সৌন্দর্য চেহারায় নয়, মনে। সৌন্দর্য যিনি দেখবেন, তাঁর চোখে। এ রকমই বহু প্রবাদ রয়েছে। প্রবাদ থাকলেও তা মেনে চলে ক’জন? চিনের ওই ব্যক্তি এই সব প্রবাদ মানতে পারেননি। তাই ‘অসুন্দর’ বলে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছেন। আদালতও তার পক্ষেই রায় দিয়েছে। উল্টে ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন তিনি।
ওই ব্যক্তি উত্তর চিনের বাসিন্দা। নাম জিয়াং ফেং। স্ত্রী ‘কুৎসিত’ অভিযোগ জানিয়ে বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন। আদালত তাঁর আবেদন মেনেও নিয়েছিল।
আদালতের নির্দেশে ৭৫ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন জিয়াং। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা। কেন এই টাকা পেয়েছিলেন জিয়াং? তার নেপথ্যে রয়েছে বড় কারণ।
ফেং জানিয়েছেন, বিয়ের পর নাকি সব ঠিকঠাকই ছিল। সুখেই কাটছিল দাম্পত্য জীবন। সমস্যা শুরু হয় মেয়ে হওয়ার পর।
ফেং একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মেয়ে জন্মানোর পর তিনি চমকে গিয়েছিলেন। এত ‘কুৎসিত’ কী করে হল, সেই নিয়ে নাকি তাঁর মনে ধন্দ তৈরি হয়েছিল। ফেংয়ের দাবি, শিশুকন্যা তার বাবা বা মা কারও মতোই দেখতে ছিল না। তাতে সন্দেহ হয় তাঁর।
ফেং এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, নিজের স্ত্রীর দিকে আঙুল তোলেন। তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযোগ করেছিলেন। ফেংয়ের ধারণা হয়, অন্য কোনও ‘কুৎসিত’ পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর স্ত্রীর। সেই পুরুষের সন্তানই ধারণ করেছিলেন তিনি।
এর পর ফেং সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করান। তাতে দেখা যায়, তিনিই শিশুটির বাবা। আর তাঁর স্ত্রীই শিশুটির মা। তার পরেই ফেংয়ের মাথায় প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করে। তিনি চেপে ধরেন স্ত্রীকে।
ফেংয়ের অভিযোগের সামনে পড়ে সত্যিটা প্রকাশ করেন তাঁর স্ত্রী। জানান, তাঁদের মেয়ে আসলে তাঁর মতোই দেখতে। বিয়ের আগে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই চেহারা বদলে যায়।
ফেংয়ের স্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৬২ হাজার পাউন্ড খরচ করে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬২ লক্ষ টাকা।
ফেংয়ের স্ত্রী এও জানিয়েছিলেন যে, তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই ওই অস্ত্রোপচার তিনি করিয়েছিলেন। যদিও ফেংকে এ বিষয়ে কিছুই জানাননি তিনি। তাঁর পরিবারও চেপে গিয়েছিল। এতেই চটেছিলেন ফেং।
আদালতে ফেং অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রতারণা করে বিয়ে করেছিলেন তাঁর স্ত্রী। মিথ্যার জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিলেন। পরে মেয়ে হওয়ার পর সব ফাঁস হয়ে যায়।
বিচারক ফেংয়ের অভিযোগ মেনে নেন। জানান, তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর জীবন নষ্ট করেছিলেন।
বিচারক এই রায় দিয়ে জানিয়েছিলেন, ফেংয়ের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। সে কারণে তাঁর স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। ফেংকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী।
চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, জাপানে তরুণ, তরুণীদের মধ্যে প্লাস্টিক সার্জারির প্রবণতা খুব বেশি। একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে এই অস্ত্রোপচারের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে এক সুন্দর দম্পতি এবং তাঁদের তিন অসুন্দর সন্তানের ছবি ছিল। নীচে লেখা, ‘‘প্লাস্টিক সার্জারির পর একটি বিষয় নিয়েই আপনাদের একটু ভাবতে হবে। যখন নিজেদের সন্তানদের সামনে সত্যিটা প্রকাশ করতে হবে।’’