Municipality Recruitment Case

ববি, মদনদের বাড়ি ছাড়ার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি, আরও নেতার বাড়িতে সিবিআই, কী হল সোমবার?

পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে পার্থসারথির। সোমবার সকালে তাঁর বাড়িতে হানা দেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। রানাঘাট পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন পার্থসারথি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:২২
Share:
০১ ২৩

রবিবারের পর সোমবারও রাজ্যের একাধিক জেলায় সিবিআই হানা। সিবিআই কর্তারা গিয়ে পৌঁছেছেন এক বিধায়কের বাড়িতেও। যদিও তিনি শাসকদলের বিধায়ক নন। রানাঘাটের বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। এই প্রথম কোনও বিজেপি নেতার নাম জড়াল পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়।

০২ ২৩

পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে পার্থসারথির। সোমবার সকালে তাঁর বাড়িতে হানা দেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। রানাঘাট পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন পার্থসারথি। যদিও তাঁর নাম কী কারণে পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়িয়েছে, তা এখনও সরকারি ভাবে জানা যায়নি।

Advertisement
০৩ ২৩

প্রসঙ্গত, অতীতে রানাঘাটে পুরপ্রধানের পদ সামলেছেন পার্থসারথি। টানা ২৫ বছর তিনি সেই পদে ছিলেন। প্রথমে কংগ্রেসের হয়ে ১৫ বছর এবং পরে ১০ বছর তৃণমূলের হয়ে। মাস ছয়েক পুর প্রশাসন বোর্ডের সভাপতি পদেও ছিলেন তিনি।

০৪ ২৩

মাঝে পাঁচ বছর ছিলেন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। ২০১১ সালের নির্বাচনে তাঁকেই প্রার্থী করে তৃণমূল। তবে ২০১৬ সালে কংগ্রেসের প্রার্থীর কাছে হেরে যান। গত বিধানসভা ভোটের আগে দলের সঙ্গে পার্থসারথির দূরত্ব বাড়ছিল বলে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। পরে জল্পনা সত্যি করে ২০২১ সালের ভোটের আগে জানুয়ারি মাসে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি।

০৫ ২৩

পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুরু থেকেই শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়াতে দেখা গিয়েছে। তা নিয়ে প্রায়ই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলতে দেখা যায় তৃণমূল নেতৃত্বকে। সে দিক থেকে পার্থসারথির বাড়িতে সিবিআই হানা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল পার্থসারথির বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

০৬ ২৩

তল্লাশি শেষে পার্থসারথি বলেন, ‘‘আদালতের তত্ত্বাবধানে পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা আমার বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। বিজেপির বিধায়ক হিসেবে নয়, তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান হিসেবেই আমার বাড়িতে তল্লাশি চলেছে। নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো নথি থাকলে তা রয়েছে পুরসভায়। তাই পুরসভাতেও তল্লাশি চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। আমার বাড়ি থেকে বিশেষ কিছু উদ্ধার হয়নি। বেশ কিছু আধার কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে। যাঁরা বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে শংসাপত্র নিতে আসেন, সেগুলি তাঁদেরই আধার কার্ড।’’

০৭ ২৩

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি যথাযথ উত্তর দিয়েছি। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে প্রশ্নগুলি করা হয়েছে তার প্রত্যেকটির উত্তর দিয়েছি এবং তদন্তকারীরা সন্তুষ্ট। হলফ করে বলতে পারি তৎকালীন সময়ে রানাঘাট পুরবোর্ডে কোনও দুর্নীতি হয়নি। ভবিষ্যতে যদি তদন্তকারীরা মনে করে তদন্তের স্বার্থে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বা হাজিরা দিতে হবে, তা হলে আমি সাহায্য করব।’’

০৮ ২৩

সূত্রের খবর, পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিভিন্ন পুরসভার প্রাক্তন এবং বর্তমান প্রধানদের বা়ড়িতে হানা দিচ্ছে সিবিআই।

০৯ ২৩

পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত সপ্তাহেই রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। তিনি এক সময়ে যে পুরসভার পুরপ্রধান পদে ছিলেন, সোমবার বেলার দিকে সেই মধ্যমগ্রাম পুরসভাতে পৌঁছে যায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হানা দেয় পুরসভার অফিসে। তল্লাশি শেষে সিবিআই আধিকারিকরা সেখান থেকে বেরিয়ে যান বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ।

১০ ২৩

মঙ্গলবার সকালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাড়িতেও হানা দেয় সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল। পুর-নিয়োগ মামলার তদন্তে মীরা হালদারের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা। বেশ কিছু নথির খোঁজ চলছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। সংশ্লিষ্ট পুরসভাতেও তল্লাশি চলছে।

১১ ২৩

সকাল ১০টা নাগাদ ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মীরার বাড়িতে পৌঁছন সিবিআইয়ে তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও। বাড়িটি ঘিরে ফেলে আধা সামরিক বাহিনী। মীরা বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁকে পুর- নিয়োগ তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে খবর সিবিআই সূত্রে।

১২ ২৩

২০১৬ সালে ডায়মন্ত হারবার পুরসভায় নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন মীরা। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, মীরার কাছে ওই নিয়োগ সংক্রান্ত নথির সন্ধানে গিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। নিয়োগে মীরার কোনও ভূমিকা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও জানা গিয়েছে।

১৩ ২৩

দীর্ঘ সাত ঘণ্টা তল্লাশি অভিযানের পর ডায়মন্ড হারবার পুরসভা থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্রে খবর, পুরসভা থেকে বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

১৪ ২৩

পুরসভায় সিবিআই তল্লাশি নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাস বলেন, ‘‘পুরসভাতে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো দুর্নীতি হয়নি। প্রতিহিংসামূলক আচরণ করানো হচ্ছে সিবিআই দিয়ে।’’

১৫ ২৩

রানাঘাট, ডায়মন্ড হারবার এবং মধ্যগ্রামের পাশাপাশি সোমবার সকালে উলুবেড়িয়াতেও পৌঁছয় সিবিআই। ঠিক সকাল ১০টায় উলুবেড়িয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান অর্জুন সরকারের বাড়ির সামনে হাজির হয় সিবিআইয়ের গাড়ি। তার পর পাঁচ জন সিবিআই কর্তা ঢোকেন বাড়ির ভিতরে।

১৬ ২৩

অর্জুনের বাড়ি উলুবেড়িয়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ফুলেশ্বরের কুশবেড়িয়ায়। সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার সকালে সেখানেই পৌঁছন সিবিআই আধিকারিকরা। বিকেলে তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

১৭ ২৩

পুর-নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্তেই এই তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। অর্জুন উলুবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তিন বছর। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁর আমলে হওয়া কিছু নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে।

১৮ ২৩

পুর-নিয়োগ মামলার তদন্ত করছে ইডি এবং সিবিআই। রবিবারই এই মামলায় রাজ্যের ন’জন নেতা-মন্ত্রীর ঠিকানা মিলিয়ে মোট ১২টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। সেই তালিকায় ছিল কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিমের চেতলার বাড়ি। তালিকায় ছিল কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের দু’টি ঠিকানা। এ ছাড়াও যাঁদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়, তাঁদের কেউ পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান, কেউ আবার প্রাক্তন পুরপ্রধান।

১৯ ২৩

রবিবার এই তদন্তের সূত্রেই সিবিআই সাতসকালে হানা দেয় রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে।

২০ ২৩

মদনের দক্ষিণেশ্বরের ঠিকানা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার সাত জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। তার মধ্যে রয়েছে কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, ব্যারাকপুর, দমদম, উত্তর দমদম, টাকি, কামারহাটি। এগুলির মধ্যে কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, উত্তর দমদম, নিউ ব্যারাকপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধানদের বাড়িতে হানা দেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা।

২১ ২৩

তল্লাশি অভিযান চলে হালিশহরের অংশুমান রায়, কাঁচরাপাড়ার সুদমা রায়, উত্তর দমদমের সুবোধ চক্রবর্তী এবং নিউ ব্যারাকপুরের তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতে। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হালিশহরের পুরপ্রধান ছিলেন তৃণমূল নেতা অংশুমান। দুই পুরপ্রধানের পরিবার সূত্রেই খবর, তাঁদের বাড়ির আলমারি ঘেঁটে কাগজপত্র বার করে দেখেছেন তদন্তকারীরা।

২২ ২৩

অন্য দিকে, তৃপ্তির পরিবার সূত্রে দাবি, বাড়ি থেকে বেরোনোয় প্রাক্তন পুরপ্রধানের গাড়ির নম্বরটি নেন সিবিআই কর্তারা। সিবিআইয়ের সাত সদস্যের দল গিয়েছিল টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সিবিআই সূত্রে খবর, সোমনাথের বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দমদম পুরসভার পুরপ্রধান হরেন্দ্র সিংহের বাড়িতেও চলে কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযান।

২৩ ২৩

রবিবার নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীম সাহার বাড়িতেও হানা দিয়েছিল সিবিআই। অসীম বর্তমান পুরবোর্ডের সদস্য। সেই সঙ্গে তৃণমূলের নদিয়া উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক। সিবিআই সূত্রে খবর, নিয়োগ মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ এবং অয়ন শীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অসীমের নাম পাওয়া গিয়েছে।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement