যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাত, তাদেরই খুন করত। খুনের পর দেহ টুকরো টুকরো করে তা ফেলে দিত বিভিন্ন এলাকায়। নব্বইয়ের দশকের শেষে দিল্লিতে পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল এক হকার। তার নাম চন্দ্রকান্ত ঝা। এ দেশের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার সে।
১৯৬৭ সালে জন্ম চন্দ্রকান্তের। দিল্লিতে হকার হিসাবে কাজ করত সে। ১৯৯৮ সালে প্রথম বার তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। এই অপরাধের জেরে ২০০২ সাল পর্যন্ত জেলবন্দি ছিল সে।
কিন্তু যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় চন্দ্রকান্ত। তবে সংশোধনাগার থেকে ফিরেও নিজেকে সংশোধন করেনি। আবার একের পর এক খুন করে।
বেছে বেছে বিহার, উত্তরপ্রদেশের তরুণ পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ভাব জমাত চন্দ্রকান্ত। তাঁদের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বই নয়, একেবারে আপন করে নিত সে।
ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ পাইয়ে দিত চন্দ্রকান্ত। তাঁদের জন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করত।
দিল্লির হায়দারপুরে জেজে কলোনিতে বাড়ি ছিল চন্দ্রকান্তের। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের বাড়িতেই থাকতে দিত সে।
যে এতটা সাহায্য করেছে, সে-ই কিনা খুন করবে! এমনটা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা।
এর পর, চুরি, ধূমপান, মদ্যপান, নিরামিষাশী না হওয়া নিয়ে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে বিতণ্ডা হত চন্দ্রকান্তের। আর তার জেরেই তাঁদের খুন করত। তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছিল পুলিশ।
শ্বাসরোধ করে খুন করত চন্দ্রকান্ত। খুনের পর যে ঘরে দেহগুলি রাখত, সেখানে বসেই রাতের খাবার খেত সে। পরে দেহগুলি টুকরো টুকরো করে কেটে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দিত চন্দ্রকান্ত।
খুনের পর দেহ টুকরো করে ফেলার আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল চন্দ্রকান্তের। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো লুকোচুরি খেলত সে। এমনকি, তাঁকে ধরার জন্য পুলিশকে চ্যালেঞ্জ জানাত।
পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করতে অনেক সময় দেহাংশগুলি তিহাড় জেলের বাইরে ফেলত চন্দ্রকান্ত। দেহাংশগুলির সঙ্গে থাকত চিরকুট। সেই চিরকুটেই পুলিশের উদ্দেশে তার বার্তা লেখা থাকত।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে মোট ১৮ জনকে খুন করে চন্দ্রকান্ত। তবে অধিকাংশ ঘটনাতেই প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় সে।
২০০২ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আরও ৬টি খুন করে চন্দ্রকান্ত।
২০০৩ সালে শেখর এবং উমেশ নামে ২ যুবককে খুন করে চন্দ্রকান্ত। ২০০৫ সালে খুন করে গুড্ডু নামে আরও এক জনকে। ২০০৬ সালে তার শিকার হন অমিত নামে এক যুবক।
২০০৭ সালে উপেন্দ্র এবং দলীপ নামে দুই যুবককে খুন করে চন্দ্রকান্ত। ওই বছরের ২৫ মে দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সে।
চন্দ্রকান্তকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি আমৃত্যু কারাবাসের সাজাও শোনানো হয়েছিল। সেটা ২০১৩ সাল।
পরে ২০১৬ সালে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্যারোলের আবেদন জানায় চন্দ্রকান্ত। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়।
চন্দ্রকান্তের ব্যক্তিজীবন জুড়েও রয়েছে অনেক ঝড়। বিয়ের ১ বছরের মধ্যেই প্রথম স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে সে।
পরে আরও এক বার বিয়ে করে চন্দ্রকান্ত। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তার ৫ কন্যা রয়েছে। তবে অধিকাংশ সময়ই পরিবারের সঙ্গে থাকত না সে।
চন্দ্রকান্তের জীবন এবং অপরাধের ঘটনা নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। যার নাম ‘ইন্ডিয়ান প্রিডেটর: দ্য বুচার অফ দিল্লি’। ২০২২ সালের ২০ জুলাই এই তথ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে।