মাত্র ১৪ বছরে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ওই বয়সেই স্কুলছুট। বয়স যখন ১৮, তত দিনে দুই সন্তানের মা। তবু নিজের স্বপ্নপূরণের থেকে পিছিয়ে আসেননি এন অম্বিকা। পুলিশ আধিকারিক হতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করে আইপিএস হয়েছেন অম্বিকা।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে এক পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অম্বিকার। তার পর আইপিএস হওয়ার সফর সহজ ছিল না। তবে সব সময় অম্বিকার পাশে ছিলেন তাঁর স্বামী।
বাল্যবিবাহ রীতি অম্বিকার থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু বাকি জীবন সেই রীতি এবং পরিবারকে দোষারোপ নিয়ে বসে থাকেননি অম্বিকা। বরং নিজের স্বপ্নপূরণের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
এক বার স্বামীর সঙ্গে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ দেখতে গিয়েছিলেন অম্বিকা। সেখানে তিনি দেখেছিলেন, উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের কতটা সম্মান দেওয়া হয়। তার পরেই অম্বিকা ঠিক করে ফেলেন, আইপিএসই হবেন।
বাড়ি ফিরে স্বামীকে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন অম্বিকা। তিনি স্ত্রীকে বুঝিয়েছিলেন যে, এই লক্ষ্যপূরণ সহজ নয়। বোর্ড পরীক্ষা পাশ করার পর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাও পাশ করতে হবে।
অম্বিকার স্বামী এ-ও বুঝিয়েছিলেন যে, তিনি দুই সন্তানের মা। শিশুদের দেখভাল করে পড়াশোনা করা কঠিন হবে। সব চ্যালেঞ্জই গ্রহণ করেছিলেন অম্বিকা।
বিয়ের জন্য ১৪ বছরেই স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন অম্বিকা। দুই সন্তানকে রেখে স্কুল যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি দূরশিক্ষণ শুরু করেন।
একে একে দশম, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেন অম্বিকা। এর পর স্নাতক পাশ করেন তিনি।
এর পর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা শুরু করেন অম্বিকা। তিনি থাকতেন তামিলনাড়ুর ডিন্ডিগুলে। সেখানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার জন্য কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না।
অম্বিকা সিদ্ধান্ত নেন, চেন্নাইয়ে চলে যাবেন। সেখানে থেকেই আইপিএস হওয়ার প্রশিক্ষণ নেবেন। স্বামীও সহমত হন।
অম্বিকা চেন্নাই চলে গেলে দুই সন্তানের দেখভাল করতেন তাঁর স্বামী। কখনও তাদের মায়ের অভাব বোধ করতে দেননি।
এর পর তিন বার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন অম্বিকা। তিন বারই ব্যর্থ হন। স্বামী বলেছিলেন, পড়া ছেড়ে ডিন্ডিগুলে ফিরে আসতে। পুলিশ আধিকারিক স্বামীর কাছে শেষ বারের মতো একটা সুযোগ চেয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, এ বার নিজেকে প্রমাণ করবেন। নয়তো ফিরে যাবেন।
চতুর্থ বারে ইউপিএসসির মেনস, প্রিলিমিনারি, ইন্টারভিউ, তিনটি রাউন্ডেই বাজিমাত করেন অম্বিকা। ২০০৮ সালে আইপিএস অফিসার হন তিনি।
অম্বিকাকে মহারাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগ করা হয়। মুম্বই পুলিশের ডিসিপি পদেও ছিলেন তিনি। তাঁকে ‘লেডি সিংহম’ বলে থাকেন তাঁর সহকর্মী এবং সাধারণ মানুষ।
কী ভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হওয়া যায়, তা প্রায়ই বলে থাকেন অম্বিকা। তাঁর মতে, প্রতি দিন খবরের কাগজ পড়া উচিত। বিভিন্ন বিষয় অনেক দিন মনে রাখার জন্য নোট নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রস্তুতি কতটা হয়েছে, তা জানার জন্য প্রার্থীদের বার বার মক পরীক্ষার দেওয়ার কথাও বলেছেন অম্বিকা। তাঁর মতে, এ ভাবে বোঝা যায়, কোন বিষয়ে কতটা প্রস্তুতি হয়েছে।