২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ ন’মাসে মোট ৫৮ হাজার যাত্রিবাহী বৈদ্যুতিক গা়ড়ি বিক্রি করেছে ভারত। অন্য দিকে, ভারতের প্রতিবেশী দেশে এর পাঁচ গুণ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে তিন গুণ কম সময়ে!
অবাক লাগলেও বিষয়টি সত্যি। আরও চমকে দেওয়ার মতো বিষয়টি হল, চিনের মাত্র একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা সংস্থা থেকেই এই গাড়িগুলি বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, গাড়ি শিল্পে আমূল বদল আনতে ইতিমধ্যেই ভারতের থেকে এক কাঠি এগিয়ে রয়েছে চিন।
চিনের অন্তত ১০০টি সংস্থা বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে এবং বিক্রি করে। তবে ভারত বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে এখনও পাকা খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারেনি। এই মুহূর্তে দেশের ১০-১২টি সংস্থা যাত্রিবাহী বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনের জনগণের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। অন্য দিকে, ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এখনও সেই ভাবে গতি পায়নি।
বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা পূরণের দিক দিয়ে এখন ইউরোপের ঘাড়েও নিশ্বাস ফেলছে চিন। ইউরোপের দামি বৈদ্যুতিক গাড়ির থেকে তুলনামূলক ভাবে সস্তা চিনা বৈদ্যুতিক গাড়ি দেদার বিকোচ্ছে বিশ্ববাজারে। চিনা যন্ত্রাংশের দাম কম হওয়ায় এবং নিজেদের দেশে উৎপাদন হওয়ায় গাড়ির দাম কম রাখতে পারে চিন।
ইউরোপের বৈদ্যুতিক গাড়ি যে যে দেশগুলিতে বিক্রি হত, তারও কয়েকটি দেশে ঢুকে পড়েছে চিন। বর্তমানে, চিনা গাড়ির বড় বাজার রয়েছে রাশিয়া, মেক্সিকো এবং বেলজিয়ামে।
তবে ভারতেও ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার তৈরি হচ্ছে। যদিও তা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই চিনের বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজারকেও পাখির চোখ করে রেখেছে। বিনিয়োগ করা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা।
‘ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (এফএডিএ)’ এবং ‘কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ’ নামে একটি গবেষণা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৮ হাজার যাত্রিবাহী বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করেছে৷
অন্য দিকে চিনের সব থেকে বড় বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘বিওয়াইডি’ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত চিনের মধ্যেই তিন লক্ষের বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে।
তবে চিনের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এই কয়েক মাসে আগের থেকে একটু কমেছে। তাই এ বার ইউরোপ এবং এশিয়ার অন্য দেশের বাজারে আরও শক্ত ঘাঁটি বানাতে চাইছে চিনা বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি।
চিনের বৈদ্যুতিক যাত্রিবাহী গাড়ির রফতানি এক বছরে ২৫০ শতাংশ বেড়েছে। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী কোভিডের পর বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
এফএডিএ-র তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ৪,২১৭টি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করেছে টাটা গোষ্ঠী। তারাই বর্তমানে ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
এর পরেই রয়েছে এমজি মোটর ইন্ডিয়া। ভারতীয়দের মধ্যে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে মাহিন্দ্রা এবং হুন্ডাইয়ের মতো সংস্থাও ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির দিকে মন দিয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির চলাচল ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছে ভারত সরকার। লক্ষ্যপূরণের জন্য, বৈদ্যুতিক যানের যন্ত্রাংশের উত্পাদন বৃদ্ধি বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্পও চালু করা হয়েছে৷
বিওয়াইডি-র মতো চিনা সংস্থাগুলিও এ বার পাকাপাকি ভাবে ভারতে নিজেদের সংস্থা শুরু করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিওয়াইডি ভারতে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
নিজেদের পুরনো বাজার ফিরে পেতে উঠে পড়ে লেগেছে ইউরোপও। তবে মজার বিষয় হল, ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করছে চিনের বিওয়াইডি।
বিভিন্ন দেশের বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করলেও চাহিদা কমেনি টেসলার। তবে টেসলায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ায় এই গাড়ির দামও অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ির তুলনায় বেশি। তবে টেসলার নিজস্ব গ্রাহক শ্রেণি রয়েছে। তাই বাকি সংস্থার উত্থান-পতন নিয়ে ইলন মাস্কের সংস্থা মাথা ঘামাচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞেরা।