ঢাকার প্রথম ‘চিফ হিট অফিসার’ নিযুক্ত হয়েছেন বুশরা আফরিন। কানাডাফেরত এই বাঙালি কন্যাকে নিয়ে চর্চা যেন থামতেই চাইছে না। তাঁর কাজের অভিনবত্বই বুশরাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
দুর্নীতি নয়, কালোবাজারি নয়, অশান্তি নয়, শহরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করাই বুশরার একমাত্র কাজ। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়নের মাঝে ঢাকা শহরকে উত্তাপের হাত থেকে বাঁচাবেন তিনি।
বুশরা ‘চিফ হিট অফিসার’-এর ভূমিকায় প্রথম হলেও এর আগে তাঁর অন্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। বাংলাদেশের বিনোদন জগতে বেশ কিছু কাজ করেছেন তিনি।
২০২১ সালের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে বুশরাকে দেখা গিয়েছিল। ছবির নাম ‘৭০০ টাকা’। ছবিটি ইউটিউবে মুক্তি পায়। সেখানে যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল এই ছবি।
‘৭০০ টাকা’ ছবিতে নুহাশ হুমায়ুনের পরিচালনায় কাজ করেছেন বুশরা। তাঁর সঙ্গে ওই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল প্রীতম হাসান এবং সাবিলা নুরকে।
১৫ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের ওই ছবিতে বুশরার চরিত্র খুব বড় ছিল না। তবে পর্দায় তিনি যেটুকু সময় পেয়েছেন, তাতেই তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা ফুটে উঠেছে।
শুধু অভিনয় নয়, ছবির প্রযোজনাতেও বুশরার অবদান রয়েছে। পরিচালক নুহাশেরই একটি ছবিতেই প্রযোজনা করেছেন তিনি। চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসাবে বুশরার নামও রয়েছে ওই ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকারে।
নুহাশ পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘মশারি’-র অন্যতম প্রযোজক বুশরা। আন্তর্জাতিক মহলেও এই ছবিটি প্রশংসিত হয়েছে।
কানাডার গ্লোবাল ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ়ে পড়াশোনা করেছেন বুশরা। তার পর দেশে ফিরে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার বুশরাকে ঢাকার ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসাবে নিয়োগ করেছে।
বাংলাদেশের রাজধানীর উত্তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনও বেতন নেবেন না বুশরা। তাঁর পারিশ্রমিক আসবে আমেরিকান ওই সংস্থা থেকেই।
বুশরার বাবা ঢাকা উত্তর পুরসভার মেয়র আতিকুল ইসলাম। পোশাকের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। মেয়রের কন্যার এই নতুন দায়িত্বকে নতুন চোখে দেখছে সে দেশ।
ঢাকায় প্রথম হলেও বুশরার পদটি কিন্তু একেবারে অপরিচিত নয়। এলেনি মিরিভিলিকে প্রথম ‘গ্লোবাল চিফ হিট অফিসার’ হিসাবে নিয়োগ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর পর একে একে মায়ামি, চিলি, গ্রিস, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকাও ব্যতিক্রম নয়। শহরের তাপমাত্রা কমানোর বিষয়ে উদ্যোগী হবেন বুশরা।
বুশরার প্রধান কাজ বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। পাশাপাশি শহর জুড়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও নেবেন তিনি। ছায়া পাওয়া যায়, এমন স্থানের সংখ্যা ঢাকায় বৃদ্ধি করা হবে তাঁরই তত্ত্বাবধানে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে নিজের কাজ নিয়ে বুশরা বলেন, ‘‘আমরা হিট মেসেজিং নিয়ে কাজ করব, সচেতন করব। কারণ সচেতনতা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। আমার উদ্দেশ্য বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাঁরা শারীরিক ভাবে অসুস্থ, তাঁরা যেন নিরাপদে থাকেন।’’
আমেরিকার সংস্থার সঙ্গে ঢাকা পুরসভার চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, শহরে দু’লক্ষ গাছ বসানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। সেই মতো ঘোষণাও করা হয়ে গিয়েছে।