২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে সীমান্ত বিবাদের পর থেকেই ভারত-চিন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সীমান্ত বিবাদের আঁচ থিতু হলেও দু’দেশের সম্পর্কের শৈত্য এখনও কাটেনি। এই আবহে দিল্লি থেকে এক চিনা মহিলাকে গ্রেফতার করা হল। সন্দেহ, ওই মহিলা নাকি গুপ্তচরবৃত্তি করতেন!
তাঁর পরনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মতো পোশাক। মাথায় চুল ছোট করে কাটা। দেখে মনে হবে যেন সন্ন্যাসিনী। কিন্তু আদতে সাধু সেজে চরবৃত্তি করতেন ওই চিনা মহিলা। এমন সন্দেহই করছেন তদন্তকারীরা।
উত্তর দিল্লির মজনু কা টিলা এলাকায় তিব্বতিদের শরণার্থী শিবির থেকে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
ধৃত মহিলার পরিচয়পত্র ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁর নাম দোলমা লামা।
নিজেকে নেপালের নাগরিক বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা। তিনি জানিয়েছেন, কাঠমান্ডুতে বাড়ি তাঁর।
পুলিশ সূত্রে খবর, মহিলা মিথ্যা দাবি করেছেন। তাঁর পরিচয়পত্র ভুয়ো। আদতে তাঁর আসল নাম কাই রুয়ো।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মজনু কা টিলা এলাকায় তিব্বতিদের উদ্বাস্তু কলোনি রয়েছে। ওই এলাকায় ভিড় জমান পর্যটকরাও। ওই এলাকাতেই সম্প্রতি থাকতে শুরু করেন ওই মহিলা। এমনটাই দাবি পুলিশের।
পুলিশের অনুমান, বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর ছদ্মবেশ ধারণ করে ওই এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন চিনা মহিলা। তাঁকে দেখে যাতে কারও সন্দেহ না হয়, সে কারণেই সাধুদের মতো পোশাক পরেছিলেন। এমনকি, মাথার চুলও কেটেছেন।
‘ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’ (এফআরআরও) সূত্রে দাবি করা হয়েছে, চিনা পাসপোর্ট নিয়ে ২০১৯ সালে ভারতে এসেছিলেন কাই রুয়ো।
তার পর নেপালি সন্ন্যাসিনী পরিচয় ভাঁড়িয়ে উত্তর দিল্লিতে থাকা শুরু করেন ওই মহিলা।
ওই চিনা নাগরিককে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, তিনটি ভাষা জানেন ওই মহিলা। ইংরাজি, নেপালি ও ম্যান্ডারিন ভাষা জানেন তিনি।
ভারতে কি চরবৃত্তির জন্যই এসেছিলেন ওই মহিলা? কেনই বা সাধু সেজে নিজেকে নেপালের বাসিন্দা বলে দাবি করলেন তিনি? ঠিক কী উদ্দেশ্যে? এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল।
গত ১৭ অক্টোবর ওই মহিলার নামে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৭ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যে সময় চিনের এই মহিলাকে গ্রেফতার করা হল দিল্লিতে, তা উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে গালওয়ান সংঘর্ষের কিছু অংশের ভিডিয়ো ক্লিপ দেখানো হয়।
নিজেদের শক্তি সম্পর্কে জাহির করতেই এই ভিডিয়ো শি জিনপিং তুলে ধরেন বলে মনে করা হচ্ছে। যার জেরে নয়াদিল্লির সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। এই প্রেক্ষাপটে সাধুর বেশে ভারতে চিনা মহিলার বিরুদ্ধে চরবৃত্তির যে অভিযোগ উঠল, তাতে এই পর্বে নয়া মাত্রা যোগ করল।