পরনে ঝলমলে পোশাক। ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক। বাঁ হাতে পোশাকের সঙ্গে মানানসই আংটি এবং ব্রেসলেট। চোয়ালের রেখায় বিরক্তির ভাঁজ। চোখ থেকে যেন আগুন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। সিংহাসনে লাস্যময়ী মেজাজে বসে এক নারী। নারী বললে ভুল হবে। আসলে নারীর বেশে রয়েছেন বলি অভিনেতা নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি।
চলতি বছরেই মুক্তি পাওয়ার কথা নওয়াজ়উদ্দিন অভিনীত ‘হড্ডি’ ছবিটি। এই ছবির প্রথম ঝলকে নারীর বেশ ধারণ করে প্রকাশ্যে আসেন নওয়াজ। প্রথম ঝলক দেখে আন্দাজ করা যায় যে ‘হড্ডি’ ছবিতে ছকভাঙা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে নওয়াজকে। নতুন ছবি মুক্তির আগেই বলিজগতের গোপন কথা ফাঁস করলেন অভিনেতা।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে হিন্দি ফিল্মজগতের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থার বিরুদ্ধেও সরব হন নওয়াজ়। সাক্ষাৎকারে নওয়াজ় তাঁর কেরিয়ারের গোড়ার দিকের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। শুটিং সেটে নাকি তারকা এবং পার্শ্বচরিত্রের জন্য আয়োজনের আকাশপাতাল পার্থক্য ছিল। দু’পক্ষের মধ্যে স্পষ্ট ভেদাভেদ লক্ষ করতেন নওয়াজ়।
নওয়াজ় জানান, সেটে কোনও সিনেমা চললে মূল তারকাদের জন্য এলাহি ব্যবস্থার আয়োজন করা হত। কিন্তু ছবিতে পার্শ্বচরিত্রের জন্য যে জুনিয়র আর্টিস্টরা অভিনয় করতেন, তাঁদের জন্য থাকত নিম্নমানের ব্যবস্থা।
ইন্ডাস্ট্রিতে যে ভেদাভেদ রয়েছে তা বোঝানোর জন্য নিজের জীবনের কথা উল্লেখ করেন নওয়াজ়। তিনি জানান, কেরিয়ারের শুরুতে যখন ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেন তখন দেখতেন মধ্যাহ্নভোজের সময় তারকারা তাঁবুঘেরা একটি জায়গায় চলে যেতেন।
আগ্রহ জাগায় নওয়াজ়ও এক দিন তাঁবুর ভিতর যান। তাঁবুর ভিতর উঁকি দেওয়ার পর তিনি যে দৃশ্য দেখেন তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তারকাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে এলাহি সমস্ত খাবারের। খাবার সময় যেন কষ্ট না হয়, তার জন্য ছিল আরামদায়ক পরিবেশও।
জুনিয়র আর্টিস্ট হয়ে তারকাদের তাঁবুতে গিয়েছিলেন বলে নওয়াজ়কে হেনস্থার শিকার হতে হয়। নওয়াজ দাবি করেন, তাঁবুর সামনে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁর জামার কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন তাঁকে।
নওয়াজের দাবি, জুনিয়র আর্টিস্টদের জন্য আলাদা করে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। কোনও এক কোনায় বসে সব জুনিয়র আর্টিস্ট ভিড় জমিয়ে মধ্যাহ্নভোজ করতেন। এমনকি, নৈশভোজের সময়ও একই ঘটনা ঘটতে দেখতেন নওয়াজ।
এমনকি, স্পট বয়ের কাছে যদি কখনও জুনিয়র আর্টিস্টরা জল চাইতেন, তা হলেও অপমান সহ্য করতে হত তাঁদের। নওয়াজ জানান, সেটে উপস্থিত স্পট বয়েরা নাকি জুনিয়র আর্টিস্টদের নিজে গিয়ে জল নিয়ে আসতে বলতেন।
নওয়াজ় দাবি করেন, কেরিয়ারের শুরুতে অভিনেতা হিসাবে তাঁর পরিচিতি না থাকলেও আত্মসম্মান বোধ ছিল প্রবল। কেউ তাঁকে অপমান করলে তা সহজে হজম করতে পারতেন না।
নওয়াজ় নাকি এক বার তাঁবুর ভিতরে প্রথম সারির অভিনেতাদের সঙ্গে এক জায়গায় বসে খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে তাঁকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
কেরিয়ারের শুরুতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন বলেও দাবি করেন নওয়াজ়। রামগোপাল বর্মা পরিচালিত ‘জঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ফারদিন খান এবং সুনীল শেট্টির মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান অভিনেতা।
নওয়াজ়ের দাবি, ‘জঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করলেও কাজ শেষ হওয়ার পর কোনও পারিশ্রমিক পাননি তিনি। নওয়াজ জানান, পারিশ্রমিক না পেলে বার বার সেই প্রযোজনা সংস্থার দফতরে দেখা করতে যেতেন তিনি।
দুই থেকে তিন মাস টানা প্রযোজনা সংস্থার অফিসে ঘুরে বেড়াতেন নওয়াজ়। যে ছবিতে কাজ করে তিনি পারিশ্রমিক পেতেন না, সেই প্রযোজকের দফতরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করতেন তিনি। নওয়াজের দাবি, দফতরে গিয়ে দু’তিন মাস ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া করে পারিশ্রমিকের টাকা তুলে ফেলতেন তিনি।