নিজের নামের চেয়ে অধিক পরিচিত কখনও রাজকুমারী ইয়াসমিনের নামে, কখনও বা চারুমতীর নামে। আট বছর বয়স থেকে কেরিয়ার শুরু করেছেন অবনীত কউর। রিয়্যালিটি শোয়ের প্রতিযোগী থেকে বর্তমানে তিনি বলি অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির পর্দার নায়িকা।
চলতি মাসেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি ‘টিকু ওয়েডস শেরু’। কঙ্গনা রানাউত প্রযোজিত এই ছবিটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন সাই কবীর। এই ছবিতে নওয়াজউদ্দিনের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যাবে অবনীতকে।
‘টিকু ওয়েডস শেরু’ ছবির ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই নওয়াজউদ্দিনের অভিনেত্রীর পরিচয় নিয়ে বলিপাড়ার অনুরাগীদের মধ্যে কৌতূহল জেগে উঠেছে। মুখ্যচরিত্রে অবনীত কি তবে বলিপাড়ার নতুন মুখ?
২০০১ সালের ১৩ অক্টোবর পঞ্জাবের জালন্ধরে শিখ পরিবারে জন্ম অবনীতের। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে জালন্ধরেই থাকতেন তিনি। সেখানেই স্কুলের পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ করে দেন তিনি। কিন্তু স্কুলে পড়াকালীন নাচ নিয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করে ফেলেছিলেন অবনীত।
নবম শ্রেণি পর্যন্ত পঞ্জাবের স্কুলে পড়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন অবনীত। সেখানেই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ৭৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
২০১০ সালে আট বছর বয়সে নাচের একটি জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেন অবনীত। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছনোর আগেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান তিনি। হার না মেনে এক বছরের মধ্যে আবার একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশ নেন তিনি।
তবে নাচ নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে পারেননি অবনীত। ২০১২ সালে হিন্দি ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি অবনীতকে। একের পর এক ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি।
‘টেড়ে হ্যায় পর তেরে মেরে হ্যায়’, ‘সাবিত্রী- এক প্রেম কাহানি’, ‘এক মুঠ্ঠি আসমান’, ‘হমারি সিস্টার দিদি’-র মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অবনীতকে।
ধীরে ধীরে টেলিভিশন জগতের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন অবনীত। যখন তিনি সবেমাত্র সাফল্যের সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখেছেন, তখনই তাঁর কেরিয়ার হঠাৎ অন্য দিকে মোড় নেয়। বলিউড থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে অবনীতের কাছে।
২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মর্দানি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান অবনীত। একটি শর্ট ফিল্মেও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
বড় পর্দায় ‘মর্দানি’ ছবিতে রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয়ের পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান অবনীত। ২০১৭ সালে সম্প্রচারিত ‘চন্দ্র নন্দিনী’ হিন্দি ধারাবাহিকে রাজকুমারী চারুমতীর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।
ধারাবাহিকের জগতে চারুমতী নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অবনীত। ২০১৮ সালে ‘আলাদিন- নাম তো শুনা হোগা’ ধারাবাহিকে রাজকুমারী ইয়াসমিন চরিত্রে অভিনয় করেন অবনীত।
এ ছাড়াও ‘করিব করিব সিঙ্গল’, ‘মর্দানি ২’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে দেখা গিয়েছে অবনীতকে। ধারাবাহিক এবং ছবিতেই শুধু নয়, ‘বব্বর কা তব্বর’ এবং ‘বন্দিশ ব্যান্ডিটস’ ওয়েব সিরিজ়ে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
মুম্বইয়ে একচেটিয়া কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন অবনীত। তাই কলেজের পড়াশোনাও মুম্বই থেকে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী। ২০২১ সালে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি কলেজে কমার্স নিয়ে ভর্তি হন তিনি।
বহু মিউজ়িক ভিডিয়োতেও অভিনয় করেছেন অবনীত। অভিনেত্রী যে মিউজ়িক প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করতেন, সেখানকার এক প্রযোজকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
কেরিয়ার নিয়ে যখন অবনীত ব্যস্ত, সেই সময় তাঁর আলাপ হয় মিউজ়িক প্রযোজনা সংস্থার প্রযোজক রাঘব শর্মার সঙ্গে। কানাঘুষো শোনা যায়, চার-পাঁচ বছর ধরে সম্পর্কে রয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু পেশার খাতিরে তাঁদের সম্পর্কের কথা গোপন রেখেছিলেন অবনীত এবং রাঘব। টেলিপাড়ার একাংশের দাবি, সামাজিক অনুষ্ঠানে রাঘবের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় অবনীতের।
প্রথম দেখাতেই অবনীতের প্রেমে পড়ে যান রাঘব। মনের কথা অভিনেত্রীকে জানান রাঘব। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে কখন যে প্রেমে পরিণত হয়ে গিয়েছিল তা টের পাননি দু’জনের কেউই।
তবে অবনীতের সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়ে তাঁর এক সহ-অভিনেতারও। টেলিপাড়ার একাংশের অনুমান, ‘আলাদিন- নাম তো শুনা হোগা’ ধারাবাহিকে অবনীতের সহ-অভিনেতা সিদ্ধার্থ নিগমের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুই তারকাই গুজব বলে উড়িয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে যে শুধুমাত্র ভাল বন্ধুত্ব রয়েছে তা জানান অবনীত এবং সিদ্ধার্থ।
সম্প্রতি ‘টিকু ওয়েডস শেরু’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে অবনীতকে। তার পাশাপাশি ‘লভ কি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ’ নামে আরও একটি হিন্দি ছবির শুটিংয়ের কাজ শেষ করেছেন অভিনেত্রী। এই ছবিতে বলি অভিনেতা সানি সিংহ নিজ্জরের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যাবে অবনীতকে।
নেটমাধ্যমে যথেষ্ট সক্রিয় থাকেন অবনীত। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীর সংখ্যা তিন কোটির গণ্ডি পার করে গিয়েছে অবনীতের।