আশি থেকে নব্বইয়ের দশকের মধ্যে হিন্দি ফিল্মজগতে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছন। কেরিয়ার যখন মধ্যগগনে, অভিনেতার জীবনে এমন সময়ও এসেছিল যে পর পর ৭০টি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন তিনি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, একই দিনে দু’-তিনটি ছবির শুটিংও করতেন তিনি। কিন্তু যিনি বলিউডে এতটা জনপ্রিয় তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে ২৫ বছরে কোনও একক হিট ছবি যুক্ত হয়নি।
১৯৮৬ সালে ‘ইলজ়াম’ ছবির মাধ্যমে বলিপা়ড়ায় পা রাখেন গোবিন্দ। কেরিয়ারের প্রথম ছবিই হিট হয় অভিনেতার। তার পর ‘লভ ৮৬’, ‘হত্যা’, ‘জিতে হ্যায় শান সে’, ‘দো কয়েদি’র মতো ছবিতে অভিনয় করেন গোবিন্দ। প্রতিটি ছবিই বক্স অফিসে হিট হয়।
কেরিয়ারের শুরুতেই একের পর এক হিট ছবি ঝুলিতে পুরেছেন গোবিন্দ। কিন্তু কোনও ছবিই একক ভাবে হিট বা ‘সোলো হিট’ হয়নি। প্রতিটি ছবিতেই গোবিন্দকে অন্য অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।
অ্যাকশন ঘরানার ছবিতে অভিনয় করে অ্যাকশন হিরো হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন গোবিন্দ। অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্যশিল্পী হিসাবেও প্রশংসা কুড়োন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ জানান, আশির দশকে তাঁর কেরিয়ারে এমন সময় এসেছিল যখন একসঙ্গে ৭০টি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন গোবিন্দ।
গোবিন্দের জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে বলিপাড়ার প্রথম সারির ছবিনির্মাতারা তাঁর কাছেই অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতেন।
সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ জানান, ৭০টি ছবিতে তিনি অভিনয় করতে রাজি হলেও বাস্তবে সব ছবির শুটিং শুরুই হয়নি। কোনও কোনও ছবির কাজই শুরু হয়নি বলে দাবি করেন অভিনেতা।
অ্যাকশন হিরো হিসাবে জনপ্রিয় হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকে কমেডি ঘরানার ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন গোবিন্দ। ‘রাজা বাবু’, ‘কুলি নম্বর ১’, ‘বানারসি বাবু’, ‘হিরো নম্বর ১’, ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’র মতো ছবিতে অভিনয় করে কৌতুকাভিনেতা হিসাবেও প্রশংসা কুড়োন তিনি। প্রতিটি ছবিই সফল ছবির তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলে।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে গোবিন্দের কেরিয়ারের রেখচিত্র নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দুলহে রাজা’ ছবিটি গোবিন্দের কেরিয়ারের শেষ ‘সোলো হিট’ হিসাবে ধরা হয়।
পরে অবশ্য হিট ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় গোবিন্দকে। কিন্তু সে ছবিগুলি ছিল তারকাসমন্বিত।
‘হাসিনা মান জায়েগি’, ‘ভাগম ভাগ’, ‘পার্টনার’ ছবিগুলি বক্স অফিসে বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়। কিন্তু কোনও ছবিতেই একক নায়ক হিসাবে অভিনয় করেননি গোবিন্দ।
একুশ শতকে আবার পড়তে থাকে গোবিন্দের কেরিয়ার। ‘আলবেলা’, ‘রাজা ভাইয়া’, ‘নটি অ্যাট ৪০’র মতো হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও সেই ছবিগুলি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
কয়েক বছর বলিপাড়া থেকে সাময়িক বিরতি নেন গোবিন্দ। ২০১০ সালের পর আবার হিন্দি ছবিতে অভিনয় শুরু করেন তিনি।
‘রাবণ’, ‘কিল বিল’-এর মতো হিন্দি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় গোবিন্দকে। কিন্তু কোনও ছবিই দর্শকমনে দাগ কাটতে পারেনি।
২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রঙ্গিলা রাজা’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় গোবিন্দকে। এই ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু ‘রঙ্গিলা রাজা’ও বক্স অফিসে উপার্জন করতে পারেনি।
বর্তমানে নাচের বিভিন্ন রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারকের আসনে দেখা যায় গোবিন্দকে। বড় পর্দায় বহু দিন অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
বলিপাড়ার অধিকাংশের অনুমান, গোবিন্দের কেরিয়ারে রাতারাতি সাফল্য এসেছিল। কিন্তু হিট ছবির সংখ্যা বেশি হলেও ‘সোলো হিট’ ছবির সংখ্যা সে তুলনায় কম। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা পরে কোনও হিন্দি ছবিতে আদৌ অভিনয় করবেন কি না সে বিষয়েও কিছু জানাননি গোবিন্দ।