শাহরুখ খান তাঁর কেরিয়ারে যতগুলি সফল ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছেন, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’। রোহিত শেট্টি পরিচালিত ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশন কমেডি ঘরানার এই ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে দীপিকা পাড়ুকোনের জুটি সকলে পছন্দ করেছিলেন। ছবিটির পাশাপাশি বিখ্যাত হয়েছিল বলিউডের র্যাপার গায়ক হানি সিংয়ের গান ‘লুঙ্গি ড্যান্স’। সেখান থেকেই শাহরুখের সঙ্গে হানির বন্ধুত্ব।
‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিতে ‘লুঙ্গি ড্যান্স’ গানটির জনপ্রিয়তার পর শাহরুখ চেয়েছিলেন যে, তাঁর পরবর্তী ছবির জন্যও যেন হানি একটি গান করেন। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরেই অন্য ছবির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শাহরুখ।
ফারহা খানের পরিচালনায় ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবির জন্য শুটিং করছিলেন শাহরুখ। এই ছবিতেও অভিনেতার বিপরীতে ছিলেন দীপিকা। শাহরুখ চাইছিলেন যে, এই ছবিতে হানির একটি গান থাকুক। ফারহার কাছে অনুরোধও করেছিলেন তিনি।
শাহরুখের প্রস্তাবে ফারহা রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা তৈরি হল অন্য জায়গায়। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশাল-শেখর জুটি। হানির উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানান দু’জন।
বিশাল এবং শেখর দু’জনের কেউই হানির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেননি। বরং তাঁরা জানান যে, হানি যদি ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবিতে কোনও গান করেন, তবে তাঁরা সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে আসবেন।
সঙ্গীত পরিচালকদ্বয়ের আপত্তির পর শাহরুখের আর কিছু করার ছিল না। হানির গান ছাড়াই ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবিটি মুক্তি ২০১৪ সালে। ছবিতে অংশ নিতে না পারলেও ছবির প্রচারের সময় অভিনেতার সঙ্গী হয়েছিলেন হানি।
ছবির প্রচারের জন্য অভিনেতা যেখানেই যাচ্ছিলেন, সেখানেই তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন হানি। এমনকি, ছবির প্রচারের জন্য এক জায়গায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কথা ছিল সেখানে গান গাইবেন হানি।
কিন্তু অনুষ্ঠানের মাঝেই গোল বাধে। দর্শক হানির গান শুনবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ তাঁরা খবর পান যে, অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণ আগেই হানি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন।
হানি কেন এমন অদ্ভুত আচরণ করলেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন অনেকেই। কেউ কেউ এই ভেবেই অবাক হচ্ছিলেন যে, শাহরুখ থাকার পরেও এমন ঘটনা কী করে ঘটতে পারে! অবশেষে প্রকাশ্যে আসে, মঞ্চের পিছনে শাহরুখের সঙ্গে বচসা বাধে হানির। তার জেরেই নাকি অনুষ্ঠান মাঝপথে ছেড়ে বেরিয়ে যান গায়ক।
আবার বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ছবির প্রচারের জন্য মঞ্চে আসতে চাইছিলেন না হানি। হোটেলের ঘরে বিশ্রাম নিতে চাইছিলেন গায়ক। শাহরুখ বার বার তাঁকে অনুরোধ করার পরেও অভিনেতার কথায় রাজি হননি হানি। এর ফলে তাঁদের মধ্যে অশান্তি হয়।
শাহরুখের সঙ্গে হানির অশান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, হানিকে নাকি সপাটে চড় মারেন অভিনেতা। চড় খাওয়ার পর রেগেমেগে সেখান থেকে বেরিয়ে যান হানি। বিমানে চেপে সোজা মুম্বই চলে যান তিনি।
শাহরুখ এবং হানির ঝামেলার কথা ছড়িয়ে পড়তে বেশি দেরি হয় না। ছবির প্রচারের সময় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন শাহরুখ। এই প্রসঙ্গে হানি বা শাহরুখের মধ্যে কেউ কিছু না বললেও সরব হয়ে ওঠেন হানির স্ত্রী শালিনী তালওয়ার। তিনি দাবি করেন, অনুষ্ঠানে এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। ভুয়ো খবর রটানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
শালিনী এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ‘‘শাহরুখ অযথা হানিকে চড় মারতে যাবেন কেন? হানিকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো দেখেন শাহরুখ। কোনও দিন হানির গায়ে হাত তুলবেন না তিনি।’’ এমনকি সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল তা নিয়েও মুখ খোলেন তিনি।
শালিনী জানান যে, বেশ কয়েক মাস ধরে হানির শরীর ভাল যাচ্ছিল না। দূরে কোথাও বেশি দিনের জন্য যাতায়াত করতে হানিকে বারণ করেছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু আগে থেকে কথা দিয়েছিলেন বলে চিকিৎসকের নির্দেশ অমান্য করে শাহরুখের সঙ্গে ছবির প্রচারে গিয়েছিলেন হানি।
যাত্রার সময় হানির শারীরিক অবস্থা লক্ষ করে শাহরুখ নাকি তাঁকে বার বার বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। এমনটাই দাবি করেছিলেন শালিনী। হানিকে বিশ্রাম নিতেও অনুরোধ করেছিলেন শাহরুখ। শেষ পর্যন্ত সুস্থ শরীরে গন্তব্যস্থলে পৌঁছন হানি।
কিন্তু অনুষ্ঠানের আগের মুহূর্তে মহড়া চলাকালীন বিপদে পড়েন হানি। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যান গায়ক। পিঠে এবং মাথায় চোটও পান হানি। তবুও নাকি পারফর্ম করতে চেয়েছিলেন।
শালিনীর দাবি, হানি তখন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন। একগাদা ওষুধ খেতে হচ্ছিল তাঁকে। এই অবস্থায় শাহরুখ জোর করে হানিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তাই অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বাড়ি চলে আসেন গায়ক।
পরে টাইম ম্যাগাজ়িনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হানি বলেন, ‘‘শাহরুখের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। আমার জীবনে এমন অনেক খারাপ সময় এসেছিল, যখন শাহরুখ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। ওকে আমি আমার বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করি।’’
হানি জানান যে, ‘লুঙ্গি ড্যান্স’ গানের সাফল্যের পর শাহরুখ তাঁর বাড়িতে পার্টির আয়োজন করেছিলেন। এমনকি শাহরুখের বাড়িতে দীপাবলি উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেই অনুষ্ঠানে আসার জন্য শাহরুখ নিজে থেকে হানিকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
হানির দাবি, চড় মারার খবরটি পুরোপুরি মিথ্যা। কিন্তু বলিপাড়ায় এখনও কানাঘুষো শোনা যায় যে, শাহরুখ নাকি সত্যি সত্যিই হানিকে চড় মেরেছিলেন।