ষাটের দশক থেকে বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি গড়তে শুরু করেছিলেন হরিহর জেঠাওয়াল জরিওয়ালা ওরফে সঞ্জীব কুমার। তাঁর সমসাময়িক অভিনেতারা সহজে বৃদ্ধ বয়সের কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হতেন না। কিন্তু সঞ্জীব কখনও এই ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। সঞ্জীব জানিয়েছিলেন, এর সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগ রয়েছে বলেই তিনি নিজের বয়সের থেকে বেশি বয়সি চরিত্রে অভিনয় করেন।
হানিফ জাভেরি এবং সুমন্ত বাত্রার সহযোগিতায় প্রকাশ পায় সঞ্জীবের জীবনী ‘অ্যান অ্যাক্টর’স অ্যাক্টর’। এই বইয়ে সঞ্জীবের জীবন সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য রয়েছে। সঞ্জীব কেন বেশি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে চাইতেন, সে বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে এই বইয়ে।
অভিনয়ে নামার পর নিজের নাম পরিবর্তন করেছিলেন সঞ্জীব। বলিপাড়ায় হরিভাই নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সঞ্জীবকে বেশির ভাগ সময় এমন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যেত, যে চরিত্রের বয়স সঞ্জীবের বয়সের চেয়ে ঢের বেশি।
সঞ্জীব জানিয়েছিলেন, তাঁর বেশি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে মন্দ লাগে না। বরং নিজের জীবনের শখ মিটিয়ে নেন তিনি।
সঞ্জীবের দাবি, তিনি কোনও দিন বুড়ো হওয়ার সুযোগ পাবেন না। তাই বৃদ্ধ বয়সে মানুষের কী রকম পরিস্থিতি হয়, তাঁর আচরণে কোনও পরিবর্তন হয় কি না, সব উপলব্ধির জন্য তিনি বড় পর্দায় প্রৌঢ় এবং বৃদ্ধ বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেন।
পঞ্চাশ বছর বয়সের চৌকাঠও পার করতে পারবেন না, এমনটা নিজেই দাবি করেন অভিনেতা।
মৃত্যুর সময় কী ভাবে জানলেন, তা নিয়ে সঞ্জীবকে প্রশ্ন করা হলে অভিনেতা জানান, তিনি যে পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত বাঁচবেন না, তা আসলে পূর্বনির্ধারিত। এমনকি এর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক যোগসূত্রও রয়েছে।
সঞ্জীবের ঠাকুরদা শিবলাল জরিওয়ালা এবং সঞ্জীবের বাবা জেঠালাল জরিওয়ালা দু’জনেই পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান।
শুধুমাত্র সঞ্জীবের ঠাকুরদা এবং বাবা নন, পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতার পরিবারের আরও দুই সদস্য।
সঞ্জীবের দাদা কিশোর জরিওয়ালা এবং ছোট ভাই নিকুল জরিওয়ালা দু’জনেই পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান।
সঞ্জীব জানান, তাঁর পরিবারের চার সদস্য যে হেতু পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা গিয়েছেন সে কারণে তাঁর মৃত্যুও পূর্বনির্ধারিত।
সঞ্জীবের দাবি, যে হেতু পঞ্চাশ বছরের পরবর্তী জীবন বাস্তবে উপভোগ করতে পারবেন না। তাই বয়স্ক লোকের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হাতছাড়া করতেন না তিনি।
সঞ্জীবের পরিবারের চার সদস্য শুধুমাত্র পঞ্চাশের গণ্ডি পার করার আগে পরলোক গমন করেছেন তা নয়। তাঁরা সকলেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে জানান সঞ্জীব।
সঞ্জীবও যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবেন সে কথাও আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন অভিনেতা। বাস্তবেও কিন্তু অভিনেতার অনুমান মিলে যায় অক্ষরে অক্ষরে।
৪৭ বছর বয়সে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সঞ্জীব। অভিনেতার মৃত্যুর সঙ্গে সত্যিই অন্য কোনও যোগসূত্র রয়েছে। না কি সমস্ত ঘটনাই কাকতালীয় তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সঞ্জীব যে বেশি দিন বাঁচবেন না তা আগে থেকেই জানতেন তিনি। সে কারণেই আর বিয়ে করতে চাননি।
অন্য দিকে বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, বলি অভিনেত্রী হেমা মালিনীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পর্কে থাকার পর সঞ্জীবের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তার পর থেকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন অভিনেতা।