে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের পরামর্শ যাঁরা দিনের অধিকাংশ সময় কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রেখে সময় কাটান, তাঁদের কিছু বিষয় সম্পর্কে সতর্ক হওয়া দরকার। তার জন্য মূলত তিনটি বিপজ্জনক উইনডোজ় সেটিং বন্ধ করতে হবে।
প্রথমেই বন্ধ করা জরুরি উইনডোজ়ের স্পিচ রেকর্ডিং সেটিং। আপনি কি জানতেন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ প্রায় সারা দিন ধরেই আপনি কী কথা বলছেন, তার সবটা রেকর্ড করছে? দিনের কোনও নির্দিষ্ট সময় নয়, সর্ব ক্ষণ!
উইনডোজ়ের দাবি, তারা গবেষণার জন্য এই কথাবার্তা রেকর্ড করে। কিন্ত আদতে বিষয়টি ততটা সরল নয়। ব্যবহারকারীর কথাবর্তায় কান পেতে পাওয়া তথ্য যত না গবেষণার কাজে লাগে, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজে লাগে চরবৃত্তিতে। কী ভাবে কান বন্ধ করবেন এই সেটিং?
প্রথমে সেটিংসে যান। সেখান থেকে প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিওরিটি বিকল্পে গিয়ে খুঁজে বার করুন ‘স্পিচ’। সেখানে ‘স্টপ কন্ট্রিবউটিং মাই ভয়েস ক্লিপস’ নামে একটি বিকল্প থাকবে। তাতে ক্লিক করুন।
কম্পিউটার আপনার অনলাইন সমস্ত কার্যকলাপের কথা জানে। মনেও রাখে, সব কিছু।
কি টাইপ করা হচ্ছে, কোন ওয়েবসাইটে কত বার যাচ্ছেন ব্যবহারকারী, কতটা সময় কাটাচ্ছেন সেখানে, কী অ্যাপ ব্যবহার করছেন— এই সব তথ্যই কম্পিউটার বা ল্যাপটপের নখদর্পণে।
অতি সতর্ক এবং ‘বুদ্ধিমান’ অনেকেই নজরদারি এড়াতে ইনকগনিটো মোডে কাজ করেন। কিন্তু আদতে এ ভাবেও আটকানো যায় না নজরদারি। ইনকগনিটো মোডেও ব্যবহারকারীর সব তথ্য রেকর্ড করে কম্পিউটার। জানতে পারে উইনডোজ়ও। ফলত মাইক্রোসফটের কাছে পৌঁছে যায় সমস্ত তথ্যই।
এ ব্যাপারে উইনডোজ়ের দাবি, পরীক্ষার জন্যই এ ব্যাপারে নজরদারি করা হয়। কিন্তু আদতে এই সমস্ত তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ করা হয় সঠিক মানুষের কাছে সঠিক বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে।
কী ভাবে নিজেকে বাঁচাবেন অনাবশ্যক বিজ্ঞাপনের ফাঁদ থেকে? এরও উপায় আছে।
প্রথমে সেটিংস, তার পর প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিওরিটি, সেখানে ডায়গনোস্টিক অ্যান্ড ফিডব্যাকে গিয়ে বন্ধ করতে হবে ‘সেন্ড অপশনাল ডায়গনোস্টিক ডাটা’ বিকল্পটি। নামে যতই অপশনাল হোক কাজে তা নয়।
অনেক সময়েই দেখা যায় কম্পিউটার চালু হতে অনেক সময় নিচ্ছে। তার কারণ আপনার অনুমতি ছাড়াই বেশ কিছু অ্যাপ চলছে কম্পিউটারে।
কম্পিউটার পুরোপুরি নিজের কাজ শুরু করার আগে থেকেই এই সমস্ত অ্যাপ নিজের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।
এই ধরনের অ্যাপ নিজে থেকেই কম্পিউটারের স্টার্টআপ তালিকায় নিজেদের জায়গা করে নেয়। অথচ এই সমস্ত অ্যাপের সেখানে থাকার কোনও দরকারই নেই।
সেটিংসে গিয়ে অ্যাপ-এর স্টার্টআপ বিকল্পটি খুঁজে নিন। ক্লিক করে দেখুন সেখানে কোন কোন অ্যাপ চালু রয়েছে, যা আপনি রাখেননি। অবিলম্বে সেই অ্যাপগুলিকে বন্ধ করুন।
মূলত স্টার্টআপ তালিকায় কোনও অ্যাপই বিশেষ জরুরি নয়। তাই প্রায় সবই সরানো যেতে পারে।
ফোনেও এই একই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সেন্সর বিকল্পটি বন্ধ রাখাই ভাল। অ্যাডিশনাল সেটিংয়ে গিয়ে প্রথমে ডেভেলপার অপশন চালু করতে হবে। তার পর সেখানে ‘কুইক সেটিং ডেভেলপার টাইল্স’ বিকল্পটি খুঁজে ‘সেন্সর অফ’ সেটিংস অন করতে হবে।
এই সেটিংসটি অন থাকলে ফোনের ক্যামেরা বা রেকর্ডিং কিছুই কাজ করবে না। ফলে সব সময় এই বিকল্প ব্যবহার করা যাবে না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে যদি আপনি চান আপনার ফোনের উপর কোনও অ্যাপ নজরদারি না করুক, তবে এই বিকল্প সেটিং ব্যবহার করা যেতে পারে।
গবেষণা বলছে স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে শুরু করে ফোন সর্বত্র ব্যবহারকারী কার্যকলাপের উপর নজরদারি চালানো যায়। তবে একটু সতর্ক থাকলে এই নজরদারদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে শেকল দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে ব্যবহারকারীর হাতেই।