২২শে জানুয়ারি অযোধ্যায় রামলালার মূর্তিতে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্যেই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। সোমবারের অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার হবে দেশের নানা প্রান্তে।
তবে অনুষ্ঠানের দিন ছুটি ঘোষণা করে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল দিল্লি এমসকে। বিতর্কের জেরে অবশ্য সেই ছুটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে ছুটি ঘোষণা করছে কংগ্রেসশাসিত একটি রাজ্য।
শনিবারের নির্দেশিকায় এমসের তরফে জানানো হয়েছিল, সোমবার রামমন্দির উদ্বোধনের দিন আধবেলা ছুটি থাকবে। দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত কেবল আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা বাদ দিয়ে বন্ধ থাকবে হাসপাতালের সমস্ত বিভাগ।
রবিবার নতুন একটি নির্দেশিকা দিয়ে জানানো হল, সোমবার মন্দির উদ্বোধনের দিন হাসপাতালের আউটডোর বা বহির্বিভাগ অন্য দিনের মতোই চালু থাকবে। অর্থাৎ, আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করানো রোগীরা ওই দিন হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। হাসপাতালের সমস্ত বিভাগীয় প্রধানকে নয়া এই নির্দেশিকা তাঁদের অধস্তনদের জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘রোগীদের যত্নের কথা মাথায় রেখে এবং তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে কথা স্মরণে রেখে আউটডোর বিভাগ খোলা থাকবে।”
শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘‘২২ জানুয়ারি, সোমবার অযোধ্যায় রামালালার বিগ্রহের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ উদ্যাপন হবে গোটা দেশে। সেই উপলক্ষে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে ছুটি ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। এমসের সকল কর্মীদের জ্ঞাতার্থে জানানো হচ্ছে, ২২ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এই প্রতিষ্ঠান। সমস্ত কেন্দ্রের প্রধান, বিভাগীয় প্রধান, শাখা দফতরগুলিকে কর্মীদের বিষয়টি জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’’
তবে বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও জানানো হয়েছিল যে, হাসপাতালে আপৎকালীন পরিষেবা চালু থাকবে। সেখানে বলা হয়, ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাস দিল্লি এমসে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সে কারণে সমস্ত আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা চালু থাকছে।
শনিবারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধী দলগুলি-সহ চিকিৎসকদের একাংশ এর সমালোচনায় সরব হন। ওই বিজ্ঞপ্তির পর রাজনৈতিক তরজার পাশাপাশি সমাজমাধ্যমের আলোচনায় উঠে এসেছিল কোভিড পরিস্থিতির কথাও। নেটাগরিকদের একাংশ স্মরণ করিয়ে দেন যে, অতিমারি চলার সময়ে মন্দির বা ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতাল খোলা ছিল।
কিন্ত এখন একটি মন্দির উদ্বোধনের জন্য কেন হাসপাতাল বন্ধ রাখা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। তা ছাড়া জরুরি পরিষেবা এ ভাবে বন্ধ রাখা যায় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিতর্কের আবহেই আগের বিজ্ঞপ্তির মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে নয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমস কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, সোমবার হাসপাতালের আউটডোরে ‘ছুটি’ থাকছে না।
এর আগে সারা দেশের কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে রামলালার বিগ্রহের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র দিন অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখার জন্যই সেই ছুটি বলে জানা গিয়েছে। একই পথে হেঁটেছে বিজেপিশাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যও।
মহারাষ্ট্র, রাজস্থানে সে দিন সমস্ত সরকারি দফতরে অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দুপুর ২টো পর্যন্ত সরকারি দফতরে বন্ধ থাকবে কাজকর্ম। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ওই দিন রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছেন।
উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র দিন মদের দোকানও বন্ধ থাকবে। উত্তরাখণ্ড, ছত্তীসগঢ়, অসম, হরিয়ানাতেও ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র দিন মদের দোকান বন্ধ থাকছে। গোয়ায় সমস্ত স্কুল এবং সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতেও ওই দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সেখানে সব সরকারি দফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সে দিন ছুটি থাকবে। সিকিমেও বন্ধ থাকবে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ দফতর, স্কুল, কলেজ। সোমবার দিল্লি সরকারের অধীনস্থ সমস্ত দফতরেও দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত ছুটি থাকবে।
রামমন্দির উদ্বোধনের দিন ছুটি ঘোষণার ক্ষেত্রে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির পথেই হাঁটল কংগ্রেসশাসিত হিমাচল প্রদেশ। রবিবার একটি বিবৃতি দিয়ে হিমাচলের মুখ্যসচিবের তরফে জানানো হয়, “অযোধ্যায় রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ উপলক্ষে পূর্ণদিবস ছুটি ঘোষণা করছে হিমাচল প্রদেশ সরকার।”
সরকার ছুটি ঘোষণার ফলে আগামী সোমবার হিমাচলের সমস্ত সরকারি এবং সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছুটি ঘোষণার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের যে বিশেষ অধিকার রয়েছে, তারও প্রয়োগ করেছে হিমাচল সরকার। ফলে বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এবং চুক্তিভিত্তিক কাজ করা কর্মীরাও এই ছুটির আওতায় আসবেন।
প্রসঙ্গত, হিমাচলই প্রথম কংগ্রেসশাসিত কোনও রাজ্য, যেখানে রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিন ছুটি ঘোষণা করা হল। অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে কেবল ওড়িশা সোমবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেছিল।
হিমাচলের রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাজীব বিন্দল শুক্রবারই হিমাচল সরকারকে ছুটি ঘোষণা করার আর্জি জানিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গেও ছুটির আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যদিও সেই চিঠি এখনও মঞ্জুর হয়নি। বরং সোমবার সংহতি মিছিলের ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কর্মসূচিতে তিনি পুজো দেবেন কালীঘাটের মন্দিরে, চাদর চড়াবেন মসজিদে, প্রার্থনা করবেন গির্জায়।