রবিবার রাতেই বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। হাওয়া অফিস বলছে, সাগরের উপর দিয়ে ক্রমেই উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে চলেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং।
শেষ ছ’ঘণ্টায় সিত্রাংয়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৮ কিলোমিটার।
হাওয়া অফিস বলছে, বিকেল সাড়ে ৫টায় সাগর দ্বীপের ২৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণপূ্র্বে এবং বরিশালের ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল সিত্রাং।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোররাতে বরিশালের কাছে তিনকোণা ও সন্দ্বীপের মধ্যে দিয়ে পেরোবে সিত্রাং।
বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে প্রথম ঘূর্ণিঝড় অঞ্চল তৈরি হয়। পরে তা পরিণত হয় নিম্নচাপে। এর পর নিম্নচাপ ক্রমে ক্রমে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।
রবিবার সন্ধ্যাবেলা গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এর পর ক্রমেই উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে এগোতে থাকে।
গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর দক্ষিণের বেশ কিছু জেলার আবহাওয়ায় বদল আসে। কলকাতা-সহ আশপাশের জেলায় রবিবার রাত থেকেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি শুরু হয়।
সোমবার ভোররাত থেকে হালকা বৃষ্টির সঙ্গে বইতে থাকে ঝোড়ো হাওয়া। কালীপুজোর সকাল থেকেই আশঙ্কার প্রহর গুনতে থাকেন দক্ষিণবঙ্গবাসী।
হাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছিল, সোম এবং মঙ্গলবার দক্ষিণে কলকাতা-সহ জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস।
সোমবার দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। রাতের দিকে হাওয়ার সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ৯০ কিলোমিটার।
সোমবার, কালীপুজোর দিন কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। রাত বাড়লে বাড়তে পারে হাওয়ার গতিবেশ। তখন এ সব জেলায় ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে হাওয়া বইতে পারে।
মঙ্গলবার দুই ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।
মঙ্গলবার দুই ২৪ পরগনায় ঝড়ের গতিবেগ আরও বাড়তে পারে। হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। এমনকি ঝড়ের গতিবেগ সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সর্বোচ্চ তা ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে সুন্দরবন, দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর।
সুন্দরবন এলাকায় ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, বকখালিতে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে বারণ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সিত্রাং নাম দিয়েছে তাইল্যান্ড। তাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের পদবি হল সিত্রাং। ভিয়েতনামের স্থানীয় ভাষায় এর অর্থ পাতা।
সিত্রাং মোকাবিলায় প্রস্তুত কলকাতা পুরসভা। শহরে যাতে জল না জমে, সে কারণে খুলে দেওয়া হয়েছে গঙ্গার সব ক’টি লকগেট। লকগেট খোলা থাকলে জল দ্রুত সরবে বলে মনে করছেন পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বিশেষজ্ঞরা।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিত্রাং আছড়ে পড়বে বাংলাদেশে। সোমবার গভীর রাতে সাতক্ষীরা উপকূল থেকে বরিশাল উপকূলে আঘাত হানবে এই ঘূর্ণিঝড়।
সন্ধ্যার পর জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালি, ভোলা, ঝালকাঠি, নোয়াখালি, ফেনির নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরে। পাঁচ থেকে আট ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
সিত্রাং অতিক্রম করার সময় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, ফেনি, চট্টগ্রাম উপকূলে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাতে ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।