এশিয়ার প্রান্তরে নতুন কোনও বিপদের গন্ধ পাচ্ছে চিন? আমেরিকাকেই কি সে ক্ষেত্রে তারা ‘ভিলেন’ মনে করছে? পশ্চিম থেকে বিপদ আসতে পারে এশিয়ায়, সম্প্রতি তেমনই সতর্কবার্তা জারি করেছে বেজিং।
চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই কিছু দিন আগে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই পশ্চিমি ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ার ফরেন পলিসি কমিউনিটি আয়োজিত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সম্মেলনে জিনপিং সরকারের তরফে গিয়েছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। এশিয়ার দেশগুলিকে সেখান থেকে সতর্ক করেছেন তিনি।
চিনের সতর্কবার্তা, ইউক্রেনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এশিয়ার দেশগুলিতেও। তাই এই মহাদেশের কোনও দেশ যাতে কিভের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি। তারা রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে একাধিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করে।
আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই কি ইউক্রেনের এই বিপদ ডেকে এনেছে? এশিয়ার দেশগুলিকে সতর্ক করতে গিয়ে কেন চিন ইউক্রেনের প্রসঙ্গ টেনে আনল? আমেরিকাকেই পরোক্ষে তারা নিশানা করতে চেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চিনের দাবি, বৃহৎ শক্তিগুলির লড়াইয়ে এশিয়ার বিভিন্ন ছোট দেশগুলিকে ‘ঘুঁটি’ হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে। এশিয়াতেই নাকি ‘দাবার বোড়ে’ খুঁজছে আমেরিকা।
ইন্দোনেশিয়ার সম্মেলনে দাঁড়িয়ে চিনের বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ইউক্রেনে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা সমগ্র মানব সভ্যতার জন্যই অশনিসঙ্কেত। এশিয়াতে যাতে তেমন কিছু না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এশিয়ায় আমাদের আলোচনা, কথোপথন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অঞ্চলগত ভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। কোনও মূল্যেই নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য দেশকে নাক গলাতে দেওয়া উচিত নয়।’’
চিনের বিদেশমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আড়ালে লুকিয়ে থাকা কালো হাতটিকে সকলের সামনে নিয়ে আসতেই হবে। খুলে দিতে হবে মুখোশ।’’ এ ক্ষেত্রে নাম না করে তিনি আমেরিকার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়াং জানিয়েছেন, চিন সর্বদা আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মনে মনে ঠান্ডা লড়াই বন্ধ করা উচিত। যে কোনও ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ থেকে এশিয়াকে দূরে রাখতে হবে।’’
বড় বড় শক্তির ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হলে হবে না। বার বার এ কথা উল্লেখ করে এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলিকে সতর্ক করেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে তাঁর এই আশঙ্কা প্রকাশকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
চিনের সঙ্গে আমেরিকার দ্বন্দ্বের কথা কারও অজানা নয়। তাইওয়ান থেকে শুরু করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান— নানা ইস্যুতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই দুই দেশের মধ্যে ‘ঠান্ডা লড়াই’ লেগেই থাকে।
চিনের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সমস্যায় আমেরিকা অযথা নাক গলায়। তাদের হস্তক্ষেপেই তাইওয়ানের বাড়বাড়ন্ত। সেখানে আমেরিকার মদত চিন মোটেই ভাল চোখে দেখে না।
দক্ষিণ এশিয়াকে চিনের ‘ঘরের মাঠ’ বলা যায়। সেখানকার দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার ‘সখ্য’ও চিনের জন্য খুব একটা স্বস্তির নয়। এ ক্ষেত্রে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠতাও চিনের চক্ষুশূল।
অন্য দিকে, আমেরিকারও চিনকে ঘিরে অনেক অভিযোগ রয়েছে। চিন তার সীমানার বাইরে সামরিক উত্তেজনায় উস্কানি দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ। এ ভাবে আসলে বেজিং আশপাশের অঞ্চলে নিজের আধিপত্য কায়েম করতে চায়।
জলপথে চিনের নীতিও আমেরিকার পক্ষে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ, পূর্ব এবং দক্ষিণ চিন সাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে চিন ঘাঁটি তৈরি করে সমুদ্রে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের আবহে চিন এবং আমেরিকার পারস্পরিক সম্পর্কের সমীকরণেও নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার বিরুদ্ধে এশিয়াকে সাবধান করল বেজিং।