Chinese Warships

আঁচড় কাটতে পারবে না মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র! রণতরী থেকে ‘কিল ওয়েব’ ঝড় তুলে তছনছের হুমকি চিনের

তাইওয়ান আক্রমণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মার্কিন প্রত্যাঘাত সামলাতে প্রস্তুত হচ্ছে চিন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত আটটি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ একটি রণতরীর সাহায্যে মোকাবিলার প্রযুক্তি তৈরি করা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৩
Share:
০১ ২০

একটা রণতরীতেই কেল্লাফতে। ভীমদর্শন সেই যুদ্ধজাহাজ আটকে দেবে আট-আটটি মার্কিন রণতরী! প্রশান্ত মহাসাগরে নৌমহড়া শেষে এ বার তেমনটাই দাবি করল চিন। শুধু তা-ই নয়, জলযুদ্ধের মানববিহীন নতুন প্রযুক্তি প্রকাশ্যে এনে গোটা দুনিয়াকে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। এ সব দেখে ভুরু কুঁচকেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনও।

০২ ২০

দীর্ঘ দিন ধরেই তাইওয়ান দখলের ছক কষছেন চিনা প্রেসিডেন্ট তথা চেয়ারম্যান শি জিনপিং। প্রশান্ত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে বেজিং। আমেরিকার গোয়েন্দাদের অবশ্য দাবি, তাইওয়ান আক্রমণে ড্রাগনভূমির ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএর সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গা হল সেখানকার ড্রোনবাহিনী। যুদ্ধের সময়ে যাদের সামনে সারিতে রেখে চিনা লালফৌজের বড়সড় লোকসান করার ক্ষমতা রয়েছে সেখানকার সেনা কম্যান্ডারদের।

Advertisement
০৩ ২০

তবে, পিএলএ নৌসেনার বিরাট বাহিনীর সঙ্গে লম্বা সময় ধরে যুদ্ধে এঁটে ওঠা তাইওয়ানের পক্ষে সম্ভব নয়। আর তাই ‘সময় চুরি’র কথা মাথায় রেখে রণক্ষেত্রে নামবেন সেখানকার জেনারেলরা। ড্রোন হামলার মাধ্যমে লালফৌজের যুদ্ধজাহাজ বা হাতিয়ার ও গোলা-বারুদের ডিপো ওড়াতে পারলেই কিছু দিনের জন্য আক্রমণের ঝাঁজ কমাতে বাধ্য হবে চিন। এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রকে ডেকে এনে পরিস্থিতি মজবুত করতে পারবেন তাঁরা, মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।

০৪ ২০

বিশ্লেষকদের দাবি, চিন-তাইওয়ান যুদ্ধ বাধলে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিকে রক্ষা করতে সেখানে সেনাঘাঁটি তৈরি করবে আমেরিকা। এর পর সেখান থেকেই ড্রাগনভূমির উপর প্রত্যাঘাত শানাবে যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজ। আর সেটা মাথায় রেখেই আগ্রাসনের নীল নকশা তৈরি করছেন প্রেসিডেন্ট শি।

০৫ ২০

দ্য ইউরেশিয়ান টাইম্‌সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন চিনা প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, অত্যাধুনিক ০৫৫ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরীর সাহায্যে প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌসেনাকে মাত দিতে পারবে পিএলএ জলযোদ্ধারা। এই চিনা যুদ্ধজাহাজগুলিতে রয়েছে মানববিহীন প্রযুক্তি, যার পোশাকি নাম ‘কিল ওয়েব’।

০৬ ২০

চলতি বছরের গোড়ায় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে বিশাল মহড়ার আয়োজন করে চিনা নৌসেনা। সেখানেই অত্যাধুনিক ০৫৫ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরী নামিয়েছিল বেজিং। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধজাহাজে মানববিহীন প্রযুক্তির পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় ড্রাগনভূমির জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা ‘চায়না শিপ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজ়াইন সেন্টার’ বা সিএসডিডিসি। এ ছাড়া হুয়াজং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের দেখা গিয়েছে সেখানে।

০৭ ২০

চিনা সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, ওই মহড়ায় মার্কিন আর্লে বার্ক ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজগুলিকে কী ভাবে প্রতিহত এবং ডোবানো যাবে, তার অভ্যাস চালিয়েছেন পিএলএর জলযোদ্ধারা। বেজিঙের ০৫৫ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরীটির সঙ্গে ছিল মানববিহীন দু’টি মাদারশিপ। এ ছাড়াও মহড়ায় ৩২টি ড্রোন এবং ১৪টি মানববিহীন নৌকা ব্যবহার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

০৮ ২০

মহড়ায় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে ঠিক যে ভাবে টমাহক এবং এলআরএএসএম স্টিলথ জাহাজ প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, ঠিক সেই ভাবে আক্রমণ শানানো হয়েছিল। চিনা প্রতিরক্ষা গবেষকদের দাবি, মানববিহীন ‘কিল ওয়েব’ প্রযুক্তি প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রকেই চিহ্নিত করে মাঝ আকাশে ধ্বংস করেছে। ০৫৫ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরীটির সঙ্গে তাল রেখে কাজ করতে পেরেছে সেটি।

০৯ ২০

সূত্রের খবর, এই মহড়ায় মোট ৩২টি টমাহক এবং এলআরএএসএম স্টিলথ অ্যান্টি শিপ ক্ষেপণাস্ত্র দেগেছিল পিএলএ নৌসেনা। এগুলির এক একটির মূল্য ৩০ লক্ষ ডলারের বেশি। এই যুদ্ধাভ্যাসে বেজিঙের যুদ্ধজাহাজটির গায়ে আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি। পাশাপাশি, চালকবিহীন নৌকাগুলিতে প্রত্যাঘাতের জন্য যথেষ্ট গোলাবারুদ মজুত ছিল, জানিয়েছে একাধিক চিনা গণমাধ্যম।

১০ ২০

দ্য ইউরেশিয়ান টাইম্‌সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেজিঙের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা বলেছেন, ‘‘কিল ওয়েব প্রযুক্তি আমাদের যুদ্ধজাহাজগুলিকে শত্রুর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলেছে। এখন একসঙ্গে অন্তত আটটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরীকে সহজেই ডোবাতে পারবে পিএলএ নৌসেনা। এ ছাড়া যুদ্ধজাহাজের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকানোর ক্ষমতাও রয়েছে আমাদের।’’

১১ ২০

বিশ্লেষকদের দাবি, মার্কিন হাতিয়ার মোকাবিলায় একটি সহজ রাস্তা খুঁজে বার করেছে চিন। সস্তা দরে বিপুল সংখ্যায় হামলাকারী ড্রোন তৈরি করছে ড্রাগন। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) মাধ্যমে সেগুলিকে ঠেকাতে মোটা অঙ্কের খরচের মুখে পড়তে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। বেজিঙের ড্রোন ফৌজ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সামরিক স্থিতিশীলতায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে বলে স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।

১২ ২০

চিনা প্রতিরক্ষা গবেষক ইউ মিংহুই জানিয়েছেন, মানববিহীন প্রযুক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে এতে কৃত্রিম মেধাকে (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘মানববিহীন ছোট নৌকাগুলিকে আমরা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তুলছি। উপকূলে বসেই সেগুলি থেকে আক্রমণ শানাতে পারবেন পিএলএর নৌকম্যান্ডাররা।’’

১৩ ২০

সূত্রের খবর, মার্কিন রণতরী থেকে ছোড়া ৩২টি ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করতে চিনের খরচ হবে ২ কোটি ২০ লক্ষ থেকে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার। আমেরিকার থাড ও প্যাট্রিয়টের মতো ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র চেয়ে টাকার অঙ্কে যা অনেকটাই কম। ‘কিল ওয়েব’ প্রযুক্তির সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহ, মানববিহীন উড়ুক্কু যান এমনকি শত্রুর ডুবোজাহাজ পর্যন্ত শনাক্ত করা যাবে বলে দাবি করেছেন চিনা প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

১৪ ২০

পিএলএ নৌসেনার সবচেয়ে শক্তিশালী রণতরীগুলির অন্যতম হল ০৫৫ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ। এটি প্রকৃতপক্ষে রেনহাই ক্লাসের একটি ক্রুজ়ার। গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রে সংশ্লিষ্ট রণতরীটিকে সাজিয়েছে ড্রাগন ফৌজ। ২০১৪ সালে চিনের নানচাং প্রদেশে এর নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৭ সালে প্রথম বার জলে নামে ওই ডেস্ট্রয়ার। আর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে একে ব্যবহার করছেন জিনপিঙের জলযোদ্ধারা।

১৫ ২০

চিনের এই যুদ্ধজাহাজে রয়েছে ১১৪টি উল্লম্ব ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার। এর সাহায্যে এইচএইচকিউ-৯বি ভূমি থেকে আকাশ এবং ওয়াইজে-১৮ রণতরী ধ্বংসকারী ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারবে পিএলএ নৌসেনা। প্রথমটির পাল্লা ১০০ নটিক্যাল মাইল। আর দ্বিতীয়টি ২৯০ নটিক্যাল মাইল উড়ে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় হামলা করতে পারবে বলে জানা গিয়েছে।

১৬ ২০

বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই চিনা বিমানবাহী যুদ্ধপোতের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে ০৫৫ শ্রেণির ডেস্ট্রয়ারকে। ২০২২ সালে রুশ নৌসেনার সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেন বেজিঙের জলযোদ্ধারা। সেখানেও ক্ষমতা দেখিয়েছিল ০৫৫ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির ওই ড্রাগন রণতরী।

১৭ ২০

অন্য দিকে চুপ করে বসে নেই আমেরিকাও। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সর্বক্ষেত্রে আক্রমণের নতুন প্রযুক্তি বসানোর কাজ শুরু করেছে মার্কিন নৌসেনা। চলতি বছরের গোড়ায় এই কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজি কম্যান্ডার ক্যাপ্টেন অ্যালেক্স ক্যাম্পবেল।

১৮ ২০

বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম নৌবহর রয়েছে চিনের হাতে। বিশ্বের প্রথম ড্রোনবাহী রণতরী তৈরিতেও বিপুল খরচ করছে ড্রাগন সরকার। সেখানকার প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের দাবি, পরমাণু শক্তিচালিত আমেরিকার ‘স্টেলথ’ প্রযুক্তির ডুবোজাহাজকে চিহ্নিত করার প্রযুক্তিও বানিয়ে ফেলেছে চিন।

১৯ ২০

অন্য দিকে দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবহরের মালিক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের কাছে রয়েছে ১১টি বিমানবাহী রণতরী। এ ছাড়া দেশের বাইরে অসংখ্য সেনাঘাঁটি রয়েছে আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’-এর। এর মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার হাওয়াই, জাপান এবং ফিলিপিন্সের ছাউনিগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

২০ ২০

চিনের একের পর এক সামরিক প্রযুক্তির বিষয়ে দাবি করলেও ফৌজ শক্তিতে আমেরিকাকেই এগিয়ে রেখেছেন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। কারণ, লম্বা সময় ধরে কোনও যুদ্ধের ময়দানেই দেখা যায়নি পিএলএকে। অন্য দিকে রণক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জামের। ফলে বেজিঙের প্রযুক্তিগুলি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement