কিশোরীজীবন থেকেই ফিল্মজগতের সঙ্গে পরিচয় সিমি গারেওয়ালের। ছবি নির্মাতা যশ চোপড়ার স্ত্রী পামেলার তুতো বোন হন সিমি। সেই সূত্রেই বলিপাড়ার সঙ্গে যোগসূত্র। কিন্তু অভিনয়ে নামার মুহূর্তে বিতর্ক তাঁর নামের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ে।
১৯৪৭ সালের ১৭ অক্টোবর দিল্লিতে জন্ম সিমির। তাঁর বাবা ভারতীয় সেনায় নিযুক্ত ছিলেন। দিল্লিতে জন্ম হলেও সিমির বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে। সেখানকার নিউল্যান্ড হাউস স্কুলে পড়াশোনাও করেছেন। শৈশবের বেশির ভাগ সময় ইংল্যান্ডে থাকার পর ভারতে ফিরে আসেন তিনি।
দীর্ঘ দিন ইংল্যান্ডে থাকার সুবাদে ইংরেজি ভাষায় ছোট থেকেই দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন সিমি। ইংরেজি ভাষায় স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারেন বলে ছোটবেলা থেকেই তাঁর কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে।
১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘টারজান গোজ় টু ইন্ডিয়া’ ছবিতে ফিরোজ় খানের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় সিমিকে। তাঁর অভিনয় নজর কেড়েছিল সকলের। কেরিয়ারের প্রথম ছবিতেই বিকিনি পরে ধরা দিয়েছিলেন তিনি।
কেরিয়ারের প্রথম সিনেমায় খোলামেলা পোশাক পরায় সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন সিমি। ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেরা নাম জোকার’ ছবিতেও খোলামেলা পোশাকে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সিমি জানান, ‘মেরা নাম জোকার’ ছবির শুটিং চলাকালীন সকলের সামনে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়েছিল। বিকিনি পরতেও দেখা যায় সিমিকে।
সত্তর থেকে আশির দশকের অভিনেত্রীদের মধ্যে যাঁদের নামের সঙ্গে ‘সাহসী’ তকমা জড়িয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সিমি। তবে, তাঁর জীবন নয়া মোড় নেয় ‘মেরা নাম জোকার’ মুক্তি পাওয়ার দু’বছর পর।
১৯৭২ সালে কনরাড রুকস পরিচালিত ছবি ‘সিদ্ধার্থ’ ছবিটি মুক্তি পায়। আমেরিকার পরিচালক কনরাড মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য শশী কপূর এবং সিমি গারেওয়ালকে বেছে নেন।
বিদেশে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সিদ্ধার্থ’ ছবিটি প্রথম মুক্তি পায়। সিমির অভিনয়গুণে মুগ্ধ হয়ে পড়েন আন্তর্জাতিক দর্শক। এই ছবিতে শশীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় সিমিকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘সিদ্ধার্থ’ ছবিতে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে অভিনয় করেছিলেন সিমি। ভারতে সেই ছবি পরে মুক্তি পাওয়ার পর দেখা যায়, সিমির অন্তরঙ্গ দৃশ্যগুলি খুবই যত্নের সঙ্গে ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় দর্শক অবশ্য ‘সিদ্ধার্থ’ ছবিতে কাঁচি চালানোর কারসাজির বিষয়ে কিছুই জানতেন না। সিমির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় দর্শক।
বহু বছর পর এক পত্রিকায় ‘সিদ্ধার্থ’ ছবির রহস্য ফাঁস হয়। এই ছবিতে যে সিমি নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তার প্রমাণও দেওয়া হয়। যে তথ্য এত দিন ধরে ছবি নির্মাতারা লুকিয়ে রেখেছিলেন তা প্রকাশ্যে আসায় চটে যান সিমি।
‘সিদ্ধার্থ’ ছবির রহস্য প্রকাশ্যে আসায় সিমিকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়। সেই সময়ে সাধারণত এ গ্রেড ছবির অভিনেত্রীরা নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতেন না। এই ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখলে নায়িকারা চরম সমালোচনার শিকার হতেন।
সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি সিমিও। ‘সিদ্ধার্থ’ ছবিতে নগ্ন দৃশ্যের প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আসায় সিমিকে কটাক্ষ করেন অনেকেই। যে পত্রিকা সিমির এই রহস্য ফাঁস করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন অভিনেত্রী।
পরে অবশ্য এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সিমি বলেন, ‘‘কনরাড যখন আমাকে এই দৃশ্যে অভিনয় করার কথা জানান তখন আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে নিজেকে বোঝাই যে, এটি ছবির চরিত্র মাত্র। স্বয়ং সিমি তো নয়।’’
বলিপাড়ার একাংশের মতে, ভারতের সেন্সর বোর্ডের নির্দেশেই নগ্ন দৃশ্যগুলি ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়। তবে সিমির মতে, পত্রিকায় এই কথা ফাঁস হওয়ায় ভালই হয়েছে। তাঁর চরিত্রকে নিখুঁত ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেন সিমি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, পরে পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেন সিমি। সিমি জানান, হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করে ফেলেছিলেন তিনি।