আমেরিকার এই পানশালায় গিয়ে সুরাপান করেই ক্ষান্ত হন না মহিলারা। বরং মত্ত হয়ে নিজেদের দামি অন্তর্বাসও ছিঁড়ে ফেলেন অনেকে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সেগুলি জমা দেন পানশালায়। পরের দিন নেশা কাটলে অবশ্য তড়িঘ়ড়ি ফোন করেন পানশালায়। খানিক অপ্রস্তুত হয়ে প্রশ্ন করেন, ‘‘আমার দামি ব্রা-টা কি ফেরত পেতে পারি?’’
পরের দিন অন্তর্বাস ফেরত পেতে ওই মহিলারা আবার ছোটেন একই পানশালায়। আবার দেদার মদ গিলে নেশায় ঢুলুঢুলু হয়ে পড়েন। আবার নিজেদের অন্তর্বাস ছিঁড়ে জমা রাখেন পানশালায়। সংবাদমাধ্যমে এ হেন দাবি করেছেন ওই পানশালার মালকিন খোদ লিলিয়ানা ‘লিল’ লভেল।
নিউ ইয়র্কের অভিজাত মহল্লা ম্যানহাটনের ইস্ট ভিলেজে রয়েছে ‘কায়োটি আগলি সালোঁ’ নামের এক পানশালা। যার নাম শুনলে একটি হলিউড ছবির কথা মনে পড়ে যেতে পারে। প্রায় ওই একই নামে ২০০০ সালে মুক্তি পেয়েছিল হলিউডি ছবিটি।
ওই ছবিতে ‘কায়োটি আগলি’ পানশালাকে ঘিরে জমে ওঠে গায়িকা হওয়ার স্বপ্নবোনা এক ছোট শহরের মেয়ের কাহিনি। বড় শহরে গায়িকা হতে এসে পেট চালাতে বাধ্য হয়েই এই পানশালায় কাজ নেয় সে। এর পর প্রেম, স্বপ্নভঙ্গের চিরসবুজ গল্প এগোতে থাকে। ছবির শেষে অবশ্য স্বপ্নপূরণের পালা।
মোটে সাড়ে ৪ কোটি ডলারের স্বল্প বাজেটের ছবি ‘কায়োটি আগলি’। মুখ্য চরিত্রে ছিলেন পাইপার পেরাবো। সঙ্গে অ্যাডাম গার্সিয়া এবং মেলানি লিনস্কি। ওই ছবিতে পাইপার পেরাবোর বাবার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল জন গুডম্যানের মতো সুঅভিনেতাকে। এবং অবশ্যই পানশালার মালকিন লিলিয়ানের চরিত্রে মারিয়া বেলো। অনেকের মতে, এখনও পর্যন্ত অস্কার জয় না করলেও যিনি হলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী।
‘কায়োটি আগলি’ ছবিতে ছিলেন না তথাকথিত কোনও হলিউড সুপারস্টার। তবে মুক্তির পর তা হলিউড কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে সেটি ‘কাল্ট’ ছবির তকমা নিয়ে নেয়।
ওই ছবিতে ‘লিল’-এর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল মারিয়া বেলোকে। ছবির মতোই ম্যানহাটনের এই পানশালার যাবতীয় কাজকর্মের দায়িত্বে রয়েছেন মেয়েরা। তবে বাস্তবে ম্যানহাটন ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে একটি ‘ব্র্যান্ডে’ পরিণত হয়েছে ‘কায়োটি আগলি’ পানশালা।
সব মিলিয়ে ২৭টি জায়গায় এই নামের পানশালা খুলেছেন লিলিয়ান। সুদূর কিরঘিজ়স্তানেও রয়েছে ‘কায়োটি আগলি’। হেসে লুটিয়ে পড়ে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’-এর কাছে লিলিয়ানা বলেন, ‘‘কিরঘিজ়স্তান যে কোথায় রয়েছে, তা-ই জানতাম না। তবে সেখানেও একটা ‘কায়োটি আগলি’ খুলেছি।’’
‘কায়োটি আগলি’-তে সুরা পরিবেশনের ফাঁকে সেখানকার অলিখিত ‘নিয়ম’ মানতে হয় মহিলা কর্মীদের। পানশালার ‘প্রথা’ মেনে কাউবয় বুট পরে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে নাচাগানা করতে হয় তাঁদের। সেই হলিউডি ছবিতেও তেমনই করতে দেখা গিয়েছিল ভায়োলেট স্যানফোর্ডকে। পর্দায় যাঁকে জীবন্ত করেছিলেন পাইপার পেরাবো।
এতেই শেষ নয়। সুরাপান করে টলমল অবস্থায় বাড়ি ফেরার আগে নাকি নিজেদের অন্তর্বাস ছেড়ে যান বহু মহিলা। লিলিয়াম জানিয়েছেন, সেগুলি জমা হতে থাকে পানশালায়। এর পর অন্তর্বাসগুলি পানশালার দেওয়ালে প্রদর্শনীর জন্য ঝোলানো হয়।
হুঁশ ফিরলে ওই মহিলারাই ফোন করেন লিলিয়ানকে। সঙ্গে থাকে ‘চেনা’ অনুরোধ। হেসে গড়িয়ে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘ওই ফোনগুলি অনেকটাই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মেয়েদের... ।’’
লিলিয়ান বলেন, ‘‘বেশির ভাগ মেয়েই ফোন করে আমাকে বলেন, ‘গত কাল রাতে আমার ৯০ ডলারের ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট ব্রা-টা ফেলে এসেছি। সেটা কি ফেরত পাওয়া যাবে?’’ ভারতীয় মুদ্রায় ৭ হাজার টাকারও বেশি দামি ওই অন্তর্বাসগুলি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন লিলিয়ান। তবে তাঁর দাবি, পরের রাতে আবার একই কাণ্ড করে বসেন ওই মেয়েরা।
লিলিয়ানের কথায়, ‘‘অন্তর্বাস ফেরত নিতে এখানে ফিরে আসেন ওই মেয়েরা। তবে আবার মদ খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর আগের রাতের মতোই নিজেদের অন্তর্বাস ছেড়ে রেখে চলে যান।’’
লিলিয়ান জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালে স্বামী টোনি পিসিরিলোর সঙ্গে মিলে ইস্ট ভিলেজে এই পানশালা খুলেছিলেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও ‘কায়োটি আগলি’-র হাত ছাড়েননি লিলিয়ান।
‘কায়োটি আগলি’-র জন্মের ২১ বছর পর এই পানশালায় সংস্কারের কাজ শুরু হয়। তখন সে সময় পর্যন্ত পানশালায় জমা হওয়া বহু অন্তর্বাস হারিয়ে গিয়েছিল। সেটি ছিল ২০১৪ সাল।
কিছু দিনের মধ্যেই অবশ্য ‘কায়োটি আগলি’-তে অন্তর্বাস জমা হতে শুরু করে। ২০২১ সালে ইস্ট ভিলেজ ছেড়ে ইস্ট ম্যানহাটনের ফোর্টিন্থ স্ট্রিটে গিয়ে উঠেছে ‘কায়োটি আগলি’। আজকাল ওই নতুন পানশালার দেওয়ালে সেই অন্তর্বাসগুলি ঝোলানো থাকে।
‘কায়োটি আগলি’-র কাউন্টারে নাচগান করেও গ্রাহকদের মন জয় করেন কর্মীরা। তাঁদের কাছ থেকে মোটা ‘টিপ’ও পান তাঁরা। তা থেকে রোজগার বাড়ে পানশালারও।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি, দুনিয়াজোড়া ২৭টি ‘কায়োটি আগলি’ থেকে ১০০ কোটি ডলারের ব্যবসা করেন লিলিয়ান।
হলিউডি ছবিতে ‘কায়োটি আগলি’কে নিয়ে যা কিছু দেখানো হয়েছিল, তা কি হুবহু সত্যি? ৫৫ বছরের লিলিয়ান অবশ্য তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘ওই ছবির একটি দৃশ্যে গোটা পানশালার লোকজনকে বিনা পয়সায় মদ দিয়েছিলেন ‘লিল’। তবে তা সত্যি নয়। তেমন করার আগে নিজের আঙুল কেটে ফেলতে পারি।’’