শি জিনপিংয়ের মাথায় কখন যে কী চলে, কোন জটিল অঙ্কে কখন যে তিনি শান দেন, তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। আচমকা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন বার বার।
সম্প্রতি জিনপিংয়ের তেমনই এক সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। যা পশ্চিমি বিশ্বকে রীতিমতো বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এক বিশেষ চুম্বকের জরুরি প্রযুক্তি রফতানি হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে চিন।
বিরল খনিজ উপাদানের (রেয়ার-আর্থ মেটেরিয়াল) আঁতুড়ঘর চিন। ওই খনিজ উপাদান শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে কাজে লাগে। এই বিশেষ খনিজ উপাদানের জন্য চিনের উপরে নির্ভরশীল বিশ্বের একটা বড় অংশ।
খনি থেকে পাওয়া ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ ধাতুকে বলা হয় বিরল খনিজ উপাদান। যা দিয়ে তৈরি করা হয় শক্তিশালী চুম্বক। সাধারণ চুম্বকের চেয়ে তা অনেক আলাদা।
বিরল খনিজ উপাদানের মাধ্যমে যে চুম্বক তৈরি করা হয়, তা হয় চিরস্থায়ী। অর্থাৎ, সাধারণ চুম্বকের মতো তার চৌম্বকশক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায় না।
এই ধরনের শক্তিশালী চুম্বক ব্যবহৃত হয় বৈদ্যুতিক যানবাহন, বায়ুকল এবং অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতিতে। যে কোনও ভারী শিল্পে ওই সব যন্ত্রপাতি অপরিহার্য।
ফলে শিল্প ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশ, বিশেষত পশ্চিমি দেশগুলি চুম্বকের জন্য চিনের উপর নির্ভর করে থাকে। সেখান থেকেই সম্প্রতি হাত গুটিয়ে নিয়েছেন জিনপিং।
খনি থেকে প্রাপ্ত পদার্থের মধ্যে থেকে বিশেষ উপায়ে প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন উপাদান আলাদা করতে হয়। তার পর সেই উপাদান থেকে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয় স্থায়ী, শক্তিশালী চুম্বক।
উপাদান নিষ্কাশনের প্রযুক্তি রফতানি করা আগেই বন্ধ করেছিল চিন। এ বার বেজিং জানিয়ে দিল, তারা চুম্বক তৈরির মূল প্রযুক্তিটিও দেশের বাইরে পাঠাবে না।
স্যামারিয়াম-কোবাল্ট চুম্বক, নিয়োডিমিয়াম-আয়রন-বোরন চুম্বক, সেরিয়াম চুম্বকের মতো গুরুত্বপূর্ণ চুম্বক তৈরি হয় বিরল খনিজ উপাদান দিয়ে। চিনের সিদ্ধান্তে ব্যবসায় কোপ পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
জনৈক ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ নাথান পিকারসিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রযুক্তিগত দিকে কোনও ক্ষেত্রেই চিনের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় না। সাম্প্রতিক ঘোষণা তারই প্রমাণ।’’
চিনা খনিজ উপাদানের উপর আমেরিকা এবং ইউরোপের একাধিক দেশ নির্ভরশীল। জিনপিংয়ের সিদ্ধান্ত তাই ভূ-রাজনৈতিক উত্তাপ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিকল্পের সন্ধানে রয়েছে পশ্চিমি দুনিয়া। চিনা প্রযুক্তি না পেয়ে বিকল্প প্রযুক্তির মাধ্যমে চুম্বক তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতেও বাধা রয়েছে অনেক।
চিনের প্রযুক্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প হিসাবে আমেরিকার একাধিক সংস্থার দিকে নজর ঘুরেছে বিশ্বের। এমপি মেটেরিয়ালস্, ইউকোর রেয়ার মেটেরিয়ালস্-এর মতো সংস্থা চুম্বক তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
চিনের রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা প্রকাশ্যে আসামাত্র আমেরিকার একাধিক সংস্থার শেয়ার দর বেড়ে গিয়েছে। তবে তাদের প্রচেষ্টা চিনের মতো কার্যকরী হবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।