চপার ভেঙে মৃত্যু হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির। মারা গিয়েছেন চপারে রইসির সহযাত্রী তথা সে দেশের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহিয়ানও।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা এবং সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তরফে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে যে, পর্বতে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে রইসির চপার। সেই সময় দুর্ঘটনাস্থলে ভারী বৃষ্টি এবং ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা খুব কম ছিল বলেও জানা গিয়েছে।
আপাত ভাবে আকস্মিক দুর্ঘটনার জেরেই রইসির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দেশটির নাম ইরান আর তার শত্রু দেশের নাম ইজ়রায়েল বলেই সন্দেহপ্রবণ যাঁরা, তাঁরা এই দুর্ঘটনা নিয়ে হরেক প্রশ্ন তুলছেন।
আর এ ক্ষেত্রেও চর্চায় উঠে আসছে ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের নাম। তারাই কৌশল রচনা করে রইসিকে হত্যা করল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
ইজ়রায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই শিয়া অধ্যুষিত ইরানের সঙ্গে তার ‘মধুর’ সম্পর্ক। সাম্প্রতিক ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতে সরাসরি প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠনটির পক্ষ নেয় ইরান।
ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে পশ্চিম এশিয়ায় লেবানন, সিরিয়া, ইরাক কিংবা ইয়েমেনের মতো দেশকে মদত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তেহরানের বিরুদ্ধে।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলি হামলায় ইরানের দুই সেনা আধিকারিকের মৃত্যু হয়। পাল্টা ইজ়রায়েলে হামলা চালায় ইরান।
রবিবার রইসি আজ়ারবাইজান সীমান্তে একটি কর্মসূচি সেরে তেহরান ফিরছিলেন। পড়শি রাষ্ট্র হলেও আজ়ারবাইজানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বরাবরই শীতল। তার একটি বড় কারণ এই যে, আজ়ারবাইজানের ইজ়রায়েল ঘনিষ্ঠতা। এমনকি দেশটির মোসাদকে সাহায্য করারও ইতিহাস রয়েছে।
যদিও ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের যাঁরা বিরোধী, তাঁদেরও কিছু যুক্তি রয়েছে। সেগুলির একটি হল, ইজ়রায়েল বা মোসাদ অতীতে কখনও কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের উপর সরাসরি হামলা চালায়নি।
বরং চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে শত্রু দেশের সামরিক পরিকাঠামো নষ্ট করা কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থকে নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে। তবে ব্যক্তিটির নাম রইসি বলেই অনেকে এই অলিখিত নীতিতে বদলের সম্ভাবনা দেখছেন।
৬৩ বছরের রইসি ইরানের চরম রক্ষণশীল সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। খামেনেইয়ের উত্তরসূরি হিসাবে একাধিক বার তাঁর নাম উঠে এসেছে।
ধর্মগুরু হিসাবে কর্মজীবন শুরু করা রইসি একাধিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিলেন। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর বহু রাজনৈতিক বন্দিকে বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রইসির বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে কুর্দ তরুণী মাহশা আমিনির রহস্যমৃত্যুর পরে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। মূলত মহিলাদের নেতৃত্বে হওয়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ব্যাপক দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠে রইসি প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
২০২১ সালে যে ভোটে রইসি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন, তা নিয়েও বহু বিতর্ক রয়েছে। ২০১৭ সালে ভোটে লড়তে নেমে ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন রইসি। কিন্তু ২০২১ সালে তুলনায় কম ‘চরমপন্থী’ রৌহানিকে হারিয়ে দেন রইসি। ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে।
বহু বিতর্ককে সঙ্গী করে চলা সেই রইসি তাঁর চরমপন্থী নীতির কারণেই শত্রু দেশের কোপে পড়লেন কি না তা নিয়ে জল্পনা ঘনীভূত হচ্ছে। বহু গোষ্ঠীতে বিভক্ত ইরানের কেউ বা কারা ‘পথের কাঁটা’ রইসিকে সরাতে ষড়যন্ত্র করল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।