ক্রাইমিয়া ও রাশিয়ার সংযোগকারী সেতুতে বিস্ফোরণ। ক্রেমলিন থেকে এই কের্চ সেতুর মাধ্যমেই দক্ষিণ ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হত। শনিবার সকালে তীব্র বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুটি।
কের্চ সেতুর মূলত দু’টি অংশ। একটি অংশে রয়েছে রেললাইন। অন্য অংশে পণ্যবাহী যান চলাচল করে। শনিবারের বিস্ফোরণে সেতুর উভয় অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সমাজমাধ্যমে বিস্ফোরণ-পরবর্তী বেশ কিছু ছবি ও ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, কের্চ সেতুর যান চলাচলের অংশ মাঝ বরাবর ভেঙে পড়েছে।
আর রেলগাড়ি চলাচলের অংশে একটি ট্রেনে জ্বলছে দাউদাউ আগুন। মূলত ওই অংশেই বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, স্থানীয় সময় শনিবার ভোর ছ’টা নাগাদ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে কের্চ সেতু। বহু দূর পর্যন্ত সেই আওয়াজ শোনা গিয়েছিল।
সেতুর উপর দিয়ে তখন দুরন্ত বেগে ছুটে যাচ্ছিল একটি ট্রেন। তাতে আগুন ধরে যায়।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, সেতুর উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের দু’টি কামরায় আগুন জ্বলছে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চারপাশ।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে এই কের্চ সেতুর ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।
ক্রাইমিয়া এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের যে সমস্ত এলাকা রাশিয়া অধিগ্রহণ করেছে, সেখানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ও রসদ সরবরাহের জন্য এই সেতু ব্যবহার করা হয়।
কী কারণে সাতসকালে এই সেতুতে বিস্ফোরণ হল, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, কের্চ সেতুর উপর একটি জ্বালানি তেল ভর্তি ট্যাঙ্কারে আগুন ধরে গিয়েছিল। সেই থেকেই এই বিপত্তি। কিন্তু প্রশাসনের তরফে এখনও বিস্ফোরণের কারণ জানানো হয়নি।
২০১৮ সালে ১২ মাইল লম্বা কের্চ সেতুর যান চলাচলের অংশটি চালু করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার দু’বছর পর রেল পরিবহণের অংশটিও চালু হয়েছে। শনিবারের বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হল সেই সেতু।
ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক পরস্পর বিরোধী নানা দাবি করে গিয়েছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সচিবালয়কে উদ্ধৃত করে আমেরিকার একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সে দেশের দক্ষিণে খেরসন অঞ্চলের প্রায় ২৪০০ স্কোয়ার কিলোমিটার অঞ্চল পুনর্দখল করেছে ইউক্রেনের সেনা।
জেলেনস্কির সচিবালয়ের এক আধিকারিক কাইরাইলো টিমোশেঙ্কোকে উদ্ধৃত করে আমেরিকার ওই সংবাদমাধ্যম জানায়, খেরসন অঞ্চলের ছ’টি জনবসতি এবং বেরিস্লাভ অঞ্চলের ৬১টি জনবসতিকে রুশ সেনার হাত থেকে ‘মুক্ত’ করা সম্ভব হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এমন ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি ইউক্রেনের।
অন্য দিকে, রাশিয়ার তরফে অবশ্য আগেই বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছিল, ইউক্রেনের এক-ষষ্ঠাংশ জায়গার দখল নিয়েছে তারা। কিন্তু আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, বর্তমানে বহু এলাকা পুনর্দখল করেছে জেলেনস্কির সেনা।
কিন্তু পুতিন-বাহিনী এই দাবি মানতে নারাজ। গত বৃহস্পতিবারই রাশিয়ার এক সেনা আধিকারিক বলেন, “ইউক্রেনে যুদ্ধের অগ্রগতি নিয়ে মিথ্যা দাবি করা বন্ধ করা হোক। মানুষ সবটা জানেন, কেউ বোকা নন।”
বৃহস্পতিবার রাতে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, “দেশের দক্ষিণে আমাদের সেনাবাহিনী খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আমরা থামব না। আমরা আমাদের মাটি থেকে দখলকারীদের হটাবই।”