আশির দশকে হিন্দি ফিল্মজগতে কেরিয়ার শুরু করে নব্বইয়ের দশকের মধ্যে বলিপাড়ার কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন গোবিন্দ। সেই সময় একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন অভিনেতা। গোবিন্দ যখন তাঁর কেরিয়ারের শীর্ষে তখন তাঁর কাছ থেকে একটি হিট ছবি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন সলমন খান।
২০০৭ সালে ‘পার্টনার’ এবং ‘সালাম-এ-ইশক’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় গোবিন্দ এবং সলমনকে। তবে দুই অভিনেতার বন্ধুত্ব বহু বছরের। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন গোবিন্দ।
১৯৯৭ সালে ডেভিড ধওয়ানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জুড়ওয়া’ ছবিটি। এই ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সলমনকে। সলমনের বিপরীতে এই ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন করিশ্মা কপূর। বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে ‘জুড়ওয়া’।
সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ জানিয়েছিলেন, ‘জু়ড়ওয়া’ ছবিতে সলমন নন, অভিনয় করার কথা ছিল গোবিন্দের। এমনকি এই ছবির শুটিংও শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সলমনের কথায় এই ছবি থেকে সরে যান তিনি।
গোবিন্দ জানিয়েছিলেন, ‘জুড়ওয়া’ ছবির শুটিংয়ের সময় ‘বানারসি বাবু’ ছবির শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে দু’টি ছবির শুটিং করছিলেন গোবিন্দ। সেই খবর পৌঁছয় সলমনের কাছে।
গোবিন্দ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘তখন ‘জুড়ওয়া’ ছবির শুটিং চলছে। হঠাৎ মাঝরাতে সলমনের ফোন। তখন রাত ২টো কি ৩টে হবে। আমি তো অবাক।’’
গোবিন্দকে ফোন করে সলমন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কি চিচিভাই? আর কত হিট ছবিতে অভিনয় করবে তুমি?’’ মাঝরাতে ফোন করে সলমন হঠাৎ এই ধরনের প্রশ্ন কেন করছেন তা প্রথমে বুঝতে পারেননি গোবিন্দ।
সলমনের ইঙ্গিত ধরতে না পেরে তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন গোবিন্দ। সলমনকে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘কেন কী হয়েছে?’’
গোবিন্দের প্রশ্ন শুনে সলমন হঠাৎ তাঁকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন ‘জুড়ওয়া’ ছবি থেকে নিজেকে সরিয়ে সলমনকে সুযোগ দেন।
শুধুমাত্র ‘জুড়ওয়া’ ছবিতে অভিনয়ই করতে চাননি সলমন। তার পাশাপাশি গোবিন্দকে আরও অনুরোধ করেছিলেন বলিউডের ‘ভাইজান’।
‘জু়ড়ওয়া’ ছবির প্রসঙ্গ নিয়ে গোবিন্দের কাছে সলমন অনুরোধ করে বলেছিলেন, ‘‘তোমাকে কিন্তু ছবির পরিচালককেও দিতে হবে। এমনকি ছবির প্রযোজকও কিন্তু একই থাকতে হবে। তুমি সরে যাওয়ার পরেও যেন সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে থাকেন।’’
সলমনের এক কথায় ‘জুড়ওয়া’ ছবি থেকে সরে যান গোবিন্দ। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন অভিনেতা। গোবিন্দ জানান, ‘জুড়ওয়া’ ছবির যে অংশটুকু তিনি শুটিং করেছিলেন তার পর আর এগোননি। সঙ্গে সঙ্গে কাজ থামিয়ে দেন তিনি। সলমন এই ছবির সঙ্গে নিজেকে জুড়লে আবার নতুন করে ‘জুড়ওয়া’ ছবির শুটিং শুরু হয় বলে জানিয়েছিলেন গোবিন্দ।
সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে সলমনের শুধুমাত্র পেশাগত সম্পর্ক নেই। দুই অভিনেতার সম্পর্ক অনেকটাই ব্যক্তিগত। সম্পর্কের এই ব্যক্তিগত পরিসরে কাজের কোনও প্রভাব পড়ে না বলেও জানিয়েছিলেন গোবিন্দ।
গোবিন্দ জানিয়েছিলেন, সলমন নাকি দুঃসময়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বহু বছর অভিনয়জগৎ থেকে দূরে থাকার পর গোবিন্দ যখন আবার বলিউডে ফিরতে চেয়েছিলেন সেই সময় অভিনেতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সলমন এবং তাঁর পরিবার।
সলমন এবং তাঁর ভাই সোহেল খান দু’জনেই গোবিন্দকে শ্রদ্ধা করেন। সলমন এবং সোহেলকেও নিজের পরিবারের মতোই ভাবেন গোবিন্দ। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন বলিউডের ‘চিচি’ ভাই।
সলমনের প্রশংসা করে গোবিন্দ বলেছিলেন, ‘‘অন্য অভিনেতাদের সব সময় শ্রদ্ধা করা প্রয়োজন। যদি এক জন তারকার মনের ভিতর অভিনেতার জন্ম নেয় তা হলে আচার-আচরণেও তা ধরা পড়ে। সলমন তেমনই এক জন তারকা। ভগবান সব সময় ওর মঙ্গল করুন।’’