boat house of navy officer

সমুদ্রের টানে ডাঙার সঙ্গে আড়ি! আড়াই বছর ধরে ‘অথৈ জলে’ সংসার পেতেছে ভারতীয় পরিবার

জমি, ইট-সিমেন্টের বাড়ির মোহ ত্যাগ করে সমুদ্রে আড়াই বছর ধরে পরিবার নিয়ে বাস করছেন গৌতম। তবে ডাঙার জীবন ছেড়ে জলের টানে বাকি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব একটা সহজ ছিল না।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ১০:৩২
Share:
০১ ১৭
Gaurav Gautam and his family have been living on a boat

আক্ষরিক অর্থেই সমুদ্রে পেতেছেন শয্যা। চার দেওয়াল, মাথার উপরে ছাদ আর সমস্ত আরাম ত্যাগ করে সাগরেই সংসার পেতেছে এক ভারতীয় পরিবার। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন ক্যাপ্টেন গৌরব গৌতম, তাঁর স্ত্রী বৈদেহী এবং তাঁদের কিশোরী কন্যা কেয়াকে নিয়ে ২০২২ সাল থেকে বাস করছেন জলে।

০২ ১৭
Gaurav Gautam and his family have been living on a boat

৪২ ফুট লম্বা জাহাজ, যার নাম রিভা, সেটিই বর্তমানে তাঁদের ভাসমান বাড়ি। জমি, ইট-সিমেন্টের বাড়ির মোহ ত্যাগ করে সেখানেই টানা আড়াই বছর ধরে পরিবার নিয়ে বাস করছেন গৌতম। তবে ডাঙার জীবন ছেড়ে জলের টানে বাকি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব একটা সহজ ছিল না।

Advertisement
০৩ ১৭
Gaurav Gautam and his family have been living on a boat

গৌরব, তাঁদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট, ‘দ্য রিভা প্রজেক্ট’-এ দৈনন্দিন জীবনের কিছু অংশের ভিডিয়ো পোস্ট করে সমুদ্রে বসবাসের আনন্দ এবং সীমাবদ্ধতা উভয়ই তুলে ধরেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘‘একটি নৌকায় সংসার ও জীবনযাপন করার জন্য আমরা চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা প্রায় সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছি।’’

০৪ ১৭

গৌরব দীর্ঘ দিন ধরেই সমুদ্রে জীবনযাপনের স্বপ্ন লালন করতেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এই স্বপ্ন প্রায় অধরাই থেকে যাচ্ছিল। কোভিড মহামারি তাঁর সেই স্বপ্নকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী নৌকার দাম কমে যাওয়ার ফলে তিনি তাঁর লক্ষ্যপূরণের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যান।

০৫ ১৭

জলের উপর জীবনযাপন সহজ ছিল না। এই দম্পতি তাঁদের প্রায় সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন, তাঁদের জিনিসপত্র ৬ হাজার কেজি থেকে কমিয়ে মাত্র ১২০ কেজি করেছিলেন। একটি আবেগঘন পোস্টে গৌরব লেখেন, ‘‘নৌকায় আমরা যে জিনিসপত্র রাখতে পারতাম না সেগুলি আর প্রাণে ধরে রাখার কোনও অর্থ ছিল না।’’

০৬ ১৭

বৈদেহী উত্তরাধিকার সূত্রে চেকোস্লোভাকিয়ায় তৈরি কিছু বাসনপত্র পেয়েছিলেন। এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের সংসারের অংশ ছিল। তিনি জানতেন যে, এটি তাঁদের নতুন বাড়িতে টিকবে না। সে কারণে মনের দুঃখ চেপে সেটি তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে উপহার দিয়েছিলেন।

০৭ ১৭

১৯৮৮ সালে নির্মিত রিভা কেনার পর, জলে সংসার পাতার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক ভাবে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না বলে গৌরব জানিয়েছেন। তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবনধারা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমরা অজানার দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’’ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে গৌরব ও তাঁর পরিবার মনে করেন নৌকাতেও হতে পারে সুখের সংসার।

০৮ ১৭

রিভা নামের পালতোলা নৌকাটি লম্বায় ৩২ ফুট। এর ভিতরে আছে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছু। আছে দু’টি শোবার ঘর, একটা রান্নাঘর ও বাথরুম।

০৯ ১৭

কোনও দেওয়াল নেই, নেই কোনও রুটিনের বেড়াজাল। কেবল চারপাশে সাগর, মাথার ওপর নীল আকাশ আর বিশুদ্ধ বাতাস। মেটাতে হয় না নগরজীবনের বাড়তি বিলও। শুধু সাগরের টেউয়ের তালের সঙ্গে নিজেদের জীবনের ছন্দগুলিকে মিলিয়ে নিয়ে দিন কাটে এই পরিবারের।

১০ ১৭

তবে নৌকায় জীবনযাপনের কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। ঝড়ের সময় সমুদ্রে চলাচল থেকে শুরু করে ন্যূনতম উপকরণে খাপ খাইয়ে নেওয়া যার মধ্যে অন্যতম। ধীরে ধীরে পরিবারটি তাদের নিজস্ব কয়েকটি উপায় বার করে নিয়েছে।

১১ ১৭

‘দ্য বেটার ইন্ডিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বৈদেহী বলেন, ‘‘আমরা শিখেছি, কী ভাবে সবচেয়ে কম জিনিসে সবচেয়ে ভাল ভাবে বাঁচা যায়। বাতাস আমাদের যে দিকে নিয়ে যায়, আমরা সে দিকেই যাই। ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে দেখি, কোথায় এলাম। মাঝেমাঝেই বিভিন্ন দ্বীপে থামি। ঘুরে বেড়াই। মেয়ে গাছের সঙ্গে দড়ি বেঁধে দোলনা বানিয়ে দোল খায়। ফলমূল সংগ্রহ করি। আবার নৌকায় উঠে পড়ি।’’

১২ ১৭

সমুদ্রের মেজাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া ছাড়াও জীবনযাত্রা ও রোজের অভ্যাসের প্রচুর পরিবর্তন ঘটাতে হয়েছে এই দম্পতি ও তাঁদের মেয়েকে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি ছিল কেয়ার পড়াশোনা। প্রচলিত স্কুলে পড়ার পরিবর্তে তাকে নৌকায় পড়ানো হয়। তার পড়ার বইয়ের বাইরেও প্রকৃতির নানা পাঠও নিতে শুরু করেছে কেয়া।

১৩ ১৭

সাগরে কী ভাবে দিকনির্ণয় করে নৌকা চালাতে হয়, বাতাসের গতিবিধি জানতে হয়। জলে নেমে সামুদ্রিক প্রাণীদের সঙ্গে সাঁতার কাটা বা স্নরকেলিং, সাগরে মাছ ধরায় এই দু’বছরে বেশ পটু হয়ে উঠেছে সে, জানান গৌরব।

১৪ ১৭

বৈদেহী জানান, সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে নৌকাটিতে আলো জ্বলে। মিঠে জলের জন্য সংগ্রহ করতে হয় বৃষ্টির জল। মাছ ধরেন। নৌকার প্রতিটি ইঞ্চিকে কাজে লাগান। কয়েক মাস পর পর বন্দরে থেমে চা, নুন, মশলা ও তেলের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নেন। নৌকায় রান্নার বিশেষ সুযোগ নেই বলে জানান গৌরব। রসনাতৃপ্তি বা বিশেষ কোনও খাবার চেখে দেখার ইচ্ছা হলে বন্দরে নোঙর করে সেই ইচ্ছাপূরণ করতে হয়।

১৫ ১৭

নৌকায় ভাজাভুজি জাতীয় খাবার তৈরি করা যায় না। নৌকার নড়াচড়ার ফলে তেল ছড়িয়ে বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে এক পাত্রের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। ভাত, সবজি এবং মুরগি রান্নার জন্য একটি প্রেশার কুকার রেখেছেন রান্নাঘরে। তাতে এক ধরনের বিরিয়ানিও মাঝেমাঝে রান্না হয়ে যায়। এই খাবারের জন্য ন’কেজি গ্যাস সিলিন্ডার যথেষ্ট।

১৬ ১৭

একটি অভেনও আছে, যেখানে বৈদেহী মাঝেমাঝে কেক বানান বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এই পরিবারটি। এ ছাড়াও হিমায়িত মাংস, টিনজাত ফল ও সব্জি, শাকসব্জি এবং বেক্‌ড বিন একেবারে সুপারমার্কেট থেকে কেনা হয়।

১৭ ১৭

নৌকার জীবনটা হয়তো কিছুটা স্বস্তির রোদ আর সূর্যাস্তে ভরা। কিন্তু এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িত। বৈদেহী এবং গৌরবকে পরস্পরকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয়। নৌ-চলাচল সংক্রান্ত নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এমনকি যখন এটি আরামদায়ক বলে মনে হয়, তখনও গৌরব মনে করিয়ে দেন যে সমুদ্রে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।

সব ছবি:সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement