হিমাচল প্রদেশে ভোটের মুখে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের ‘কৃতিত্ব’ নিয়ে প্রচারে নামলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মঙ্গলবার হিমাচলে ভোটের প্রচারে নেমে যোগী জানিয়ে দিলেন যে, মন্দির নির্মাণের কাজ অর্ধেকেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ হবে।
ক্ষমতায় এলে রামমন্দির নির্মাণ করা হবে— এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের কাজ ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। কথা রেখে অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণ করার কাজকে নিজেদের ‘বড় কৃতিত্ব’ হিসাবেই বার বার তুলে ধরে গেরুয়া বাহিনী।
ক’দিন বাদেই হিমাচলে ভোট। তার আগে ভোটের প্রচারে রামমন্দিরের প্রসঙ্গ যে ভাবে টানলেন যোগী, তা রাজনৈতিক দিক থেকে আলাদা তাৎপর্য পেয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী ১২ নভেম্বর হিমাচলে বিধানসভা নির্বাচন।
মঙ্গলবার হিমাচলের পালমপুরে এক সভায় যোগী বলেন, ‘‘এই জায়গা থেকে আপনাদের আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ অর্ধেকের বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষেই এই মহান মন্দির গড়ে উঠবে, যার জন্য ৫০০ বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।’’ রামমন্দির নির্মাণকে ‘ঐতিহাসিক কাজ’ বলেও বর্ণনা করেছেন যোগী।
২০২০ সালের ৫ অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়ে যায় মন্দির নির্মাণের কাজ।
মন্দিরের ভূমিপূজন করে ৪০ কিলোগ্রাম ওজনের ইট গেঁথে মন্দিরের শিলান্যাস করেছিলেন মোদী। রামমন্দিরের গর্ভগৃহে প্রথম পাথরটি গেঁথেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ।
মন্দিরের কংক্রিটের ভিত্তির উপর আরও একটি স্তর তৈরি করা হয়েছে। যা তৈরি হয়েছে গ্রানাইট ও বেলেপাথরের মিশ্রণ দিয়ে। মন্দিরের দেওয়ালে বসানো হবে রাজস্থানের গোলাপি রঙের বেলেপাথর।
মন্দির ট্রাস্ট সূত্রে খবর, কর্নাটক থেকে এসেছে গ্রানাইট। মির্জাপুর থেকে এসেছে বেলেপাথর। এখানেই শেষ নয়। মন্দিরের সৌন্দর্যায়নের কাজের জন্য খাস রাজস্থান থেকে এসেছে মার্বেল পাথর।
রাজস্থানের বনশি পাহাড়পুর থেকে এক লক্ষ ঘন ফুট শ্বেতপাথর এসেছে অযোধ্যায়। মন্দিরের গর্ভগৃহ আলো করে থাকবে রাজস্থানের মাকরানা পাহাড় থেকে আনা সাদা মার্বেল।
রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের তরফে এই তথ্য জানানো হয়েছে। মন্দিরে ব্যবহার করা হবে বেলেপাথর, গ্রানাইটের মতো দামি পাথর। এ ছাড়াও মন্দিরের গায়ে খোদাই করা হবে গোলাপি বেলেপাথর। গর্ভগৃহে ব্যবহার করা হবে মাকরানা সাদা মার্বেল। উৎপল নামে এক ইঞ্জিনিয়ার এনডি টিভিকে সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘এই জায়গায় কাজ করতে পেরে গর্ব বোধ করছি।’’
সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, মন্দির নির্মাণের কাজ করছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো। গোটা প্রক্রিয়া নজরদারির কাজে রয়েছে টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স। মোট ১১০ একর জমিতে ছড়ানো মন্দির নির্মাণের জন্য ৯০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
মন্দির চত্বরে থাকবে একটি জাদুঘর, একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং একটি আর্কাইভ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, রামলালার মূল মন্দিরকে ঘিরে থাকবে আরও ছ’টি মন্দির।
এই মন্দিরগুলো হল ব্রহ্মামন্দির, সূর্যমন্দির, গণেশমন্দির, শিবমন্দির, বিষ্ণুমন্দির এবং দুর্গামন্দির। অযোধ্যার যে এলাকায় মন্দির তৈরির কাজ চলছে, সেখানকার মাটি তুলনায় নরম। তাই মন্দিরের ভিত্তি তৈরির সময় বাড়তি সতর্কতা নিতে হয়েছে। ঠিক এই কারণেই কংক্রিটের মূল ভিত্তির উপর পাথরের আস্তরণ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই রামমন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়কাল রাজনৈতিক দিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মঙ্গলবার যোগী আদিত্যনাথ বললেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই মন্দির তৈরি হয়ে যাবে।।
সম্প্রতি মন্দিরের দখল ঘিরে দু’দল সাধুর সংঘর্ষে অশান্তি ছড়িয়েছিল রামজন্মভূমি অযোধ্যায়। নরসিংহ মন্দির চত্বরে ওই সংঘর্ষের সময় বোমা পড়ে বলেও অভিযোগ।