৪ সেপ্টেম্বর, রবিবার দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ পথদুর্ঘটনায় মারা যান টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রী। আমদাবাদ থেকে তিন জন সহযাত্রীর সঙ্গে মুম্বইয়ের দিকে আসছিলেন সাইরাস।
মুম্বই থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে পালঘরের কাছে চারোটি এলাকায় একটি নদীর সেতুর উপর থাকা ডিভাইডারে ধাক্কা মারে গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাইরাস।
পুলিশি তদন্তে জানা যায়, গাড়ির গতি অত্যাধিক বেশি ছিল। শেষ মুহূর্তে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ডিভাইডারে ধাক্কা মারে গাড়িটি। গাড়ির পিছনের সিটে বসেছিলেন সাইরাস। পুলিশ আরও জানায়, দুর্ঘটনার সময় সিটবেল্ট পরে ছিলেন না তিনি।
তবে সাইরাসই প্রথম নন, এর আগেও দেশ বিদেশের বহু খ্যাতনামী পথদুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।রাজকুমারী ডায়না থেকে শুরু করে হলিউডের অভিনেতা, বহু রাজনীতিকও পথদুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। কখনও কখনও তাঁদের মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রচুর বিতর্ক।
১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট। ভয়াবহ পথদুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ‘প্রিন্সেস অব ওয়েলস’ ডায়না। একটি সুড়ঙ্গ অতিক্রম করার সময় তাঁর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গাড়িতে ডায়নার সঙ্গে ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু দোদি আল ফায়েদ।
পুলিশি তদন্তে জানানো হয়, গাড়ির চালক অত্যন্ত জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু অনেকের ধারণা, ডায়নার মৃত্যু পথদুর্ঘটনায় নয়, পূর্বপরিকল্পিত। রাজপরিবারের সদস্যরা নিজেদের বাঁচাতে পথদুর্ঘটনা হিসাবে ঘটনাটি সাজিয়েছেন।
‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ হলিউডের সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম। এই ছবিতে পল ওয়াকারের অভিনয় সকলের মন কেড়ে নেয়। কিন্তু ২০১৩ সালে এক ভয়ানক পথদুর্ঘটনায় অভিনেতা প্রাণ হারান।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যালেন্সিয়া এলাকার হারকিউলিস স্ট্রিটের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ল্যাম্পপোস্ট এবং দু’টি গাছে ধাক্কা মারে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন পল নিজেই। ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে আগুন লেগে যায়।
ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পলের। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, পল ঘণ্টায় ১০০ কিমি বেগে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁর শরীরে মাদকের উপস্থিতিও ছিল না। শুধুমাত্র অত্যাধিক গতি থাকার কারণেই পথদুর্ঘটনায় মারা যান অভিনেতা।
নন্দমুরি হরিকৃষ্ণ ছিলেন তেলুগু রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম। রাজ্যসভার সাংসদ থাকা হরিকৃষ্ণ দক্ষিণী ফিল্মজগতের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। অভিনয় ছাড়াও তিনি বহু ছবি প্রযোজনা করেছেন।
২০১৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে গাড়ি চালিয়ে বন্ধুর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাচ্ছিলেন হরিকৃষ্ণ। কিন্তু নালগোন্ডা জেলার নারকেতপল্লী এলাকায় তাঁর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারে।
তদন্তে জানা যায়, হরিকৃষ্ণ সিটবেল্ট ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। জল খাবেন বলে সামনের দিকে ঝুঁকে জলের বোতল নিতে যান। তখনই তাঁর গাড়ি ডিভাইডারের সামনে এসে পড়ে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
হলিউড অভিনেত্রী অ্যানা হেচও পথদুর্ঘটনায় মারা যান। ২০২২ সালে অগস্ট মাসে তাঁর মৃত্যু হয়। তদন্তে জানা যায়, গতি হারিয়ে তাঁর গাড়িটি একটি বাড়িতে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের ফলে গাড়ি এবং বাড়িতে আগুন লেগে যায়।
আগুন নেভানোর জন্য দমকল পৌঁছলেও প্রায় ৪৫ মিনিট পর অভিনেত্রীকে ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু দিন পরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মারা যান।
মরাঠি অভিনেত্রী ঈশ্বরী দেশপাণ্ডে ২০২১ সালে একটি পথদুর্ঘটনায় মারা যান। গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোটবেলার বন্ধুও।
নাইট ক্লাব থেকে ফেরার পথে গোয়ার বাগা ক্রিকের কাছে তাঁদের গাড়ি জলে পড়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত সেই সময় গাড়ি ভিতর থেকে লক হয়ে যায়। বেরোতে না পেরে দু’জনেই গাড়ির ভিতর দমবন্ধ হয়ে মারা যান।
লালকেল্লায় কৃষকদের প্রতিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল দীপ সিধুর। রাজনীতি ছাড়াও পঞ্জাবি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হরিয়ানার কাছে খারকোড়া এলাকার কাছে পথদুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।
দীপের সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন তাঁর বান্ধবীও। একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গাড়িটির। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দীপ মারা গেলেও তাঁর বান্ধবী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
দীপের বন্ধুর দাবি ছিল, এই দুর্ঘটনা স্বাভাবিক নয়। দীপকে নাকি অনেকেই প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁদের ধারণা, যাঁরা হুমকি দিচ্ছিলেন তাঁদের মধ্যেই কেউ পরিকল্পনা করে দীপকে মেরেছেন। ট্রাকের চালককে গ্রেফতার করা হলেও এর পিছনে আর কারও হাত ছিল কি না তা জানা যায়নি।
পঞ্জাবি অভিনেতা ও কমেডিয়ান জসপাল ভাট্টি ২০১২ সালে একটি পথদুর্ঘটনায় মারা যান। ৫৭ বছর বয়সি এই অভিনেতা তাঁর ছবি ‘পাওয়ার কাট’-এর প্রচারে যাচ্ছিলেন।
জালন্ধর জেলার শাহকোটের কাছে গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে একটি গাছে ধাক্কা মারে গাড়িটি। চালকের সিটে ছিলেন অভিনেতার ছেলে। জসপাল বসেছিলেন পিছনের আসনে। জোরে ধাক্কা লাগার ফলে জসপালের মাথায় আঘাত লাগে এবং ছবি মুক্তির আগের দিন তিনি মারা যান।
২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল, গভীর রাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বাঙালি মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের। গাড়ির চালকের সিটে ছিলেন টলিউড অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের কাছে একটি গয়নার দোকানের সামনে ল্যাম্পপোস্টে প্রবল বেগে ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়ি।
মাথায় গুরুতর আঘাত পান সোনিকা। বিক্রম তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সোনিকাকে আর বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনায় টলি তারকাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি নাকি মত্ত অবস্থায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর ঘটনার মামলা চলাকালীন অভিনেতার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়।
সম্প্রতি লন্ডনে শ্যুটিং করতে যাওয়ার কথা ছিল বিক্রমের। আদালতে পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আদালত বিক্রমের সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, বিচারপ্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি শুরু হবে। তাই এখন দেশের বাইরে গেলে সমস্যা হবে।