বাবা রাজ কপূরের দৌলতে তিন বছর বয়স থেকে অভিনয় শুরু করেছিলেন ঋষি কপূর। সত্তরের দশকে ডিম্পল কপাডিয়ার বিপরীতে ‘ববি’ ছবিতে অভিনয় করে পাকাপাকি ভাবে বলিপাড়ায় পা রাখেন অভিনেতা। পাঁচ দশক ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে একের পর এক হিট ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছেন তিনি। কিন্তু মায়ানগরীর জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ঋষি। সমস্যায় পড়েছিল তাঁর কেরিয়ারও।
সত্তরের দশকের খ্যতনামী চিত্রনাট্যকার ছিলেন সেলিম খান এবং জাভেদ আখতারের জুটি। বলিপাড়ায় সেলিম-জাভেদ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন তাঁরা। এই জুটির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ঋষি। এমনকি, সলমন খানের বাবা সেলিম নাকি ঋষির কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।
সেলিম-জাভেদ জুটি সত্তরের দশকে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের পরিচয় তৈরি করে নিতে সফল হয়েছিল। বলিপাড়ার নামকরা প্রযোজক এবং পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছিলেন তাঁরা। বলিজগতের কোনও তারকা তাঁদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলে ফেরাতেন না। কিন্তু সেই কাজ করেছিলেন ঋষি।
সত্তরের দশকের শেষের দিকে কেরিয়ারের শীর্ষে উঠতে শুরু করেছিলেন ঋষি। সেই সময় ঋষিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন সেলিম-জাভেদ জুটি। কিন্তু তাঁদের প্রস্তাবে রাজি হননি অভিনেতা। কাজ করতে আগ্রহী নন বলে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন চিত্রনাট্যকার জুটিকে।
অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর ঋষির উপর রেগে যান সেলিম। রাগের বশে সারা জীবনের মতো অভিনেতার কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকিও দেন সেলিম। ঋষি তাঁর আত্মজীবনী ‘খুল্লম খুল্লা: ঋষি কপূর আনসেনসর্ড’-এ এই ঘটনার উল্লেখও করেছেন।
১৯৭৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় যশ চোপড়া পরিচালিত ‘ত্রিশূল’ ছবিটি। বহু তারকাখচিত এই ছবিতে ঋষিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেলিম। কারণ এই ছবির চিত্রনাট্যের দায়িত্বে ছিলেন সেলিম এবং জাভেদ।
‘ত্রিশূল’ ছবিতে রবির চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন ঋষি। কিন্তু চিত্রনাট্যের খসড়া পড়ার পর রবির চরিত্র মনে ধরেনি অভিনেতার। সে কথা সেলিমকে জানানও তিনি। চরিত্র পছন্দ হয়নি বলেই যশের ছবিতে কাজ করতে চাননি অভিনেতা।
ঋষি কাজের সুযোগ হাতের কাছে পেয়েও যে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, তা মেনে নিতে পারেননি সেলিম। পরে রবি চরিত্রের জন্য ছবি নির্মাতারা বেছে নেন সচিন পিলগাঁওকরকে। কিন্তু আত্মসম্মানে আঘাত লাগে সেলিমের।
ঋষি দাবি করেন, ইন্ডাস্ট্রিতে তিনিই একমাত্র অভিনেতা ছিলেন যিনি সেলিম-জাভেদের কেরিয়ারের শীর্ষে তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাননি। প্রস্তাব ফেরানোর পর ঋষির সঙ্গে একটি ক্লাবে দেখা হয় সেলিমের।
ক্লাবে ঋষিকে দেখতে পেয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে যান সেলিম। অভিনেতাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘‘সেলিম-জাভেদকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস কী করে হয় তোমার?’’ কারণ জানালে আরও রেগে যান চিত্রনাট্যকার।
ঋষির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে সেলিম বলেন, ‘‘তুমি জানো কেউ কোনও দিন আমাদের না বলেনি! এর পরিণতি কী হতে পারে জানো? আমরা তোমার কেরিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারি।’’
সেলিমের কথা শুনে অবাক হয়ে যান ঋষি। কিন্তু সেলিম তখনও থামেননি। ঋষিকে উদ্দেশ করে সেলিম স্মৃতিচারণ করতে শুরু করেন। অভিনয়ের প্রস্তাব ফেরানোর কারণে তাঁরা কী ভাবে বলি অভিনেতা রাজেশ খন্নার কেরিয়ার শেষ করেন তা ঋষিকে জানান সেলিম।
১৯৭৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জঞ্জীর’ ছবিটি। প্রকাশ মেহরা পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, প্রাণ এবং জয়া বচ্চন। এই ছবিরও চিত্রনাট্য রচনার দায়িত্বে ছিলেন সেলিম-জাভেদ জুটি।
কিন্তু ছবি নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ অমিতাভ ছিলেন না। সেলিম এবং জাভেদ প্রথমে রাজেশকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রাজেশ।
‘জঞ্জীর’ ছবিতে অভিনয় করে অমিতাভ এক লাফে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান। রাজেশের কেরিয়ার নিম্নগামী হতে শুরু করে। সেলিম এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে ঋষিকে ভয় দেখাতে থাকেন যে, তাঁর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
যদিও ঋষির কেরিয়ার ধ্বংস করে দেওয়ার কথা মুখে বললেও বাস্তবে কিছুই করেননি সেলিম। নিজ অভিনয়গুণে পাঁচ দশক ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করেছেন ঋষি।