১ জুন, ২০২৪। ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ৭টা। একে একে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল। বাংলার রাজনীতিতে তখন উথালপাথাল ঢেউ।
বুথফেরত সমীক্ষা বাংলায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের টান টান লড়াই দেখিয়েছিল। বেশির ভাগ সমীক্ষায় তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে ছিল বিজেপি। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তবে কি অন্য একাধিক রাজ্যের মতো বাংলাতেও উঠবে পদ্মের ঝড়?
৪ তারিখের ফলাফল সব হিসাব উল্টে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিকেল ৫টা পর্যন্ত যা পরিসংখ্যান, তাতে বাংলায় তৃণমূলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে। ৪২টির মধ্যে তারা এগিয়ে ২৯টি কেন্দ্রে।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি বিকেল ৫টা পর্যন্ত এগিয়ে রাজ্যের ১২টি কেন্দ্রে। একটি মাত্র আসনে এগিয়ে কংগ্রেস, তা মালদহ দক্ষিণ। ইশা খান চৌধুরী সেখানে জয়ের পথে।
এই ১৩টি কেন্দ্র ছাড়া সর্বত্র তৃণমূল এগিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের জুটিতেই আস্থা রেখেছেন বাংলার মানুষ।
বিকেলের দিকে, রাজ্যের অধিকাংশ কেন্দ্রে যখন জয়ের প্রবণতা স্পষ্ট, তত ক্ষণে কালীঘাটে শুরু হয়ে গিয়েছে বিজয়োৎসব। উল্লাসে মেতে উঠেছেন তৃণমূল সমর্থকেরা।
কালীঘাট চত্বরে সবুজ আবির নিয়ে উৎসব শুরু হয়েছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। ছোট-বড় সকলে আনন্দে গা ভাসিয়েছেন। রাস্তায় নেমেছে বিজয়মিছিল।
হাতে নেত্রী মমতার ছবি নিয়ে কালীঘাটের রাস্তায় নেমেছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। চারদিকে উল্লাসের ছোঁয়া। উৎসবের আমেজ দিদির পাড়ায়।
‘জনগণের গর্জন’— বিজেপির বিরুদ্ধে এ বারের ভোটে স্লোগান তুলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজয়োল্লাসেও সেই স্লোগান ফিরে এল।
লোকসভা ভোটের প্রচারে অভিষেক যেখানেই গিয়েছিলেন, সেখানেই ‘বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’-এর ডাক দিয়েছিলেন। বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী’ বলে কটাক্ষ করেছিল তৃণমূল।
ভোটগণনা চলাকালীন দুপুরেই কালীঘাটে বৈঠকে বসেন মমতা এবং অভিষেক। তার পর সেখান থেকেই মমতা সাংবাদিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলার লোকসভায় তৃণমূলের ফলে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে কালীঘাট জুড়ে। কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রেও বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়।
সার্বিক সাফল্যে মিষ্টিমুখ শুরু হয়ে গিয়েছে কালীঘাটে। যেন অসময়ে সেখানে নেমে এসেছে দশমী। তৃণমূল সমর্থকেরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন। আবির খেলছেন।
তৃণমূলের বিজয় উৎসবে কালীঘাটের রাস্তার রং হয়ে গিয়েছে সবুজ। জয় উদ্যাপন করতে অনেকে সবুজ পোশাক পরেও রাস্তায় বেরিয়েছেন।
শুধু বাংলায় তৃণমূল নয়, সারা দেশেই বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ফল মোটের উপর ভাল। ওই জোটের শরিক মমতাও।
‘ইন্ডিয়া’-র প্রার্থীদের জয় তৃণমূলের জন্য সুখবর। কারণ, মমতা এই জোট গঠনের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। জোটের নামকরণও করেছিলেন তিনি। তাই ‘ইন্ডিয়া’র সাফল্যও পালন করছে তৃণমূল।