সোমবার মাঝরাতে বরিশালের কাছে তিনকোনা এবং সন্দ্বীপের মাঝে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সেই ঘূর্ণিঝড়ের জের পৌঁছেছে অন্যত্রও।
স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর শক্তি খুইয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় সিত্রাং। তবে তার মধ্যেই বাংলাদেশের ছয় জেলায় পাঁচ মহিলা এবং দুই শিশু-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে গাছ চাপা পড়ে। দু’জন মারা গিয়েছেন নৌকাডুবিতে।
সিত্রাংয়ের ধাক্কায় বেসামাল সে দেশের রাজধানী ঢাকা। সোমবার বিকেল ৫টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহর জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। সঙ্গী ছিল তুমুল বৃষ্টি।
বৃষ্টির জেরে ঢাকার গ্রিন রোড, গার্ডেন রোড, পশ্চিম তেজতুরি বাজার, মীরপুর রোডের বেশ কিছু এলাকা এবং ধানমন্ডির অনেক এলাকায় রাস্তায় জল জমে যায়। ঢাকার নিচু এলাকাগুলিতে বাড়িতেও জল ঢুকেছে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’র সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ১২টার পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে গিয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার গ্রিন রোডে জল নেমেছে। কিন্তু পশ্চিম তেজতুরি বাজার এলাকার কিছু অংশ জলমগ্ন মঙ্গলবার সকালেও।
এ ছাড়াও, ধানমন্ডি ২৭, পূর্ব তেজতুরি বাজার, মহাখালি উড়ালপুলের নীচে, কাকলি সিগন্যাল থেকে বনানী উড়ালপুল, শান্তিনগর এবং পুরনো ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় রাস্তা জল দেখা গিয়েছে মঙ্গলবার সকালেও। জম জমেছে ঢাকার ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর চত্বরেও। তবে সেই জলের পরিমাণ সোমবারের তুলনায় কিছুটা কম।
ঢাকার শান্তিনগর, বসুন্ধরা সিটির সামনে, হাতিরঝিল, সাতমসজিদ রোডের আবাহনী মাঠ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ধানমন্ডি এবং শাহবাগ এলাকায় বেশ কিছু বড় গাছ উপড়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে।
রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় এবং গাছ উপড়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয় ঢাকায়। তবে সেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে মঙ্গলবার সকাল থেকে।
উপড়ে পড়া গাছ সরিয়ে রাস্তা সাফ করার কাজে নেমেছে ঢাকা প্রশাসন। গাছ কেটে ফেলছেন দমকলের কর্মীরা। এখন শহর জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলছে সেই কাজ।
মঙ্গলবার ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে খোলাও রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, ঢাকা, রাজশাহি, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জায়গায় এবং রংপুরের অনেক জায়গায় ঝোড়ো বাতাস-সহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
সোমবার দুর্যোগের সময় ঢাকার কিছু এলাকায় আগাম সতর্কতা হিসাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তবে তা ঘূর্ণিঝড় বিদায় নেওয়ার পর তা ফেরানো হচ্ছে।
দুর্যোগের সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দোকানে জল ঢুকে যায়। তার জেরে বিপাকে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে তার মধ্যেই চলে বেচাকেনা। মঙ্গলবার সকাল থেকে অবশ্য পরিস্থিতির বদল হয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানী-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি ঢাকায়। আকাশ বেশ পরিষ্কার। ভোর থেকে মেঘলা থাকলেও, সকাল ৯টা নাগাদ দেখা মেলে রোদের।