প্রতি বছরই নামীদামি বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় উঠে আসে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকা। আর এই তালিকা দেখার অপেক্ষায় থাকেন বহু মানুষ। এই তালিকায় আমেরিকা, চিন, ভারত, ব্রিটেনের কোটিপতি ব্যবসায়ীদের নাম প্রায়ই চোখে পড়ে। কিন্তু নেপাল বা ভুটানের মতো দেশের কোটিপতি কোনও ব্যবসায়ীর নাম সচরাচর এই তালিকায় চোখে পড়ে না। কিন্তু ২০১৩ সালে এই কোটিপতিদের তালিকাতেই নাম তুলেছিলেন নেপালের ব্যবসায়ী বিনোদ চৌধরী।
বিশ্বের সেরার সেরা ধনকুবেরদের তালিকায় অম্বানী-আদানির মতো বিনোদ একটি অতি পরিচিত নাম নয়। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা কস্মিনকালে বিনোদের নামও শোনেননি।
কোটিপতিদের তালিকায় নেপালের মতো ছোট দেশের হয়ে প্রতিনিধত্ব করা বিনোদ সে দেশের প্রথম এবং একমাত্র ধনকুবের।
বিনোদের বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ দেড়শো কোটি ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় ১২ হাজার ২৫২ কোটি টাকারও বেশি।
প্রায় এক দশক আগে একটি নামী পত্রিকার কোটিপতিদের তালিকায় ১৩৪২তম স্থানটি বিনোদ পেয়েছিলেন। তার পর থেকেই বিনোদকে নিয়ে নেপালের মানুষের গর্বের শেষ নেই।
ওই পত্রিকার কোটিপতিদের তালিকায় নাম তোলার দু’বছর পর ২০১৫ সালে, নেপালের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মানুষদের জন্য প্রায় ১০ হাজার ভূমিকম্পরোধী বাড়ি বানিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন বিনোদ।
এ ছাড়াও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল এবং বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২০ কোটি ৪২ লক্ষ টাকারও বেশি) দান করেছিলেন বিনোদ।
৬৭ বছর বয়সি বিনোদ সিজি কর্প গ্লোবাল নামে এক সংস্থার মালিক। নেপালের নাবিল ব্যাঙ্কেও তাঁর অংশীদারি রয়েছে। বিনোদের অন্য এক সংস্থা সিজি ফুডস বিখ্যাত ওয়াই ওয়াই নুডলসের প্রস্তুতকারক।
ভারত, সার্বিয়া এবং বাংলাদেশের বাজারে ওয়াই ওয়াইয়ের চাহিদা তাঁর বিপুল সম্পত্তি আরও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
ভারত, সার্বিয়া এবং বাংলাদেশ ছাড়া মিশরেও ওয়াই ওয়াইয়ের কারখানা রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্বাদের সস তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে বিনোদের সংস্থার।
দেশ-বিদেশ মিলিয়ে বিনোদ প্রায় ১৩৫টি হোটেলের মালিক। ভারতেও বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে তাঁর।
দুবাইয়েও একাধিক বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে বিনোদের। ২০১৯ সালে টাটা গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে তাঁর সংস্থা। এই চুক্তি অনুযায়ী, বিনোদের দুবাইয়ের হোটেলগুলির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে টাটা গোষ্ঠী।
নেপালের কাঠমান্ডুতে একটি মাড়োয়ারি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিনোদ। বর্তমানে নেপালে বসবাস করলেও ভারতের সঙ্গে গভীর যোগসূত্র রয়েছে তাঁর। বিনোদের দাদু ভুরামল দাস চৌধরী রাজস্থানের এক জন উদ্যোগপতি ছিলেন।
কাপড়ের ব্যবসা করে এক সময় প্রচুর টাকার মালিক হন ভুরামল। পরে তিনি রাজস্থান ছেড়ে নেপালে চলে আসেন।
বর্তমানে বিশ্বের সেরা ধনকুবেরদের তালিকায় বিনোদের স্থানচ্যূতি হয়েছে। আগের থেকে বেশি কিছুটা পিছনেই রয়েছে তাঁর নাম। বর্তমানে এই তালিকায় বিনোদ দাঁড়িয়ে ১৯২৯তম স্থানে।