আশির দশক থেকে বড় পর্দায় কেরিয়ার শুরু। ২৪০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু এক সময় তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি এমন ছিল যে, হাতখরচের জন্য প্রেমিকার কাছে নিয়মিত টাকা চেয়ে দিন কাটাতেন তিনি। এমনকি, ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েও তিন দিন পর তা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরেশ রাওয়াল।
১৯৫৫ সালের ৩০ মে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম পরেশের। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। পরেশের বাবা-মা হাতখরচ হিসাবে তাঁকে কোনও টাকা দিতেন না।
মুম্বই থেকে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর সময় নষ্ট না করে চাকরির সন্ধান শুরু করেন পরেশ। দেড় মাসের মধ্যে মুম্বইয়ের একটি ব্যাঙ্কে চাকরিও পান তিনি।
ব্যাঙ্কে চাকরির জন্য গেলেও কাজে বেশি দিন মন বসাতে পারেননি পরেশ। তিন দিন পর সেই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ব্যাঙ্কের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না বলে চাকরি ছেড়ে দেন।
১৯৭৯ সালে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন স্বরূপ সম্পত। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন পরেশ। ১৯৮৭ সালে তাঁকে বিয়ে করেন অভিনেতা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, চাকরি ছাড়ার পর প্রেমিকার কাছ থেকে হাতখরচ নিতেন পরেশ।
বলি অভিনেতা অনুপম খের সঞ্চালিত একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরেশ। সেই অনুষ্ঠানে অভিনেতা জানান, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর অর্থাভাবে কী ভাবে দিন গুজরান করবেন, তা ঠাহর করতে পারছিলেন না। তাই হাতখরচের জন্য প্রেমিকার কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি।
১৯৮২ সালে গুজরাতি ছবির হাত ধরে অভিনয়জগতে আগমন পরেশের। দু’বছর পর হিন্দি ফিল্মজগতে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হোলি’। কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে আমির খানের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান পরেশ।
১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অর্জুন’ ছবিতে সানি দেওলের সঙ্গে অভিনয় করেন পরেশ। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের মধ্যে ১০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেন তিনি।
বর্তমানে কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হলেও এক সময়ে একাধিক হিন্দি ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে পরেশকে। ‘নাম’, ‘রূপ কি রানি চোরোঁ কা রাজা’, ‘কব্জা’, ‘রাম লক্ষ্মণ’, ‘স্বর্গ’, ‘জ়ুল্ম কি হুকুমত’, ‘আঁখে’ এবং ‘দামিনী’র মতো বহু ছবিতে নেতিবাচক চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন অভিনেতা।
১৯৯৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আন্দাজ় আপনা আপনা’। আমির খান, সলমন খান, করিশ্মা কপূর এবং রবিনা টন্ডন অভিনীত এই ছবি বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। তবে ‘আন্দাজ় আপনা আপনা’ ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন পরেশ। তার পর থেকেই কৌতুকাভিনেতা হিসাবে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
‘মোহরা’, ‘হিরো নম্বর ওয়ান’, ‘জুদাই’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস খিলাড়ি’, ‘আওয়ারা পাগল দিওয়ানা’, ‘হলচল’, ‘গরম মশলা’, ‘হাঙ্গামা’, ‘মালামাল উইকলি’, ‘গোলমাল: ফান আনলিমিটেড’, ‘ভাগম ভাগ’, ‘ভুল ভুলাইয়া’, ‘ওয়েলকাম’, ‘দে ধনা ধন’-এর মতো ছবিতে মজাদার চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন পরেশ।
২০০০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হেরা ফেরি’। এই ছবিতে বাবুরাওয়ের চরিত্রে অভিনয় করে বিপুল প্রশংসা পান পরেশ। পরেশের সঙ্গে অক্ষয় কুমার এবং সুনীল শেট্টির যৌথ অভিনয় মনে ধরে দর্শকের। ‘হেরা ফেরি ৩’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পথে। এই ছবিতেও বাবুরাওয়ের ভূমিকায় দেখা যাবে পরেশকে।
‘ওএমজি- ও মাই গড!’, ‘টেবিল নম্বর ২১’, ‘সঞ্জু’ এবং ‘গুপ্ত’-এর মতো ছবিতে গুরুগম্ভীর চরিত্রেও অভিনয় করেন পরেশ। হিন্দি ছবির পাশাপাশি গুজরাতি নাটকেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল’ নামের একটি কমেডি ঘরানার ছবিতে অভিনয় দেখা যাবে তাঁর।