অর্থের প্রাচুর্য এলেও অন্যদের মতো বদলে যাবেন না। বরং আর পাঁচটা দম্পতির মতো সাধারণই থাকবেন। কোটি কোটি টাকার লটারি জেতার পর সকলের কাছে এমনই বলেছিলেন ব্রিটেনের জেরি এবং লিসা ক্যানিংস। তবে জ্যাকপট জেতার বছর সাতেক পর সে ‘প্রতিজ্ঞা’ ভেঙে ফেলেছেন ক্যানিংস দম্পতি।
সম্প্রতি পাকাপাকি ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে জেরি এবং লিসার। দু’জনেই নতুন সঙ্গীর সঙ্গে আলাদা ভাবে থাকতে শুরু করেছেন। এককালের ওই দম্পতির মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব এখন ১২ কিলোমিটারের।
জেরি এবং লিসা থাকতেন কেমব্রিজ়শায়ারের পিটারবোরোয়। ৭০ বছরের জেরি ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন। একটি বেসরকারি সংস্থার চাকরি করতেন ৫৫ বছরের লিসা। তবে জ্যাকপট জেতার পর অবশ্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনের ন্যাশনাল লটারির জ্যাকপট পেয়ে যান জেরি এবং লিসা। রাতারাতি তাঁদের হাতে এসেছিল ৩ কোটি ৩ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৩৩৯ কোটি ৪১ লক্ষ টাকারও বেশি।
বছর সাতেক আগে জেরিরা জানিয়েছিলেন, জ্যাকপট জিতলেও তাতে তাঁদের জীবনে বদল আসবে না। বরাবরের মতো তাঁরা ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস বোরিং অ্যান্ড নর্মাল’ থাকবেন।
সে কথা রাখতে পারেননি জেরি এবং লিসা। জ্যাকপট জেতার বছর চারেকের মধ্যেই তাঁদের দাম্পত্যে চি়ড় ধরেছিল।
‘কম্পানিজ় হাউস’ নামে ব্রিটেনের এক সরকারি সংস্থার দাবি, ২০২০ সালে লকডাউন চলাকালীন আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন ক্যানিংস দম্পতি।
দু’জনের মধ্যে বিচ্ছেদের কারণ কী? জেরি এবং লিসার মধ্যে কেউ কি অন্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন? নিজেদের মধ্যে তুমুল অশান্তি চলছিল? এ সবের কোনওটাই হয়নি বলে দাবি দম্পতির এক বন্ধুর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বন্ধু সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘‘ক্যানিংস দম্পতির বিচ্ছেদের নেপথ্যে নাটকীয় কোনও কারণ খুঁজতে যাবেন না।’’
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘দ্য সান’-এর কাছে ওই বন্ধুর দাবি, ‘‘দু’জনের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে, এটাই বাস্তব। দু’জনেই খুশি মনে নতুন সঙ্গীর সঙ্গে জীবনে এগিয়ে গিয়েছেন।’’
নিজের স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবকের প্রেমে পড়়েন জেরি। ৫৫ বছরের সামান্থা কারডেলের সঙ্গে বসবাসও করছেন।
লিসার জীবনেও নতুন সঙ্গী এসেছে। ফুটবলভক্ত কার্ল উইভারের প্রতি প্রেমের অনুভূতি জন্মেছে তাঁর। পেশায় লরিচালক কার্লের সঙ্গে একটি ‘প্রাসাদে’ থাকেন তিনি।
জ্যাকপট জেতার পর প্রায় ২২ কোটি টাকায় ওই প্রাসাদটি কিনেছিলেন ক্যানিংস দম্পতি। তবে আজকাল সেখানে জেরির বদলে কার্লের সঙ্গে থাকেন লিসা।
প্রাক্তন স্ত্রীর মতো একই এলাকায় একটি প্রাসাদোপম বাড়িতে রয়েছেন জেরি। ওই বাড়িতে সামান্থার সঙ্গে নতুন জীবনে পা রেখেছেন তিনি।
ক্যানিংস দম্পতির ওই বন্ধুর মতে, ‘‘জেরির খুব একটা খরচের হাত নেই। ফলে নতুন সঙ্গীকে পেয়ে ভালই হয়েছে। ওঁর ব্যাঙ্কে জমা রাখা লটারির কোটি কোটি পাউন্ড উড়িয়ে আনন্দ করার সঙ্গী মিলেছে।’’
পাকাপাকি ভাবে বিচ্ছেদ হলেও দু’জনেই লিঙ্কনশায়ারের গ্রামীণ এলাকায় রয়েছেন। এলাকার এক কৃষিজীবীর কথায়, ‘‘লটারি জেতার পর জেরিকে যে আর কাজকারবার করতে হবে না, তা ভেবে ওঁকে খানিকটা হিংসে করি। তবে স্থানীয়েরা সকলেই জানেন, জেরি কতটা ভালমানুষ।’’
প্রাক্তন দম্পতির আর এক বন্ধু বলেন, ‘‘লিসার জীবনের নতুন সঙ্গী একেবারে মাটির মানুষ। এত বছর ধরে চাকরি করার পর এখন বাগানের পরিচর্যা করে সময় কাটান তিনি। দু’জনে একসঙ্গে হাঁটতেও বার হন।’’
যদিও কী কারণে বিচ্ছেদ হল, সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছুই খোলসা করেননি জেরি এবং লিসা। তবে দু’জনেই লিঙ্কনশায়ার এলাকায় আলাদা বাড়িতে অন্য সঙ্গীর সঙ্গে বসবাস করছেন। তাঁদের মধ্যে ব্যবধান ১২ কিলোমিটারের।