নব্বইয়ের দশকে শাহরুখ খান থেকে সলমন খান— বলিপাড়ার অধিকাংশ তারকাই অন্ধকারজগৎ থেকে হুমকি পেতেন। কোনও তারকা পুলিশি নিরাপত্তাচাইতেন তো কেউ প্রত্যক্ষ ভাবে অন্ধকারজগতের শিকার হতেন।
১৯৯৭ সালে বলিউডের সঙ্গীত নির্মাতা গুলশন কুমারের মৃত্যুর পর বলিপাড়ার প্রায় সব তারকাই ভয় পেয়েছিলেন। মুম্বই পুলিশও তারকাদের নিরাপত্তা নিয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু এরই মাঝে উল্টো গান গাইতে শুরু করেন বলি অভিনেতা সুনীল শেট্টি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সুনীল জানিয়েছিলেন, নব্বইয়ের দশকে অভিনেতার কাছে অন্ধকারজগৎ থেকে প্রচুর ফোন আসত। তা সত্ত্বেও মুম্বই পুলিশের কাছে সাহায্য চাননি তিনি।
সুনীলকে যে অসংখ্য বার ফোনের মাধ্যমে প্রাণের হুমকি দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে অবগত ছিল মুম্বই পুলিশ। কিন্তু সুনীল সে বিষয়ে মাথা ঘামাতেন না। পুলিশ নিরাপত্তা দিতে চাইলেও বারণ করে দিয়েছিলেন অভিনেতা।
সাক্ষাৎকারে সুনীল বলেন, ‘‘ফোনের ও পার থেকে মাঝেমধ্যেই আমাকে বলা হত যে তাঁরা আমার সঙ্গে কী কী করবেন। আমাকে হুমকি দিলেই আমি উল্টে তাঁদের গালিগালাজ করে দিতাম।’’
সুনীল যে অন্ধকারজগতের লোকজনকে হুমকি দিতেন সে কথা জানত মুম্বই পুলিশ। সুনীলকে ঝামেলায় জড়াতে বারণ করতেন পুলিশ আধিকারিকেরা। সুনীল পাল্টা উত্তরে বলতেন, ‘‘আমি তো কোনও দোষ করিনি। তা হলে অযথা তাঁদের ভয় পেতে যাব কেন?’’
নিজের শৈশবের কথাও সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নেন সুনীল। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি এমন পরিবেশে মানুষ হয়েছেন যার ফলে তাঁর মনে সাহসের সঞ্চার হয়েছে।
সুনীল বলেন, ‘‘আমার শৈশব যেখানে কেটেছিল সেখানে অন্ধকারজগতের ঠেক ছিল। চোখের সামনে কয়েকটি দলকে তৈরি হতে দেখেছি আমি। তাই ওদের কী ভাবে সামলাতে হয় তার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে আমার।’’
সুনীলের দাবি, তাঁর বাবা ইচ্ছা করলেই ওই জায়গায় থাকতে পারতেন। কিন্তু সন্তানদের কথা চিন্তা করে সুনীলের বাবা বাসস্থান বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন।
সুনীলের বাবার ব্যবসায় লাভ ভালই হত যদি তাঁরা পুরনো এলাকায় থেকে যেতেন। কিন্তু অভিনেতার বাবা বুঝতে পেরেছিলেন এমন পরিবেশের প্রভাব তাঁর সন্তানের মনে পড়বে যা ক্ষতিকর। তাই বাড়ির ঠিকানা বদলে ফেলেন তিনি। এর ফলে আর্থিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয় তাঁর।
মুম্বইয়ের মধ্যে এমন একটি জায়গা বেছে নিয়েছিলেন সুনীলের বাবা, যেখানে ভাল স্কুল-কলেজ রয়েছে। মুক্ত মনের প্রতিবেশী রয়েছেন। এমন পরিবেশে ছেলেমেয়েদের বড় করলে তাঁরা মানুষ হয়ে উঠবে বলে মনে করতেন সুনীলের বাবা।
সুনীল আরও জানান, তাঁর বাবাকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। সুনীল বলেন, ‘‘আমার বাবা ভিক্ষা করেছিলেন। টাকা ধার করেছিলেন। চুরিও করেছিলেন। কিন্তু বাজে পরিবেশে থাকতে চাননি। কোনও ভাবে নিজের পরিবারকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।’’
সুনীলের বক্তব্য, ব্যক্তিগত জীবনে তিনিও বহু কষ্ট পেয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু সমস্ত খারাপ পরিস্থিতি কাটিয়ে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর ছেলেমেয়েকে কিছুই বুঝতে দেননি। জীবনে চলার পথ এমনই হয় বলেও মন্তব্য করেন বলি অভিনেতা।