কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ কর্পোরেট দুনিয়ার বড়কর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কেউ আবার এই গতানুগতিক রাস্তায় না হেঁটে ক্রীড়াজগৎকেই নিজের ভবিষ্যতের পথ হিসাবে বেছে নেন। গতানুগতিক রাস্তায় না হেঁটে খেলার জগৎকেই নিজের ভবিষ্যৎ বানাতে চেয়েছিলেন হায়দরাবাদের এক তরুণ। নাম কার্তিক মাধিরা।
চাইলেই যে সব সময় তা পাওয়া যায়, এমনটা নয়। কার্তিকের ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটল। যে পথ ধরে তিনি হাঁটা শুরু করেছিলেন, যে পথকে নিজের ভবিষ্যৎ বানাতে চেয়েছিলেন, শেষমেশ সেই পথেই বিচ্যুতি ঘটল। যে লক্ষ্য নিয়ে কার্তিক এগোচ্ছিলেন, যে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করেছিলেন, হঠাৎই তা বাঁক নিল। ফলে এক জন ক্রিকেটার থেকে তিনি হয়ে উঠলেন আইপিএস অফিসার।
শৈশব থেকে যে হাতে ব্যাট-বল উঠেছে, সেই ব্যাট, উইকেট, বল এবং ২২ গজের দৌড় ছেড়ে দিয়ে কার্তিক হয়ে উঠলেন পুলিশকর্তা। এখন তাঁর ২২ গজের দৌড় বদলে গিয়েছে হাজার হাজার গজের দৌড়ে।
শুধু গলি ক্রিকেটই নয়, অনূর্ধ্ব ১৩, ১৫, ১৭ এবং ১৯-এ ক্রিকেট খেলেছেন কার্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ক্রিকেটে যথেষ্ট নামডাক ছিল তাঁর। খেলায় নিজেকে আরও বেশি করে উজাড় করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। আচমকাই সেই দৌড় থমকে যায়।
কার্তিকের খেলার এই গতি থমকে যাওয়ার নেপথ্যে কী কারণ ছিল, তা নিয়ে নানা কাহিনিও আছে বটে। তবে সেগুলি খুব একটা স্পষ্ট নয়। কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ব্যক্তিগত কারণ এবং আঘাতের জন্যই নাকি খেলার জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন কার্তিক।
তবে এক জন স্পোর্টসম্যান যে কখনও থেমে থাকেন না, জীবনকে অন্য খাতে বয়ে নিয়ে গিয়ে সেটাই যেন প্রমাণ করেছিলেন কার্তিক। ক্রিকেটার থেকে সম্পূর্ণ একটা আলাদা জগতে ঢুকে পড়েন তিনি। খেলা তো না হয় থমকে গিয়েছে, কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার কার্তিককে দমাতে পারেনি।
জওহরলাল নেহরু টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন কার্তিক। তার পর একটি সংস্থায় কাজও করেছিলেন বেশ কিছু দিন। কিন্তু খেলার জগৎ থেকে সরে আসায় কিছু একটা করার, নিজেকে উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত করার খিদেটা বেড়ে গিয়েছিল তাঁর।
কার্তিক উপলব্ধি করেন কোনও সংস্থায় কাজ করে লক্ষ্যপূরণ করতে পারবেন না তিনি। আর এখান থেকেই তাঁর চিন্তাভাবনা অন্য দিকে মোড় নেয়। কার্তিক স্থির করেন, তিনি ইউপিএসসি দেবেন। আইপিএস অফিসার হবেন। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। লক্ষ্যকে সামনে রেখে দৌড় শুরু করলেন তিনি।
কিন্তু এই পথও যে খুব একটা সহজ নয় সেটা জানতেন কার্তিক। প্রস্তুতি নেওয়া তো শুরু করলেন তিনি, কিন্তু ব্যর্থ হলেন। ইউপিএসসির প্রিলিমিনারি পাশই করতে পারছিলেন না কার্তিক। পর পর তিন বার ব্যর্থ হয়েও হাল ছাড়েননি তিনি।
২০১৯ সালে ইউপিএসসিতে আবার বসেন কার্তিক। সেই বছর প্রিলিমিনারি এবং মেইনস দু’টিই পাশ করেন।
চতুর্থ বারের চেষ্টায় ইউপিএসসি পাশ করেন কার্তিক। শুধু তাই নয়, সারা দেশের মধ্যে ১০৩ র্যাঙ্ক করেন তিনি।
বর্তমানে কার্তিক মহারাষ্ট্রে কর্মরত। এক জন ক্রিকেটার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে গিয়ে হায়দরাবাদের কার্তিক হয়ে উঠলেন এক জন আইপিএস অফিসার।