সাম্প্রতিক কালে উপার্জনের নিরিখে বলি অভিনেত্রীদের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাস। বিশ্বসু্ন্দরীর খেতাব পাওয়ার পর বলিউডের পাশাপাশি বর্তমানে হলিউডেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু কেরিয়ার শুরু করার সময় মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। একের পর এক ছবি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছিল প্রিয়ঙ্কাকে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কার কেরিয়ারের খারাপ সময় নিয়ে মুখ খুললেন ‘গদর’ ছবির পরিচালক অনিল শর্মা।
২০০২ সালে ‘থামিজান’ নামের তামিল ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পান প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা ছিল হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার। সেই জন্য বহু জায়গায় অডিশনও দেন তিনি।
অবশেষে অনিলের নজরে পড়েন প্রিয়ঙ্কা। ‘দ্য হিরো: লভ স্টোরি অফ এ স্পাই’ ছবিতে প্রিয়ঙ্কাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন অনিল। এই ছবিতে সানি দেওলের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান প্রিয়ঙ্কা।
২০০১ সালে অনিলের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘গদর’। এই ছবিতে সানির সঙ্গে অভিনয় করেন অমিশা পটেল। সাক্ষাৎকারে অনিল জানান, ‘গদর’ ছবির সাফল্যের পর বিদেশে ছুটি কাটাতে চলে যান তিনি। কিন্তু যাওয়ার আগে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে নতুন ছবি নিয়ে সমস্ত কথাবার্তা সেরে যান অনিল।
সাক্ষাৎকারে অনিল বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কাকে নতুন ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমি। বিদেশ যাওয়ার আগে এক মন্দিরে ওর সঙ্গে দেখাও করেছিলাম। আমার স্ত্রী ওকে কিছু অগ্রিমও দেয়। তার পর আমি বিদেশ চলে যাই।’’
বিদেশ থেকে ঘুরে আসার পর আর নাকি প্রিয়ঙ্কাকে চিনতে পারেননি অনিল। এমনটাই সাক্ষাৎকারে দাবি করেন পরিচালক।
অনিল বলেন, ‘‘আমেরিকা, ইউরোপ ঘুরে দু’মাস পর দেশে ফিরেছিলাম আমি। ফেরার পর যেন অচেনা এক প্রিয়ঙ্কাকে দেখলাম। আগে ও কত সুন্দর দেখতে ছিল। ফিরে এসে দেখলাম মুখটা কী রকম কালো কালো হয়ে গিয়েছে।’’
প্রিয়ঙ্কা নাকি হলি অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টসের মতো দেখতে হতে চেয়েছিলেন। তাই নাকের অস্ত্রোপচার করান তিনি। বিভিন্ন কাগজপত্র পড়ে প্রিয়ঙ্কার ব্যাপারে এমনটাই জানতে পারেন অনিল।
সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়ঙ্কাকে নিজের দফতরে ডেকে পাঠান অনিল। পরিচালক বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কাকে ডেকে পাঠানোর পরের দিনই ও আমার অফিসে আসে। ওর মা মধু চোপড়াও সে দিন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে অফিসে এসেছিলেন।’’
প্রিয়ঙ্কার মুখের অবস্থা দেখে অভিনেত্রীকে অনিল প্রশ্ন করেন যে তিনি কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন। অনিলের প্রশ্ন শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রিয়ঙ্কা।
মধু পরে অনিলকে জানান, সাইনাসের সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রিয়ঙ্কার। অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু তা সম্পূর্ণ সফল হয়নি বলে দাবি করেন মধু।
অনিল সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের ফলে প্রিয়ঙ্কার নাকের তলায় কালো দাগ তৈরি হয়েছিল। নাকের গোড়ার দিকটাও কেমন একটা আকার নিয়েছিল।’’
প্রিয়ঙ্কা জানান, তাঁকে যে ছবিগুলিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি সবই এক এক করে হাতছাড়া হয়ে যায়।
অনিল জানান, কেরিয়ার শুরুর মুখেই হতাশ হয়ে পড়েন প্রিয়ঙ্কা। আবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন প্রিয়ঙ্কা। অভিনেত্রী জানান, নাকের সমস্যা ঠিক হতে বেশ কিছু মাস সময় লাগবে।
প্রিয়ঙ্কার পরিস্থিতি বুঝে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান অনিল। সাক্ষাৎকারে পরিচালক বলেন, ‘‘আমার এক পরিচিত রূপটানশিল্পীকে ডেকে পাঠাই আমি। প্রিয়ঙ্কার মুখের অবস্থা ঠিক করে দিতে বলি তাঁকে।’’
অনিল জানান, সেই রূপটানশিল্পী আগে যশ চোপড়ার সঙ্গে কাজ করতেন। তাঁর ছোঁয়ায় নতুন রূপ ফিরে পান প্রিয়ঙ্কা। আবার নতুন করে প্রিয়ঙ্কার ‘স্ক্রিন টেস্ট’ নেওয়া হলে ছবিনির্মাতাদের তা মনে ধরে বলে দাবি করেন পরিচালক।
‘দ্য হিরো: লভ স্টোরি অফ এ স্পাই’ ছবিটি ২০০৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সানির বিপরীতে অভিনয় করেন দ্বিতীয় নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রিয়ঙ্কা। তার পর আর কেরিয়ারে থেমে থাকতে হয়নি অভিনেত্রীকে। ধীরে ধীরে বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি গড়ে ফেলেন তিনি।