দীপাবলি আগত। দিল্লি এবং দেশের অন্যান্য অংশ জুড়ে দীপাবলি ও সেই সম্পর্কিত প্রস্তুতি তুঙ্গে। সারা দেশ জুড়ে আলোর রোশনাই ও উৎসবের প্রাক্কালে ভাল ব্যবসার আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ীরাও।
দীপাবলির মরসুমে দেশব্যাপী প্রায় সওয়া চার লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসার আশা করছে কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স বা সিএআইটি। ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির আশা, সারা দেশের মধ্যে শুধুমাত্র দিল্লিই প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারে।
ই-কমার্স সংস্থা এবং চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দেওয়ার জন্য কোমর বেঁধে নামতে চলেছে দেশের বিভিন্ন অংশের খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
লোকাল সার্কল নামের একটি সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, এই উৎসবে ভারতীয়দের মধ্যে উপহার দেওয়ার প্রবণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, উৎসবের মরসুমে শহুরে নাগরিকেরা আনুমানিক ১.৮৫ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করতে পারেন।
সমীক্ষাটি প্রকাশ করেছে যে, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১.২ লক্ষ কোটি টাকা উৎসবের জন্য খরচ করে ফেলেছেন ভারতীয়েরা।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ৫৩ শতাংশ ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি, বেকারির পণ্য বা চকোলেট জাতীয় উপহার কিনতে পছন্দ করেন। ৪৮ শতাংশ মানুষ উপহার দেওয়ার জন্য শুকনো ফল বেছে নেন. ২৭ শতাংশ মানুষ সুগন্ধি, মোমবাতি এবং বাতি বেছে নেন। ১৮ শতাংশ জনতা রান্নাঘরের জিনিসপত্র কেনেন। ১২ শতাংশ ভারতীয় দীপাবলি উপলক্ষে বাড়ির জন্য আসবাব ও বাসনপত্র কিনতে পছন্দ করেন।
চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধির আশায় ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সামগ্রী যেমন উপহার, পোশাক, গয়না, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন, আসবাবপত্র, সাজসজ্জার জিনিসপত্র, পূজার সামগ্রী, রঙ্গোলি, দেবতার প্রতিমা ও ছবি, তৈরি পোশাক ইত্যাদি মজুত করা শুরু করেছেন।
কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের তথ্য অনুযায়ী গত বছর পৌনে চার লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা দেখেছিলেন তাঁরা। যা ২০২২-এর তুলনায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা বেশি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র দিল্লিতেই ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন ব্যবসায়ীরা। যা আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে আশা।
২০১৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ভারতে দীপাবলির ব্যবসার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে সিএআইটি জানিয়েছে, টানা চার বছরই ব্যবসা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। ২০১৭ সালে যা ছিল ৪৩ হাজার কোটি, ২০১৮ সালে তা ৫০ হাজার কোটিতে পৌঁছয়।
কোভিডের আগে ২০১৯ সালে দীপাবলির ব্যবসা ৬০ হাজার কোটি ছুঁয়েছিল। এমনকি কোভিডকালে ২০২০ সালে কড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও কেনাকাটার প্রবণতা বেড়েছিল। ২০১৯ সালের তুলনায় ১২ হাজার কোটি ব্যবসা বেড়ে ৭২ হাজার কোটি টাকায় এসে দাঁড়ায়।
উৎসবের মরসুমে পড়শি দেশ চিনের ব্যবসা কমেছে, এমন পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছে সিএআইটি। ফেডারেশনের সচিব প্রবীণ খান্ডেলওয়াল জানিয়েছেন, উৎসবের মরসুমে চিনা পণ্যের চাহিদা কমেছে। যার ফলে সে দেশের প্রায় এক লক্ষ কোটির ব্যবসা মার খেতে পারে বলে অনুমান করছেন প্রবীণ।
দুই দেশের ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপেড়েনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে চিনা পণ্য সরিয়ে ভারতীয় পণ্য কেনার ঝোঁক বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মন কি বাত’-এ দেশি পণ্য কেনার ডাক দেওয়ার পর সস্তার চিনা পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা, এমনটাই জানিয়েছে সিএআইটি।
২০২২-’২৩ সালে, চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিমুখী বাণিজ্য কমে ৯৫ হাজার আট কোটি ৪৭ লক্ষ ৯০ হাজার হয়েছে। ২০২১-২২ সালে যা ছিল প্রায় ৯৭ হাজার টাকা।