কথায় রয়েছে, ‘নামে কী আসে যায়?’ কিন্তু নামের মধ্যেই যে সব লুকিয়ে রয়েছে এমনটাই যেন আভাস দিয়েছিলেন এক বলি তারকা। শাহরুখ খানের ছবির স্রেফ নাম ভাল নয়, সে কারণে কাজ করতে রাজি হননি। পরে ছবি হিট হওয়ার পর কম পস্তাতে হয়নি সেই বলি তারকাকে।
বলিপাড়ায় পরিচালনার ক্ষেত্রে তখন হাতেখড়ি হচ্ছিল কর্ণ জোহরের। প্রথম ছবির নায়ক হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখকে। কিন্তু এই ছবির নাম শুনেই মুখ বেঁকিয়েছিলেন বলিপাড়ার অন্য এক তারকা।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ২৫ বছরে পা দিতে চলেছে কর্ণ পরিচালিত প্রথম ছবি ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। সে ছবির সঙ্গে জড়িত নানা কাহিনি নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন কর্ণ।
সাক্ষাৎকারে কর্ণ জানান, বলিপাড়ার প্রথম সারিরগীতিকার জাভেদ আখতার নাকি কর্ণের প্রথম ছবির নাম শুনে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এমনকি ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবিতে কাজের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি ফিরিয়ে দেন।
কর্ণ জানান, জাভেদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা তাঁর বহু দিন ধরেই ছিল। তাই কেরিয়ারের প্রথম ছবির গান তৈরির জন্য গীতিকার হিসাবে জাভেদকেই প্রস্তাব দেন কর্ণ।
কিন্তু কর্ণের প্রস্তাবে রাজি হননি জাভেদ। কর্ণের দাবি, প্রস্তাব খারিজ করার কারণ জানতে চাওয়া হলে জাভেদ জানান, তিনি ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির জন্য কোনও গান লিখতে পারবেন না। কারণ ছবির নামই তাঁর পছন্দ হয়নি।
জাভেদের মানা করা সত্ত্বেও কর্ণ তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। সাক্ষাৎকারে কর্ণ বলেন, ‘‘আমি ওঁকে জানিয়ে ছিলাম যে ওঁর সঙ্গে কাজ করার আমার কতটা ইচ্ছা রয়েছে। তবু কিছুতেই জাভেদকে রাজি করানো গেল না।’’
জাভেদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করলে কর্ণকে গীতিকার আশ্বাস দেন যে তিনি ভবিষ্যতে কর্ণের সঙ্গে অবশ্যই কাজ করবেন। কিন্তু ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির গান নিয়ে কাজ করতে রাজি নন তিনি।
১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। মুক্তির পর বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হিট হয় এই ছবি।
কর্ণের দাবি, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির সাফল্য লক্ষ করে মত বদলে ফেলেন জাভেদ। কর্ণকে ফোন করে জাভেদ অনুশোচনা প্রকাশ করেন।
কর্ণকে ফোন করে জাভেদ জানান যে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবিতে কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বড় ভুল করে ফেলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেন কর্ণ।
জাভেদ ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে গানের দায়িত্ব নেন যতীন-ললিত। এই ছবির গানগুলিও কম হিট হয়নি।
তবে শুধু গীতিকার নির্বাচনের ক্ষেত্রেই নয়, পার্শ্বচরিত্রের জন্য অভিনেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয় কর্ণকে।
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবিতে শাহরুখের পাশাপাশি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন রানি মুখোপাধ্যায় এবং কাজল। এ ছাড়া পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন অনুপম খের, জনি লিভার এবং ফরিদা জালাল-সহ অন্য তারকারা।
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবিতে অমান চরিত্রে অভিনয় করেন সলমন খান। ক্যামিয়ো হলেও এই চরিত্রের গুরুত্ব কোনও অংশে কম ছিল না। তবে এই চরিত্রে অভিনয় করতে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেন কর্ণ।
কর্ণ জানান, অমান চরিত্রের জন্য প্রথমে বলি অভিনেতা চন্দ্রচূড় সিংহকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন কর্ণ। কিন্তু কর্ণের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন অভিনেতা।
চন্দ্রচূ়ড়ের পর বলি অভিনেতা সইফ আলি খানের কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান কর্ণ। কিন্তু অমান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রাজি হননি সইফ।
কর্ণ জানান, চন্দ্রচূড় এবং সইফ দু’জনেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর হতাশ হয়ে পড়েন পরিচালক। কিন্তু সলমন তাঁর সব সমস্যার সমাধান করে দেন বলে দাবি কর্ণের।
কর্ণের দাবি, বলি অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডের বাড়ির এক অনুষ্ঠানে সলমনের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। কর্ণ যে অমান চরিত্রের জন্য অভিনেতার সন্ধানে রয়েছেন তা জানতে পারেন সলমন।
চাঙ্কির বাড়ির অনুষ্ঠানেই কর্ণকে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির চিত্রনাট্যের খসড়া নিয়ে সলমনের বাড়িতে যেতে বলেন অভিনেতা।
কর্ণের খসড়া পাঠের পর অমানের চরিত্র মনে ধরে সলমনের। তার পরেই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন সলমন। কর্ণের দুশ্চিন্তাতেও দাঁড়ি পড়ে যায়।