ভারত এবং আমেরিকা বিরোধী প্রচার এবং মিথ্যা ‘খবর’ ছড়ানোর জন্য সমাজমাধ্যমে বহু ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছে চিন। নয়াদিল্লি নয়, চলতি সপ্তাহে এমন অভিযোগ করেছে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের পরিচালন সংস্থা ‘মেটা’।
‘মেটা’র ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ভারত সম্পর্কে জাল খবর ছড়ানোয় চিন থেকে খোলা এমনই ভুয়ো ফেসবুক আকাউন্ট সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে, চিন থেকে পরিচালিত এমন ৪,৭০০টি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিন থেকে পরিচালিত সংশ্লিষ্ট ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিচালন সংস্থা ‘মেটা’। পাশাপাশি, ‘ভারত বিরোধী’ কয়েকটি ফেসবুক পেজ এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘মেটা’ কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘চিনা অ্যাকাউন্ট’ হিসাবে নয়, ‘ভারত এবং আমেরিকা’র অ্যাকাউন্টের ‘ছদ্মবেশে’ ভারত বিদ্বেষী প্রচার চালানো হত ওই ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলি থেকে।
শুধু ভারত নয়, আমেরিকা সম্পর্কেও ওই ভুয়ো অ্যাকাউন্টগুলি থেকে ধারাবাহিক ভাবে অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে বলে ‘মেটা’র ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটানো।
অতীতে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়া থেকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ‘প্রভাব’ বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ মিলেছিল। ‘মেটা’র দাবি, রাশিয়া এবং ইরানের পরে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে মিথ্যা প্রচারের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে চিন।
বিশ্ব জুড়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বৈধ অ্যাকাউন্টগুলি থেকে বিধি ভেঙে বিভিন্ন ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে চিনা ভুয়ো অ্যাকাউন্টগুলি সেগুলি মিথ্যা প্রচারের কাজে ব্যবহার করছে।
এমনকি ‘মেটা’র ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা বিভিন্ন ছবি ও লেখাও দেদার হাতিয়ে নিচ্ছে চিনারা। তার পর মিথ্যা প্রচারের পোস্ট নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
চিনা অ্যাকাউন্টগুলিতে আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট এবং রিপালিকান নেতার বিবৃতি নিয়মিত স্থান পাচ্ছে বলে জানিয়েছে ‘মেটা’। ন্যান্সি পেলোসি, গ্রেচেন হুইটমার, রন ডিস্যান্টিস, ম্যাট গেট্জ, জিম জর্ডনের মতো ব্যক্তিত্ব রয়েছেন এই তালিকায়।
আমেরিকার নাগরিকদের ‘বিভ্রান্ত’ করার পরিকল্পনা থেকে এমনটা করা হতে পারে বলে সন্দেহ ফেসবুকের পরিচালন সংস্থার। তবে কোনও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতবাদ ছড়ানোর কোনও ‘ছাপ’ এখনও দেখা যায়নি চিনা অ্যাকাউন্টগুলির পোস্ট থেকে।
ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারের জন্য একটি বড় চিনা নেটওয়ার্কের পাশাপাশি দু’টি ছোট নেটওয়ার্কও চিহ্নিত করেছে ‘মেটা’। তার একটি মূলত ভারত এবং তিব্বত সংক্রান্ত প্রচারকেন্দ্রিক। অন্যটি, মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পক্ষে প্রচার চালায়।
২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরিচয় ভাঁড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে তথ্য হাতানোর অভিযোগ উঠেছিল রাশিয়ার একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে। এর পরেই সে দেশের ফেডেরাল আদালতের হস্তক্ষেপে এ বিষয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়।
ইউক্রেন সংঘাত পর্বেও ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে সমাজমাধ্যমে কিভ-বিরোধী প্রচার চালিয়ে আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলির নাগরিকদের মধ্যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা হয়েছিল বলে ‘মেটা’র অভিযোগ।
২০১৪ সালে ভারতে লোকসভা ভোট। আগামী বছর আমেরিকাতেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। ‘মেটা’র ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে সতর্কবার্তা— ভুয়ো চিনা অ্যাকাউন্টগুলি থেকে দু’দেশের নির্বাচনকে নিশানা করে মিথ্যা প্রচার চালানো হতে পারে।
পাকিস্তান থেকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ফেসবুকে ভারত বিরোধী প্রচার চালানোর অভিযোগে ২০২০ সালে সক্রিয় হয়েছিল ‘মেটা’। দ্রুত সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে পেজগুলি চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করেছিল তারা।
সে সময় ৪৫৩টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি। ১০৩টি ফেসবুক পেজ, ৭৮টি ফেসবুক গ্রুপ এবং ১০৭টি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও বাতিল করেছিল ফেসবুক পরিচালন সংস্থাটি।