১৭ বছর বয়সে প্রথম বার ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার পর থেকে লাগাতার ছোট পর্দায় কাজ করে গিয়েছেন। তবে এ বার সে সব ছেড়েছুড়ে আম আদমি পার্টি (আপ)-র হাত ধরলেন অভিনেত্রী চাহত পাণ্ডে।
বৃহস্পতিবার ২৪ বছরের চাহতকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন আপের সর্বভারতীয় সাধারণ সচিব (সংগঠন) সন্দীপ পাঠক। এত কম বয়সে রাজনীতিতে পা রাখার কারণ কী?
সংবাদমাধ্যমের কাছে চাহতের দাবি, ‘‘নাম-যশ বা অর্থের টানে রাজনীতিতে আসিনি। এ সব ছেড়েই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি।’’
রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে চাহতের মতো পরিচিত মুখকে দলে পেয়ে আশাবাদী রাজ্যসভার সাংসদ সন্দীপ। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন তিনি।
সাংসদের দাবি, ‘‘(মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের আমলে) মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিজেপি এবং কংগ্রেস, কারও ফারাক নেই। দু’দলই নিজের উদ্দেশ্যসাধনের জন্য রাজ্যকে আক্ষরিক অর্থে শোষণ করছে।’’
সাংসদ আরও বলেন, ‘‘রাজ্যে আম আদমি পার্টিকে একটা সুযোগ দিতে চায় আমজনতা।’’ চাহতের কথায় সায় দিয়ে সাংসদের মন্তব্য, ‘‘সফল কেরিয়ার ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছেন এক অভিনেত্রী। তাঁর মনে হয়েছে, এ রাজ্যের মানুষের তাঁকে প্রয়োজন রয়েছে।’’
চাহতের পরিবারের সদস্যেরা আদতে মধ্যপ্রদেশের দমোহ জেলার বাসিন্দা। মুম্বইয়ে পাড়ি দেওয়ার আগে তিনিও সেখানেই বড় হয়েছেন। দমোহের বাসিন্দারা যে চাহতকে উচ্চাসনে রেখেছেন, সে দাবিও করেছেন আপ সাংসদ।
আপের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই তাঁর রাজনীতিতে পা রাখা বলে দাবি করেছেন চাহত। তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল কাজ করার কথা বলে। তবে আপ যা বলে সেটাই করে। আপের কাজ ও কথা, দুইয়েই প্রভাবিত হয়েছি।’’
আম আদমি পার্টির নামধারী টুপি এবং উত্তরীয় পরার বহুকাল আগে দমোহ ছেড়েছিলেন চাহত। তিনি বলেন, ‘‘দমোহের মতো ছোট জায়গা থেকে উঠে এসেছি আমি। লোকে বলে, এ জায়গাটা ভোপালের কাছে। তবে আমি চাই লোকজন একডাকে দমোহের নাম জানুক।’’
দমোহের চণ্ডী চোপড়া নামে এক অখ্যাত গ্রামে জন্ম হয়েছিল চাহতের। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা তাঁর। পরে জব্বলপুর নাকা এলাকার স্কুল থেকে দশমের পড়া শেষ করেন। এর পর এখানকার আর একটি স্কুল থেকে থেকে দ্বাদশের পরীক্ষা দেন।
ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন চাহত। দ্বাদশের পড়াশোনার শেষে ইনদওরের অভিনয়ের তালিম নিয়েছিলেন। সেখান থেকে মুম্বই পাড়ি দেন।
২০১৬ সালে টেলিভিশনে একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭। ‘পবিত্র বন্ধন’ নামে ওই ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্রের ছোট বোনের ভূমিকায় ছিলেন চাহত।
সাত-আট বছরের কেরিয়ারে প্রায় প্রতি বছরই টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গিয়েছে চাহতকে। অভিষেকের পরের বছর ‘সাবধান ইন্ডিয়া’র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে কাজ করেন তিনি।
অভিনয় জগতে সংক্ষিপ্ত সময় কাটালেও তার মধ্যেই ‘হমারী বহু সিল্ক’ বা ‘দুর্গা মাতা কী ছায়া’ এর মতো ধারাবাহিকে নজর কেড়েছেন চাহত। দুই ধারাবাহিকেই মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন তিনি।
এক’বছরে নয়-নয় করেও ১৮টি ধারাবাহিক দেখা গিয়েছে চাহতকে। অভিনয় জীবনে বেশ কয়েক বার বিতর্কেও জড়িয়েছেন।
কাকার বাড়িতে ভাঙচুর এবং তাঁকে হেনস্থা করার অভিযোগে ২০২০ সালের জুনে চাহত এবং তাঁর মাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
ওই বছরের মে মাসে চাহতকে ঘিরে অন্য এক জল্পনা শুরু হয়েছিল। ‘হমারী বহু সিল্ক’ ধারাবাহিকে কাজের পরেও পারিশ্রমিক পাননি বলে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বলে দাবি। যদিও সংবাদমাধ্যমের কাছে চাহতের দাবি ছিল, এ সবই ভুল বোঝাবুঝির ফলে হয়েছে।