সত্তরের দশকে হিন্দি ফিল্মজগতে উপার্জনের ভিত্তিতে বলি নায়িকাদের তালিকায় প্রথম সারিতে ছিলেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ের মাধ্যমে কম সময়ের মধ্যেই সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন মৌসুমী।
মৌসুমী ছিলেন শান্ত স্বভাবের। কিন্তু যখন তিনি রেগে যেতেন তখন বলিউডের নামী অভিনেতাদেরও কথা শোনাতে ছাড়তেন না।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, একটি হিন্দি ছবির সেটে ধর্মেন্দ্রের পুত্র সানি দেওলের মুখের উপর কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন মৌসুমী। অভিনেত্রীর বকুনি খেয়ে সানি একেবারে চুপ করে যান।
১৯৯০ সালে রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মু্ক্তি পায় অ্যাকশন ঘরানার ছবি ‘ঘায়েল’। এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন ধর্মেন্দ্র।
‘ঘায়েল’ হিন্দি ফিল্মজগতের বহু তারকাখচিত ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম। এই ছবিতে সানি দেওলের পাশাপাশি রাজ বব্বর, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, অমরিশ পুরী, ওম পুরীকে অভিনয় করতে দেখা যায়। বলিপাড়ার অন্দরমহলে শোনা যায়, মৌসুমী নাকি এই ছবিতে প্রথমে অভিনয় করতে রাজিই হননি।
সেই সময় ছবিতে অভিনয় করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন মৌসুমী। ধর্মেন্দ্র বার বার অনুরোধ করার পর অভিনেত্রী কাজ করতে রাজি হন। ‘ঘায়েল’ ছবিতে রাজ বব্বরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী।
অপেশাদার আচরণ একদম সহ্য করতে পারতেন না মৌসুমী। এই কারণে সেটে সকলের সামনে সানিকে কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সকাল ৯টা নাগাদ সেটে সকলে পৌঁছে যেতেন। মৌসুমীও তাঁর শট দেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যেতেন।
সকলে সেটে সময়ে পৌঁছলেও কোনও দিন সঠিক সময়ে শুটিং শেষ করা সম্ভব হত না। দেরি হওয়ার মূল কারণ ছিলেন সানি। প্রতি দিন সেটে দেরি করে আসতেন সানি। কিন্তু কেউ তাঁকে কিছু বলতেন না।
ছবির পরিচালক রাজকুমারের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল সানির। তাই শুটিংয়ে হাজার দেরি হলেও সুসম্পর্কের খাতিরে সানিকে কিছু বলতে পারতেন না পরিচালক।
সকলে চুপ থাকলেও বেশি দিন মুখ বন্ধ করে রাখতে পারেননি মৌসুমী। মাঝেমধ্যেই সানির জন্য তাঁকে সেটে অপেক্ষা করতে হত। এক দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যান সানি।
সেটে শুধুমাত্র দেরি করেই পৌঁছননি, বরং সেটে পৌঁছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলতে থাকেন সানি। দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করার পর মৌসুমী আর রাগ সামলাতে পারেননি।
সেটে উপস্থিত সকলের সামনে সানিকে বকাঝকা করতে শুরু করেন মৌসুমী। তিনি সানিকে বলেন, ‘‘তোমার তো অভিনয় করাই উচিত নয়। পাট গুটিয়ে পঞ্জাব চলে যাও তুমি। সেখানে গিয়ে চাষবাস করো বরং। এখানে থেকে তোমার বাবার নাম খারাপ কোরো না।’’
সকলের সামনে এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না সানি। মৌসুমীর কাছে কড়া কথা শোনার পর সোজা ফ্লোরে চলে যান নায়ক।
কানাঘুষো শোনা যায়, সানির উপর রাগ করে নাকি শট দিতে চাইছিলেন না মৌসুমী। সানি বহু বার ক্ষমা চাওয়ার পর মৌসুমীর রাগ ভাঙে। তার পর ক্যামেরার সামনে এসে শট দেন অভিনেত্রী।
‘ঘায়েল’ ছবিটির বাজেট ছিল আড়াই কোটি টাকা। মুক্তির পর এই ছবিটি বক্স অফিস থেকে ২০ কোটি টাকার ব্যবসা করে।