সত্তরের দশকে মুক্তি পাওয়া ‘শোলে’ এখনও ভারতের সফল ছবির তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে। তবে বক্স অফিসে ব্যবসার দিক থেকে আশির দশকে ‘শোলে’কে টপকে গিয়েছিল একটি হিন্দি ছবি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সেই ছবি তৈরি করতে নাকি বাংলো, জমি সব কিছুই বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক বলি অভিনেতা।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ইতিহাসনির্ভর ছবি ‘ক্রান্তি’। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অভিনেতা মনোজ কুমার। পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।
মনোজ ছাড়াও ‘ক্রান্তি’ ছবিতে বলিপাড়ার আরও পাঁচ তারকাকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। তালিকায় ছিলেন দিলীপ কুমার, শশী কপূর, শত্রুঘ্ন সিন্হা, হেমা মালিনী, পরভিন ববির মতো জনপ্রিয় বলি তারকারা।
চার বছরের বিরতির পর ‘ক্রান্তি’ ছবির হাত ধরে কামব্যাক করেছিলেন দিলীপ। আশির দশকে তিন কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছিল এই ছবি।
আশির দশকে বলিউডে সবচেয়ে দামি ছবির তালিকার শীর্ষে নাম লিখিয়েছিল ‘ক্রান্তি’। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ছবির শুটিং হওয়ার কয়েক দিন পরেই প্রযোজকেরা ছবি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। ফলে অর্থের অভাবে শুটিং থেমে যায়।
টাকার অভাবে ‘ক্রান্তি’ ছবির কাজ থেমে যাক তা মেনে নিতে পারছিলেন না মনোজ। কম সময়ের মধ্যে অন্য কোনও প্রযোজকও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।
ছয় মহাতারকা অভিনীত ‘ক্রান্তি’ ছবিটি নিয়ে এক রকম জেদ চেপে বসেছিল মনোজের মধ্যে। কোনও প্রযোজকের সন্ধান না পেয়ে এই ছবিতে পরিচালনা এবং অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার সিদ্ধান্তও নেন তিনি।
‘ক্রান্তি’ ছবির বাজেট এত বেশি ছিল যে তাঁর অর্থ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছিল মনোজের পক্ষে। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ছবিনির্মাণের খরচ বহন করবেন বলে নিজের বাংলো বিক্রি করে দিয়েছিলেন মনোজ।
দিল্লিতে একটি বিলাসবহুল বাংলো ছিল মনোজের। সেই বাংলোই বিক্রি করে দেন অভিনেতা। কিন্তু বাংলো বিক্রি করেও অর্থের ঘাটতি পূরণ হয়নি।
বাংলোর পাশাপাশি নিজের সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মনোজ। বলিপাড়া সূত্রে খবর, মুম্বইয়ে একটি জমি কিনে রেখেছিলেন অভিনেতা। ছবি তৈরির জন্য সেই জমিও বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।
বাংলো এবং জমি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ‘ক্রান্তি’ ছবির শুটিং শেষ করেছিলেন মনোজ। কিন্তু ছবিমুক্তি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি।
সম্পত্তি বিক্রি করে ‘ক্রান্তি’ ছবিটি তৈরি করেছেন। কোনও কারণে যদি বক্স অফিসে ছবিটি ব্যর্থ হয়, তবে তাঁর ভবিষ্যৎ কী হবে? এই নিয়ে চিন্তায় ছিলেন মনোজ।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ক্রান্তি’। বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ছবিমুক্তির পরেই বক্স অফিস থেকে ২০ কোটি টাকার ব্যবসা করে ব্যবসার দিক থেকে ‘শোলে’কে টপকে যায় ‘ক্রান্তি’।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘শোলে’ ছবি মুক্তির পর ১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। তবে ছবিটি পরে আবার মুক্তি পাওয়ার পর বক্স অফিস থেকে প্রচুর উপার্জন করে।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ‘ক্রান্তি’ মুক্তির পর দর্শকের মধ্যে ছবিটি নিয়ে এমন উন্মাদনা তৈরি হয় যে জামাকাপড়েও ছবির দৃশ্য প্রিন্ট করানো শুরু হয়।
তিন মাস ধরে শুটিং চলেছিল ‘ক্রান্তি’ ছবিটির। মুক্তির পর ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে ৪০০ দিন ধরে চলে। ২৬ জায়গায় রজত জয়ন্তী এবং একাধিক জায়গায় সুবর্ণ জয়ন্তীও পালন করে এই ছবি।