India-Maldives Relationship

বাতিল হাজার হাজার বুকিং, দোসর সচিন-অক্ষয়দের ‘গোলা’! ভুলের বড় মাসুল গুনতে হবে মলদ্বীপকে?

ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে ভারতীয়দের রোষের মুখে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপের সরকার। এমনকি, মলদ্বীপকে বয়কট করার ডাকও দিয়েছেন বলিউড এবং ক্রিকেট মহলের তাবড় তারকারা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:১০
Share:
০১ ২৫

ভারত এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে ভারতীয়দের রোষের মুখে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপের সরকার। এমনকি, মলদ্বীপকে বয়কট করার ডাকও দিয়েছেন বলিউড এবং ক্রিকেট মহলের তাবড় তারকারা। মলদ্বীপ না গিয়ে ভারতীয় দ্বীপগুলি ঘুরে দেখার আবেদন করে গলা মিলিয়েছেন তাঁরা।

০২ ২৫

দেশের পর্যটন ব্যবসাকে বিপদের মুখে পড়তে দেখে তড়িঘড়ি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে নেমে পড়েছে মলদ্বীপ সরকার।

Advertisement
০৩ ২৫

কিন্তু বিতর্কের সূত্রপাত কোথায়? সম্প্রতি লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত দ্বীপরাজ্যের সমুদ্রসৈকতেও অনেকটা সময় কাটিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ফিরে এসে সেই সফরের স্মৃতিচারণাও মোদী করেছেন। সফরে কাটানো মুহূর্তের প্রচুর ছবিও তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।

০৪ ২৫

লক্ষদ্বীপের সমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্নর্কেলিং (এক ধরনের জলক্রীড়া) করা, সাদা বালির উপর ভ্রমণ বা বিশাল নীল সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই বিতর্কের শুরু।

০৫ ২৫

অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পর মলদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ সেই ছবিগুলি নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘জোকার’ এবং ‘ইজ়রায়েলের ক্রীড়নক’ বলেও অপমান করা হয়েছে। কটাক্ষ করা হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়েও। এর পরেই বিতর্কের মুখে পড়েন ওই তিন মন্ত্রী এবং মলদ্বীপ সরকার। বিতর্কের মুখে পড়ে নিজেদের পোস্টগুলিও মুছে ফেলেন তাঁরা।

০৬ ২৫

বিতর্ক শুরু হতেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অক্ষয় কুমার, সচিন তেন্ডুলকর, সলমন খান, কঙ্গনা রানাউত, জন আব্রাহাম, শ্রদ্ধা কপূর, হার্দিক পাণ্ড্যের মতো তারকারা। মলদ্বীপ যেতে বারণ করার পাশাপাশি, দেশবাসীকে ভারতীয় দ্বীপগুলি অন্বেষণ করার বার্তাও দিয়েছেন তাঁরা।

০৭ ২৫

অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মলদ্বীপের ওই মন্ত্রীদের পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে অক্ষয় সেটিকে ‘ঘৃণ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘‘মলদ্বীপের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা ভারতীয়দের নিয়ে ঘৃণামূলক এবং বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে, যে দেশ থকে মলদ্বীপে সব থেকে বেশি পর্যটক যায়, তাদের সঙ্গেই এই ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের কথা ভাবি। কিন্তু কেন আমরা এই ধরনের ঘৃণা সহ্য করব? আমি বহু বার মলদ্বীপে গিয়েছি এবং সবসময় সে দেশের প্রশংসা করেছি। কিন্তু মর্যাদা প্রথমে। আসুন আমরা আমাদের নিজস্ব পর্যটনকে সমর্থন করি এবং দেশের দ্বীপগুলি ঘুরে দেখি।’’

০৮ ২৫

অন্য দিকে, ভারতীয় উপকূলবর্তী এলাকা এবং দ্বীপগুলির প্রশংসা করে সচিন লিখেছেন, ‘‘ভারতে সুন্দর সুন্দর উপকূল এবং দ্বীপ রয়েছে যা আমাদের কাছে আশীর্বাদ। আমাদের ‘অতিথি দেব ভব’ নীতি নিয়ে ঘুরে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। এই জায়গাগুলি অনেক স্মৃতি তৈরি হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’’

০৯ ২৫

সলমন লিখেছেন, ‘‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই মোদীকে লক্ষদ্বীপের সুন্দর, পরিচ্ছন্ন এবং অত্যাশ্চর্য সমুদ্র সৈকতে দেখে খুব ভাল লাগছে। সবচেয়ে ভাল দিক হল এই দ্বীপ আমাদের ভারতেই রয়েছে।’’

১০ ২৫

তারকাদের পাশাপাশি মলদ্বীপ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে আমজনতাও। সমাজমাধ্যমে মলদ্বীপকে বয়কট করা নিয়ে পোস্টের পর পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ।

১১ ২৫

ভারতের এক জনপ্রিয় ভ্রমণ সংস্থা মলদ্বীপ যাওয়ার সমস্ত বিমানের টিকিট বুকিং বাতিল করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। ওই সংস্থার মালিক জানিয়েছেন, দেশের প্রতি আনুগত্য এবং সহানুভূতি থেকে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রবিবার রাতে ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নিশান্ত পিট্টি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘আমাদের দেশের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা মলদ্বীপের সমস্ত বিমানের টিকিটের বুকিং বাতিল করে দিয়েছি।’’ অর্থাৎ, যাঁরা ওই সংস্থার মাধ্যমে মলদ্বীপে যাওয়ার বিমানের টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের টিকিট বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

১২ ২৫

ভারতীয়রা মলদ্বীপে ঢুঁ মারা বন্ধ করে দিলে দেশের অর্থনীতি বিপদের মুখে পড়তে পারে ভেবে ভুল শোধরানোর চেষ্টা শুরু করেছে মলদ্বীপের সরকার। কারণ মলদ্বীপের অর্থনীতি অনেকটাই পর্যটন নির্ভর। সারা বছর ভারতীয় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে।

১৩ ২৫

রবিবার প্রথমে তিন মন্ত্রীর মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল মলদ্বীপের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়ুর সরকার। কিন্তু সে দেশেরই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদ, মহম্মদ সোলি-সহ একাধিক বিরোধী নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তোলেন। ভারতের মতো বন্ধু দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানান তাঁরা।

১৪ ২৫

এর পরেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করেছে মলদ্বীপ সরকার। এই তিন জনকে কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছিলেন ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটির একাধিক বিরোধী নেতা।

১৫ ২৫

রবিবার এনডিটিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর দেশের মন্ত্রীদের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন মলদ্বীপের সাংসদ তথা প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার এলভা আবদুল্লা। ওই প্রসঙ্গে এলভা বলেন, ‘‘ভারত ঠিকই বলছে। এমন মন্তব্যে রেগে যাওয়াই উচিত। যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা আপত্তিকর। তবে, ওই মন্তব্য মলদ্বীপের সাধারণ মানুষের মতামত নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই লজ্জাজনক এবং বৈষম্যমূলক মন্তব্যের জন্য ভারতের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি।’’ মন্ত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্য ভুলে গিয়ে ভারতের মানুষকে আবার মলদ্বীপে ‘ফিরতে’ বলেছেন সাংসদ এলভা।

১৬ ২৫

যদিও এত সহজে চিঁড়ে ভিজবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তাদের মন্ত্রীদের করা মন্তব্যের জেরে সে দেশের হাই কমিশনার ইব্রাহিম সাহেবকে সোমবার ডেকে পাঠায় ভারত। ইব্রাহিম সোমবার সকালে সাউথ ব্লকে বিদেশ মন্ত্রকে পৌঁছন।

১৭ ২৫

তবে, ভারত এবং মলদ্বীপের সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। সে দেশের শাসকের গদিতে মুইজ়ু আসার পর কূটনৈতিক সম্পর্কেও বেশ কিছুটা ফাটল ধরেছে।

১৮ ২৫

মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ সোলি ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে নীতি নিয়ে চলতেন, সেই ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন ‘চিনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত মুইজ়ু। তিনি জিত‌েও যান। তার পর থেকেই তিনি ভারতকে চাপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

১৯ ২৫

মলদ্বীপের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনা। দূরবর্তী দ্বীপগুলিতে ওষুধ এবং ত্রাণ পাঠাত ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টারগুলি। কিন্তু সম্প্রতি ভারতকে সেই সেনা সরিয়ে ফেলার বার্তা দেয় মুইজ়ু সরকার। দ্বীপরাষ্ট্রটির ঘরোয়া রাজনীতিতেও মুইজ়ুর দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপস (পিপিএম) এই বলে প্রচার চালায় যে, দেশের সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করতেই সেনা রেখে দিয়েছে ভারত।

২০ ২৫

ভারতীয় সেনা অপসারণের বিষয়ে মোদী সরকারকে অনুরোধ জানানোর পর ভারতের সঙ্গে ৪ বছরের পুরনো একটি চুক্তিও বাতিল করেছে মলদ্বীপের নতুন সরকার।

২১ ২৫

মুইজ়ুর এই ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতিকে মলদ্বীপের কূটনৈতিক অবস্থানে বড়সড় পরিবর্তনের সূচক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ভারত-ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে সম্প্রতি নতুন বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করছে মলদ্বীপ।

২২ ২৫

গণতন্ত্রের রাস্তা ধরে পথচলা শুরু করার পর মলদ্বীপের সব প্রেসিডেন্টেরই প্রথম গন্তব্য হয়েছে ভারত। এমনকি, ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত প্রেসিডেন্টরাও শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতেই এসেছেন। কিন্তু মুইজ়ু সেই নিয়ম ভেঙে দিয়েছেন।

২৩ ২৫

মুইজ়ু তাঁর বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন তুরস্কে গিয়ে। ভারতে আসার আগেই এ বার চিন সফরে যেতে চলেছেন তিনি। প্রথম বন্ধু হিসাবেই যে দেশকে মুইজ়ু বেছে নিয়েছেন, সেই তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ‘মধুর’ নয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (৩৭০ ধারা) তুলে দেওয়া নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিল তুরস্ক।

২৪ ২৫

তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, মুইজ়ুর ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতির নেপথ্যে কাজ করছে চিনের উস্কানি। ভারতের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের যুক্তি খাড়া করলেও মুইজ়ুর প্রশাসন কিন্তু সে দেশে চিনের একটি নজরদার জাহাজকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। সূত্রের খবর, কলম্বো বন্দরকে পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করতে না-পেরে মলদ্বীপের কোনও বন্দরে ভিড়তে চলেছে সেটি।

২৫ ২৫

মুইজ়ুর সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের জন্য ক্রমশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র। ফলে মনে করা হচ্ছে মলদ্বীপকে আর গুরুত্ব দিতে রাজি নয় ভারত। আপাতত মুইজ়ুকে নিয়ে কড়া অবস্থান নেওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছে নয়াদিল্লি। মলদ্বীপের পরিবর্তিত বিদেশনীতি, সেখানকার ঘরোয়া রাজনীতির ওঠাপড়া, মুইজ়ুর চিন-‘ঘনিষ্ঠতা’র দিকেও কড়া নজর রেখেছে ভারত। তার মধ্যেই মোদী এবং ভারতকে নিয়ে তিন মন্ত্রী মন্তব্যের জেরে ‘মুখ পু়ড়ল’ মুইজ়ু সরকারের। যদিও ভুল শোধরাতে ইতিমধ্যেই উঠেপড়ে লেগেছে ভারতের প্রতিবেশী।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement