বলিউডের নায়ক-নায়িকারা সিনেমা ছাড়াও নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চার কেন্দ্রে থাকেন। কে কখন কার সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়ালেন, তা ভক্তকুলের কাছে আকর্ষণের বিষয়।
পাশাপাশি কোনও নায়ক বা নায়িকা তাঁদের প্রেমিকা বা প্রেমিকের সঙ্গে কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন, তা নিয়েও ভক্তদের আগ্রহ প্রচুর। তাই তাঁরা কোথাও ঘুরতে গেলে তাঁদের ক্যামেরাবন্দি করতে ভিড় করেন পাপারাৎজিরা।
অনেক সময়ই বলিউডের তারকারা প্রেমে পড়লে তা বেশি দিন টেকে না। আবার সেই সম্পর্ক কখনও কখনও পরিণতি পায় বিয়ের পিঁড়িতে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ভিকি কৌশল এবং ক্যাটরিনা কইফ। সদ্য বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন আর এক তারকা যুগল রণবীর কপূর এবং আলিয়া ভট্ট।
কিছু দিন চুটিয়ে প্রেম করার পর অনেক তারকারই নিজের সঙ্গীর উপর থেকে মন উঠে যায়। পুরনো সম্পর্ক ভেঙে যে যার নিজেদের রাস্তাতে এগিয়ে যান। এমনকি কখনও কখনও বিয়ের পরেও সম্পর্ক ভাঙে তারকাদের। বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হয় তারকা জুটিদের।
তবে বিচ্ছেদের পর এই প্রাক্তন জুটিদের কারও কারও মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেলেও কেউ কেউ আবার থেকে যান নিছকই ভাল বন্ধু হিসাবে। যেমন হৃতিক-সুজান।
কেন প্রেম বা বিয়ে ভাঙে তারকা জুটিদের? কেনই বা কোনও জনপ্রিয় জুটিকে হঠাৎই দেখতে পাওয়া যায় অন্য কোন মানুষের সঙ্গে?
কোনও জুটির সম্পর্ক ভাঙার পিছনে মনোমালিন্য বা মতের অমিলের মতো হেতু দেখা গেলেও বেশির ভাগ সময়েই কারণ হয়ে ওঠে তারকাদের জীবনে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি। নতুন মোহের হাতছানির ডাকে সাড়া দিতে দেখা যায় অনেককেই। তখন পুরনো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে নতুন প্রেমের স্বাদ অন্বেষণে যান তারকারা।
অনেক সময়ই পুরনো প্রেমিক বা প্রেমিকাকে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা নিজে মুখে জানান তারকারা। পুরনো সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে নতুন জুটি বাঁধেন।
তবে অনেক সময়ই তারকারা নিজেদের ভালবাসার মানুষের উপস্থিতিতেই দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে সেই সম্পর্কের কথা জনসমক্ষে আসার পর অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে যান, বা মানতে অস্বীকার করেন।
তবে কিছু কিছু তারকা আছেন, যাঁরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের কথা জনসমক্ষেই স্বীকার করেছেন। অকপটে জানিয়েছেন, কী ভাবে তাঁরা নিজেদের সঙ্গী থাকা সত্ত্বেও অন্য এক জনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। কী ভাবে ঠকিয়েছিলেন এক কালে নিজের কাছের মানুষটিকে।
এ রকমই এক জন রণবীর কাপূর। দীর্ঘ দিনের বান্ধবী আলিয়াকে বিয়ে করা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে এখন রণবীর। তবে এই রণবীরই এক সময় দীপিকা পাড়ুকোন এবং পরে ক্যাটরিনার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছেন।
‘বাচনা ইয়ে হাসিনো’ সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন তিনি দীপিকার প্রেমে পড়েন। কয়েক বছর ধরে এক সঙ্গে ছিলেন এই জুটি। পাশাপাশি বলি পাড়ার এই জুটি দর্শকদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল।
তবে পরে দীপিকাই রণবীরের বিরুদ্ধে ঠকানোর অভিযোগ আনেন। দীপিকা দাবি করেন যে, রণবীরের জীবনে তাঁর উপস্থিতি থাকার পরও তিনি অন্য এক জনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই কারণে দীপিকা অবসাদগ্রস্তও হয়ে পড়েন।
প্রথমে বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও ২০১১ সালে অভিনেতা নিজে স্বীকার করেন যে, অভিজ্ঞতা এবং বোধের অভাবের কারণেই তিনি প্রতারণা করেছিলেন তৎকালীন প্রেমিকার সঙ্গে।
দীপিকার পরে, রণবীর জুটি বাঁধেন ক্যাটরিনার সঙ্গে। ছ’বছর প্রেম করার পর তাঁদেরও জুটি ভাঙে। তবে তাঁদের সম্পর্ক ভাঙার কারণ কখনই প্রকাশ্যে আসেনি।
তবে ক্যাটের সঙ্গে প্রেম ভাঙার পর আলিয়ার প্রেমে মজেন রণবীর। তাঁদের বিয়ে নিয়ে এখন বলি পাড়ায় চর্চা।
নিজের সঙ্গীকে ঠকানো নিয়ে অকপট ছিলেন অভিনেতা সইফ আলি খানও। ২০১৭ কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে ‘কফি উইথ কর্ণ’-তে আসেন সইফ। সেখানে তাঁকে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক কর্ণ জোহর জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কখনও নিজের সঙ্গীকে ঠকিয়েছেন কি না। প্রত্যুত্তরে সম্মতিই জানান সইফ। নিজের এক বান্ধবীর সঙ্গে তিনি প্রতারণার কথা স্বীকার করেন।
কাকে ঠকিয়েছিলেন, তা নিয়ে অবশ্য তিনি কখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে ২০০৪ সালে স্ত্রী অমৃতা সিংয়ের থেকে আলাদা হন সইফ।
পরে দীর্ঘ দিন ইতালির মডেল রোসা কাতালোনার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেন। অবশেষে তাঁর সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করেন সইফ।
শেষে করিনা কপূরের সঙ্গে কিছু বছর প্রেম করার পর বিয়ে করেন এই তারকা জুটি।
নিজের সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণার কথা যে অভিনেতা নিজে মুখে স্বীকার করেন, তাঁর নাম জানলে যে কোনও পাঠকই চমকে যাবেন। তিনি আর কেউ নন, সমকালের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী।
নিউ ইয়র্ক শহরে এক হোটেলসেবিকার সঙ্গে এক রাত কাটানোর কথা স্বীকার করেন নওয়াজউদ্দিন। নিজের লেখা, ‘অ্যান অর্ডিনারি লাইফ: অ্যা মেমোয়্যার’ বইয়ে এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন নওয়াজ।
এই বইয়ে তিনি জানান, ‘২০০৬ সাল থেকে ২০১০ আমার জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বলি জগতে সবাই আমাকে আমাকে ধীরে ধীরে লক্ষ করতে শুরু করেছিল। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে বিদেশে আমি আগে স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। এক বার নিউ ইয়র্ক শহরের সোহো এলাকায় আমার এক বন্ধুর সঙ্গে একটি ক্যাফেতে বসেছিলাম। এক জন হোটেলসেবিকা আমার দিকে অনেক ক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিলেন।’’
বইয়ে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই হোটেলসেবিকা জানতে চান, আমি অভিনেতা কি না। আমি ‘হ্যাঁ’ বলার পর জিজ্ঞেস করি, আমার কোনও সিনেমা তিনি দেখেছেন কি না। উত্তরে তিনি ‘লাঞ্চবক্স’ দেখার কথা বলেন। এর পর আমরা অনেক রাত অবধি এক সঙ্গে ছিলাম। আর নিউ ইয়র্কে যা ঘটে তা নিউ ইয়র্কেই থেকে যায়!’’
চতুর্থ যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে অন্য মহিলার জন্য ঠকিয়েছিলেন, তিনি আর কেউ নন বর্ষীয়ান অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা। তবে এক বার নয়, দু’ দু’ বার নিজের স্ত্রী পুনম সিন্হাকে ঠকিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, স্ত্রীর কাছে হাতে নাতে ধরাও পড়েন।
২০১৫ সালে এই কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। বলেছিলেন, পুনম তাঁকে সন্তানদের কথা ভাবতে বললে তার পর থেকে তিনি এই কাজ আর কখনও করেননি।