১৯১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, সেসিল চুব নামে এক আইনজীবীকে তাঁর স্ত্রী কিছু পুরনো পর্দা কিনে আনার জন্য একটি নিলামে পাঠিয়েছিলেন। আবার অন্য তথ্য অনুযায়ী, সেসিলের স্ত্রী তাঁকে একটি ডাইনিং চেয়ার কিনে আনতে বলেছিলেন।
তবে এর কোনওটিই সেসিল কিনে আনেননি। এর বদলে তিনি যা কিনেছিলেন তা শুনলে যে কেউ অবাক হবেন। পর্দা-চেয়ারের বদলে সেসিল নিলামে কিনলেন স্টোনহেঞ্জ!
বর্তমানে কল্পনা করা না গেলেও ১০০ বছর আগেও স্টোনহেঞ্জ-এর মতো প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নক্ষেত্র বিক্রির জন্য নিলামে উঠেছিল।
স্টোনহেঞ্জ ইংল্যান্ডের বিখ্যাত একটি প্রত্নক্ষেত্র। মনে করা হয় যে, এই প্রত্নক্ষেত্র প্রাচীনকালের কোনও মানমন্দির।
১৫৪০ সালে রাজা অষ্টম হেনরি বেনেডিক্টিন অ্যাবের কাছ থেকে এই প্রত্নক্ষেত্র বাজেয়াপ্ত করেন। তার পর থেকে স্টোনহেঞ্জ ব্যক্তিগত হাতেই ছিল।
১৮২৪ সালে চেশায়ারের অ্যান্ট্রোবাস পরিবার স্টোনহেঞ্জ কিনে নেয়। তবে তার আগেও এটি বহু বার হাতবদল হয়েছে। ১৯০০ সালে অ্যান্ট্রোবাস পরিবার এই প্রত্নাবশেষকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেতন করা প্রহরীও রাখা হয়।
১৯১৪ সালে এই অভিজাত পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী স্যার এডমন্ড অ্যান্ট্রোবাস মারা যান। এর ঠিক পরের বছর এই পরিবারের সব সম্পত্তি নিলামে ওঠানো হয়। সেই নিলামেই উপস্থিত হয়েছিলেন সেসিল।
সেসিল স্ত্রীর আবদার মেটাতে ওখানে পৌঁছে শুনতে পান নিলামকারী নিলামে তুলেছেন স্টোনহেঞ্জ। প্রায় ৩০ একর জমির উপর একাধিক অনুভূমিক পাথর দিয়ে তৈরি স্টোনহেঞ্জ নিলামে উঠতেই তা সেসিলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
নিলামে স্টোনহেঞ্জের দাম উঠেছিল পাঁচ হাজার পাউন্ড। তবে এর থেকে ১০০ পাউন্ড করে বেড়ে বেড়ে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ছ’হাজার পাউন্ডে। তবে স্টোনহেঞ্জের জন্য এর থেকে বেশি দাম আর কেউ দিতে রাজি ছিলেন না।
‘স্টোনহেঞ্জ অমূল্য’, এই বলেও নিলামকারী এই প্রত্নক্ষেত্রের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে এর পরও আর কেউ স্টোনহেঞ্জের দাম বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
নিলামকারী ছ’হাজার পাউন্ড থেকে দাম আরও বাড়ানোর আগেই নিলামে উঠে আসে সেসিলের হাত। এক ধাক্কায় ৬০০ পাউন্ড বৃদ্ধি করে ছ’হাজার ৬০০ পাউন্ড (বর্তমান ভারতীয় মূল্যে প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা) দর হাঁকান সেসিল। এর থেকে বেশি মূল্য কেউ দিতে রাজি না থাকায় সেসিলের হাতেই স্টোনহেঞ্জের মালিকানা তুলে দেন নিলামকারী।
তবে সেসিলের এই নতুন সম্পত্তিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না তাঁর স্ত্রীর। বরং খানিকটা বিরক্ত এবং রাগই হয়েছিল তাঁর।
সিসেল একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘‘আমি যখন নিলামঘরে ছিলাম তখন আমি ভেবেছিলাম যে কোনও স্থানীয় মানুষেরই এই সম্পত্তি কেনা উচিত।’’ সেসিল এ-ও আশঙ্কা করেছিলেন যে যদি কোনও ধনী বিদেশি স্টোনহেঞ্জ কিনে ফেলেন তা হলে তিনি এটা ভেঙে বিদেশে নিয়ে চলে যেতে পারেন।
কেনার তিন বছর পর, সেসিল ব্রিটিশ জনগণকে স্টোনহেঞ্জ উপহার দেন। স্থানীয়রা যাতে বিনামূল্যে এই প্রত্নাবশেষ দেখতে পারেন তার ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন তিনি।
স্টোনহেঞ্জ দান করার পর তিনি বলেন, ‘‘স্টোনহেঞ্জ আমাদের দেশের প্রত্নক্ষেত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয়। আমি এর মালিক হতে পেরে খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রত্নক্ষেত্রের মালিকানা আমার পরিবারের কাছে থাকবে। তবে স্টোনহেঞ্জ আমার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমার মনে হয়েছে যে দেশবাসীর উদ্দেশে এই স্তম্ভ আমার দান করে দেওয়া উচিত। দেশবাসীই এই স্তম্ভের সবচেয়ে বেশি দাম দেবে।’’
সেসিলের দানের পর ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার স্টোনহেঞ্জের সংস্কার শুরু করে। পাথর সোজা করে এবং কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে এই প্রত্নক্ষেত্রের হাল ফেরানো হয়।
১৯২০-এর দশকে স্টোনহেঞ্জকে চারপাশে নতুন নতুন বাড়ি তৈরি হতে শুরু হলে দেশব্যাপী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তৈরি হয়। ১৯২৮ সালে ন্যাশনাল ট্রাস্ট স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশের জমিগুলি কিনে নিয়ে ওই এলাকায় বাড়ি তৈরির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।