আশঙ্কা সত্যি হতে চলেছে। গভীর নিম্নচাপে পরিণত হল পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, গত ৬ ঘণ্টায় এই নিম্নচাপ ১৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে আরও উত্তর-পশ্চিমে সরে গিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলেও আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বর্তমানে ওই গভীর নিম্নচাপ পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ৫৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, সাগর দ্বীপ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের বরিশাল থেকে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে বলেও হাওয়া অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
হাওয়া অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে এই গভীর নিম্নচাপ অঞ্চল। আর তার পরই এই গভীর নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়িয়ে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড়ে। মধ্য বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেও হাওয়া অফিস জানিয়েছে।
এর পর আরও উত্তর এবং উত্তর-পূর্বে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা এই ঘূর্ণিঝড়ের। ২৫ অক্টোবর ভোরে বাংলাদেশের তিনকোনা দ্বীপ এবং সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে।
বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে এই ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহবিদরা।
যদিও এই ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চিমবঙ্গের কোনও উপকূলে আছড়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও আবহবিদরা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে সিত্রং। যদিও হাওয়া অফিসের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণা করা হয়নি।
তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে সোম এবং মঙ্গলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার দুই ২৪ পরগনায় এবং দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে মঙ্গলে।
সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া এবং হুগলি-সহ অন্যান্য বিভিন্ন জেলাতেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে দুই ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায়। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়াও। সোমবার দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার।
দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার।
কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। মঙ্গলবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।
মঙ্গলবার দুই ২৪ পরগনায় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিমি। পূর্ব মেদিনীপুরে বইতে পারে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিমি।
ইতিমধ্যেই উপকূলীয় দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নবান্নের তরফে এই জেলা প্রশাসনগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তৎপর হয়েছে প্রশাসন। উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। সোম ও মঙ্গলবার সুন্দরবনে ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুরের মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।
পাশাপাশি, জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকেও আশ্রয় শিবিরে পরিণত করারও নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই জেলাগুলিতে যুদ্ধ তৎপরতায় আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের জন্যও।
উপকূলীয় এই জেলাগুলির বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন গত দু’তিন বছরে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত। তাই নতুন ঘূর্ণিঝড় আসার খবর পেয়েই এই এলাকাগুলিতে বসবাসকারী মানুষদের চোখে-মুখে আশঙ্কা ফুটে উঠেছে।
২৩ অক্টোবর থেকে মৎস্যজীবীদেরও সাগরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যারা সমুদ্রে রয়েছেন, সেই মৎস্যজীবীদেরও ইতিমধ্যেই ফিরে আসার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সিত্রং নামটি তাইল্যান্ডের দেওয়া। উচ্চারণ অনুযায়ী, ‘সি-তরাং’। সিত্রং আসলে তাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের একটি পদবি।
ভিয়েতনামের ভাষায় আবার এর অর্থ পাতা। ২০২০ সালে আবহাওয়া দফতরের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় ‘সিত্রং’।