আশির দশকের শেষের দিকেই হিন্দি ফিল্মজগতে নিজেদের কেরিয়ার গড়তে নেমেছিলেন আমির খান এবং মাধুরী দীক্ষিত। তিন দশকের বেশি সময় কেটে গেলেও বলিপাড়ার এই দুই তারকা একসঙ্গে মাত্র দু’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৯০ সালের পর আর কাজ করতে দেখা যায়নি দু’জনকে। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, আমিরের অভব্য আচরণের জন্যই নাকি মাধুরী তাঁর সঙ্গে আর কাজ করতে চাননি।
১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন আমির। কিন্তু তার পর মুক্তি পাওয়া গুটিকতক ছবিতে অভিনয় করেও বক্স অফিসে তা উপার্জন করতে ব্যর্থ হয়।
অন্য দিকে, বলিপাড়া তখন মাধুরীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অভিনয় হোক বা নাচ— মাধুরী যেন সব কিছুতেই নিপুণ। পরিচালক ইন্দ্র কুমার তখন ‘দিল’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে কাজ করার জন্য আমিরকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন।
আমিরের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় মাধুরীকে পছন্দ করেছিলেন ইন্দ্র। তার আগে আমির এবং মাধুরী একে অপরের সঙ্গে কাজ করেননি। ‘দিল’ ছবির সেটেই তাঁদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিল’ ছবিতে আমির এবং মাধুরীর সম্পর্কের রসায়ন দর্শকের মনে ধরে। পর্দার নেপথ্যেও তাঁদের সম্পর্ক মজবুত ছিল। ঠাট্টা-তামাশা করতে করতেই কাজ করতেন।
ফারহান আখতার সঞ্চালিত একটি রিয়্যালিটি শোয়ে আমির ‘দিল’ ছবির শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খোলেন। আমির জানান যে, তিনি নাকি মাধুরীর হাতে থুতু ফেলে দিয়েছিলেন।
‘দিল’ ছবির শুটিংয়ের মাঝে মাধুরীর সঙ্গে হরদম মজা করতেন আমির। শুটিংয়ের বিরতির মধ্যেই নায়িকাকে আমির জানান যে, তিনি নাকি হাতের রেখা দেখে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেন।
আমির ভবিষ্যৎ বলতে পারেন জেনে মাধুরী আগ্রহী হয়ে অভিনেতার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেন। আগামী দিনে মাধুরীর সঙ্গে কী কী ঘটতে পারে, তা জানতে চান অভিনেত্রী।
আমিরও নিখুঁত ভাবে মাধুরীর হাতের রেখা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। অভিনেতা মাধুরীকে বলেন, ‘‘তুমি খুব নরম মনের মানুষ। খুব সহজে অনুভূতিপ্রবণ হয়ে পড়ো।’’
মাধুরীকে উদ্দেশ করে আমির আরও বলেন, ‘‘লোকে তোমাকে যা বলে, তুমি তাই বিশ্বাস করে নাও। যেমন আমি তোমাকে এখন বোকা বানিয়ে চলেছি আর তুমি আমার কথা বিশ্বাস করে যাচ্ছ।’’ এই বলেই মাধুরীর হাতে থুতু ফেলে দেন আমির।
আমিরের ঠাট্টার ধরন মেনে নিতে পারেননি মাধুরী। রাগের বশে কী করবেন, তা ঠাহর করতে পারছিলেন না তিনি। হাতের কাছে হকি খেলার স্টিক দেখতে পান অভিনেত্রী। তা দিয়েই আমিরকে মারতে যান তিনি।
আমির সাক্ষাৎকারে জানান, মাধুরী তাঁর উপর এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তাঁকে মারার জন্য হকি স্টিক নিয়ে পুরো সেট জুড়ে তাড়া করে বেরিয়ে ছিলেন।
২০১৬ সালে টুইটারে মাধুরীকে প্রশ্ন করা হয় যে, কমবেশি দুষ্টুমি সকলেই করে থাকে। কিন্তু নায়িকার জীবনে এ রকম কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে কি? এই প্রশ্ন করায় আমিরের কথাই উল্লেখ করেন তিনি।
মাধুরী বলেন, ‘‘আমার এখনও মনে রয়েছে যে, আমিরকে মারব বলে আমি সিনেমার সেট জুড়ে হকি স্টিক নিয়ে ওকে তাড়া করে বেরিয়ে ছিলাম।’’
‘দিল’ ছবি মুক্তি পাওয়ার পর একই বছর ‘দিওয়ানা মুঝসা নেহি’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন মাধুরী এবং আমির। কিন্তু তার পর আর কোনও ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেননি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, মাধুরীর হাতে থুতু ফেলে দিয়েছিলেন বলেই আমিরের সঙ্গে আর কাজ করতে চাননি অভিনেত্রী।
আবার বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ১৯৯০ সালের পর বলিউডের কোনও ছবি নির্মাতাই আমির এবং মাধুরীকে একসঙ্গে অভিনয় করার প্রস্তাব দেননি। সুযোগের অভাব থাকার কারণেই দুই তারকাকে একসঙ্গে দেখা যায়নি।
যদিও ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বম্বে টকিজ়’ ছবিতে অতিথিশিল্পী হিসাবে আমির এবং মাধুরীকে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা একসঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেননি।