চিনের অর্থনীতির পরিস্থিতি খুব একটা সচ্ছ্বল নয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই অর্থনীতি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে করোনা অতিমারির সময়। এখনও যে ধাক্কা পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি বেজিং।
অতিমারির ধাক্কা কাটলেও তার প্রভাব এখনও রয়ে গিয়েছে। চিনে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে বেকারত্ব। আর্থিক অনটনে ভুগছেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে চিনের সরকারি আধিকারিকেরাও বিপন্ন। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির ‘দৃষ্টি’ পড়েছে তাঁদের উপর। উঠেছে একাধিক হেনস্থার অভিযোগ।
গ্রিসের সংস্থা ইনফগনোমন পলিটিক্সের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনে চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে এক লক্ষের বেশি সরকারি আধিকারিককে জরিমানা করা হয়েছে।
এই সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও ভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারের চাপে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
তবে কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন কোনও অভিযান শুরু করলেন শি জিনপিং? চিনকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই কি এত জরিমানা করা হল? বাইরে থেকে তেমন মনে হলেও অন্দরে ঢুঁ মারলে দেখা যাবে বিষয়টি অন্যরকম।
কোভিড অতিমারির পর থেকে চিনে যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তারই কোপ পড়ছে সরকারি কর্মী এবং আধিকারিকদের উপর। এতে জিনপিংয়ের অন্য অঙ্ক লুকিয়ে আছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
চিন সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির নিরবচ্ছিন্ন আধিপত্য। তাদের সম্মতি ছাড়া চিনে ‘তৃণটিও নড়ে না’। কিন্তু অতিমারি এই ব্যবস্থাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।
অতিমারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে চিনের অনেক সরকারি আধিকারিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় পাঁচ কোটি সরকারি কর্মীর উপর অর্থনৈতিক দুরবস্থার কোপ পড়েছে। কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কারও বেতন হ্রাস পেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিকল্প আয়ের সন্ধান করছেন অনেকেই। আর তা করতে গিয়েই সরকার তথা কমিউনিস্ট পার্টির বিরাগভাজন হচ্ছেন। তাঁদের উপর নেমে আসছে রাষ্ট্রীয় দমন।
চিনে অনেকে বিকল্প আয়ের সন্ধানে বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। সেই কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জরিমানা চাপানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কমিউনিস্ট পার্টি কখনও এই ধরনের কোনও উদ্যোগকে প্রশ্রয় দেয় না। কেউ তাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে চাইছেন দেখলেই কড়া হাতে তাঁকে দমন করা হয়। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই ইনফগনোমন পলিটিক্সকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, চিনের শিক্ষাব্যবস্থাতেও ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
অভিযোগ, চিনা কমিউনিস্ট পার্টি ছড়ি ঘোরায় শিক্ষা ব্যবস্থার উপরেও। যাঁরা তাঁদের ভাবধারায় বিশ্বাসী, তাঁরাই টিকে থাকেন। পড়ুয়াদেরও সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়।
চিনের ঝুঁকে পড়া অর্থনীতিকে মাথা তুলে দাঁড় করানো, না কি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির আধিপত্য আরও দৃঢ়তার সঙ্গে কায়েম করা— কোনটিকে অগ্রাধিকার দেবেন জিনপিং? সে দিকে নজর থাকবে আন্তর্জাতিক মহলেরও।