দুই দশক ধরে শরীরচর্চা এবং প্রশিক্ষণ। ৩০ বছর বয়সি নারীদের মতো শরীর এবং রূপ ধরে রেখে বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় সেরার খেতাব জিতলেন ৫৫ বছর বয়সি এক মহিলা।
চিনের ওই মহিলার নাম ওয়াং জিয়ানরং। তিনি জানিয়েছেন, বয়স সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য শরীরচর্চা শুরু করেছিলেন। আর সেই সিদ্ধান্তই সাফল্য এনে দিয়েছে তাঁকে।
চিনা নেটাগরিকদের কাছে ওয়াং পরিচিত ‘মাস্ল গ্র্যান্ডমা’ নামে। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বিগত পাঁচ বছর ধরে সাংহাইয়ে একটি জিম চালাচ্ছেন তিনি।
চলতি মাসে চিনে আয়োজিত একটি বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতা জিতে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছেন ওয়াং। প্রতিযোগিতায় তিনি টেক্কা দিয়েছিলেন তাঁর থেকে বয়সে অনেক ছোট তরুণীদের।
ওয়াং সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, মানুষের মধ্যে বয়স নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু ধ্যানধারণা রয়েছে। অনেকেই নাকি মনে করেন পঞ্চাশের পর আর জিমে গিয়ে লোহালক্কড় তোলা যায় না। সুঠাম শরীরও গঠন করা যায় না। সে সব ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতেই তিনি শরীরচর্চা শুরু করেন। পরে সেটাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন।
অন্য মহিলাদের, বিশেষ করে মধ্যবয়সি মহিলাদের একটি সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেও তিনি শরীরচর্চাকে হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওয়াং।
‘মাস্ল গ্র্যান্ডমা’ বিগত দু’দশক ধরে শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত। বছরের পর বছর ধরে পেশিবহুল চেহারা ধরে রেখেছেন তিনি। তাঁর শারীরিক গঠন দেখলে লজ্জা পাবেন তরুণীরাও।
ওয়াং জানিয়েছেন, শরীরের জন্য বহু বার কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। অনেকে কুপ্রস্তাবও দিয়েছেন। তাঁর দাবি, সমাজ এখনও নির্মেদ এবং ফর্সা ত্বকের মহিলাদের পছন্দ করে। আর সে কারণে অনেকে তাঁকে সমাজমাধ্যমে কটূক্তি করেন। কেউ কেউ আবার অভদ্রতাও করেন।
মহিলা বডিবিল্ডার জানিয়েছেন, তাঁর ৫৫ বছর বয়স হলেও ত্বক এখনও টান টান। আর সে কারণেও অনেকে তাঁকে কমবয়সি ভেবে কুমন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে তরুণীর মতো দেখতে লাগে ঠিক কথা। কিন্তু তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে আমি সুস্থ রয়েছি।”
সপ্তাহে কমপক্ষে ছ’দিন দেড় ঘণ্টা করে জিমে সময় কাটান ওয়াং। ‘মাস্ল গ্র্যান্ডমা’ জানিয়েছেন, এখনও ১২৭ কেজি ওজনের ডেড লিফ্ট, ৯৫ কেজি ওজনের স্কোয়াট এবং ৭২ কেজি ওজনের বেঞ্চপ্রেস করতে পারেন তিনি।
তবে তিনি শরীরচর্চা করেন মানে যে খাওয়াদাওয়া খুব মেপে করেন, এমনটা নয়। তাঁর সম্বন্ধে এমন ধারণা পোষণ করতে বারণ করেছেন ওয়াং। জানিয়েছেন, সময়ে সময়ে অনেকটা করে খাবার খান তিনি। বাইরের খাবারও খান।
মহিলাদের সুস্থ এবং সচল থাকার জন্য কী করা উচিত, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে পরামর্শ দেন ওয়াং। তাঁর দাবি, সুস্থ থাকতে প্রত্যেককে প্রতি দিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমোনো উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে মাংস-ডিম খাওয়া এবং জল পান করা ও ব্যায়াম করা ভাল শরীর ধরে রাখার জন্য অপরিহার্য বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ওয়াং সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শুরু করার নির্দিষ্ট সময় পর ফলাফল না পেলেও অধৈর্য হলে চলবে না। প্রতি দিন প্রশিক্ষণ চালাতে হবে। এক দিনও শরীরচর্চা বাদ দেওয়া যাবে না।’’
ওয়াঙের একমাত্র পুত্র আমেরিকায় গবেষণা করেন। ছেলে-সহ পরিবারের সকলেই তাঁর শরীরচর্চা এবং বডিবিল্ডিংয়ে খেতাব জেতার জন্য গর্বিত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে ওয়াং ব্যাপক জনপ্রিয়। বিভিন্ন সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে বহু মানুষ তাঁকে অনুসরণ করেন। অনুরাগীদের জন্য মাঝেমধ্যেই শরীরচর্চার ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেন তিনি।