বিনা টিকিটের ট্রেনযাত্রীর কথা তো হামেশাই শোনা যায়। তবে টিকিট কেটেও কেউ যদি বিমানে না চড়েন? এমনটা তো হতেই পারে। নিত্য দিন নানা কারণে বিমানযাত্রা পিছিয়ে দেন বহু যাত্রী। তবে কেউ যদি বিমানবন্দরের লাউঞ্জের বিনামূল্যের খাবার খাওয়ার জন্যই বিমানের টিকিট কাটেন?
হ্যাঁ! প্রায় ৯ বছর আগে চিনের এক যাত্রী তেমনই করেছিলেন। প্রথম শ্রেণির টিকিট কেটেও বিমানে চড়েননি তিনি। বরং বছরভর ওই একটি টিকিট দেখিয়েই বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের ‘ফ্রি মিল’ দিয়ে পেটপুজো করে গিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার ‘কেওং ওয়া ইট পোহ’ নামে একটি চিনা সংবাদপত্রের দাবি, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে চিনের জিয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তেমনই ঘটেছিল।
শানজি প্রদেশের ওই বিমানবন্দর থেকে ইস্টার্ন চায়না এয়ারলাইন্সের একটি উড়ানের টিকিট কেটেছিলেন চিনের এক পুরুষ যাত্রী। জানিয়েছিলেন, বিদেশযাত্রার জন্য একটি টিকিট চাই তাঁর। তবে তাঁর নাকি ‘অন্য পরিকল্পনা’ ছিল।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিমানে না চড়লে ওই টিকিটের পুরো অর্থমূল্য ফেরত পাবেন, এমন একটি টিকিট কেটেছিলেন চিনা যাত্রীটি।
পকেটে প্রথম শ্রেণির টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকলেও সেখানকার ভিআইপি লাউঞ্জ ছেড়ে নাকি তিনি নড়েননি। ওই টিকিটটি দেখিয়ে সেখানে বসে খাওয়াদাওয়া সেরেছেন।
প্রথম বার এমন করার পর নিজের যাত্রা পিছোনোর জন্য বিমান সংস্থাকে অনুরোধ করেন ওই যাত্রী। পরের দিন আবার ওই বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে টিকিটটি নিয়ে ঢোকেন। সে বারও একই কীর্তি করেছিলেন।
বিমানবন্দরের নিয়মানুযায়ী, উড়ানের টিকিটধারীরা লাউঞ্জে ঢুকে অপেক্ষা করার সময় সেখানকার ‘ফ্রি মিল’ খেতে পারেন। এ ছাড়া, খারাপ আবহাওয়া, প্রযুক্তিগত সমস্যা বা অন্য কোনও কারণে উড়ানে অস্বাভাবিক দেরি হলেও যাত্রীদের ‘ফ্রি মিল’ দেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই শর্তেরই ফায়দা লুটেছিলেন চিনা যাত্রীটি। তবে এক-দু’বার নয়, গোটা বছর ধরেই এমন করে গিয়েছেন তিনি।
প্রতি বার উড়ানের টিকিট হাতে বিমানবন্দরে ঢুকে ভিআইপি লাউঞ্জে বসেন। এবং বিনামূল্যে খাবারদাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে যান। এর পর ওই উড়ানে নিজের যাত্রা পিছিয়ে দেন। পরের দিন আবার একই কাজ করেন।
এ ভাবেই কাটছিল। তবে এক দিন বিমানবন্দর আধিকারিকদের নজরে পড়ে যায় বিষয়টি। যদিও তাঁদের হাত-পা বাঁধা। ওই যাত্রীটি তো আর বিমানবন্দরের কোনও নিয়ম ভাঙেননি। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব ছিল না তাঁদের।
বিমান সংস্থাটির এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, টিকিট দেখিয়ে বছরভর বিনামূল্যে খাওয়ার এ হেন কীর্তি ‘অতি বিরল’।
ইস্টার্ন চায়না এয়ারলাইন্সের তরফে জানানো হয়েছিল, বছরখানেক ধরে ৩০০ বারেরও বেশি বার নিজের যাত্রা পিছিয়ে দিয়েছিলেন ওই যাত্রী। এবং প্রতি বারই ওই একটি টিকিট দেখিয়ে লাউঞ্জের খাবার সাবড়ে দিয়েছেন।
আইন যা-ই হোক না কেন, অবশেষে ওই যাত্রীর মুখোমুখি হয়েছিলেন বিমান সংস্থার আধিকারিকেরা। যার জেরে নিত্য দিনের এই ‘প্রতারণা’ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
লাউঞ্জের ‘ফ্রি মিল’ বন্ধ হওয়ার পর ওই উড়ানের টিকিট বাতিল করেছিলেন যাত্রীটি। এ বারও বিমান সংস্থাটিকে ঘোল খাইয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, টিকিট বাতিল করায় যাত্রীকে তাঁর পুরো টাকাই ফেরত দিতে বাধ্য বিমান সংস্থা। ফলে তা-ই করেছিল ইস্টার্ন চায়না এয়ারলাইন্স।
বছরখানেক ধরে এক যাত্রীর পাল্লায় পড়ে বোকা বনে গেলেও সংবাদমাধ্যমের কাছে নিশ্চুপ ছিলেন বিমান সংস্থার আধিকারিকেরা। যদিও দুনিয়ার তাবড় সংবাদমাধ্যমে এই ‘কীর্তি’ জায়গা করে নিয়েছিল।