ভারতের সব থেকে ধনী ব্যক্তি হলেন তাঁর ভাই। গৌতম আদানি। তবে দাদাও কিছু কম যান না। তাঁরও রয়েছে আলাদা সাম্রাজ্য। আলাদা রাজপাট। তবে এ দেশে নয়। বিদেশে। সব থেকে ধনী প্রবাসী ভারতীয় তিনি। নাম বিনোদ আদানি।
আইআইএফএল (ইন্ডিয়া ইনফো লাইন ফিনান্স লিমিটেড) ওয়েলথ এবং হুরুন ইন্ডিয়া ধনী ভারতীয় এবং প্রবাসীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, সব থেকে ধনী প্রবাসী ভারতীয় হলেন বিনোদ। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ এক লক্ষ ৬৯ হাজার কোটি টাকা।
দেশে ধনীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন গৌতম আদানি। সেখানেও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বিনোদ। জানিয়েছে আইআইএফএল ওয়েলথ সংস্থা।
বিনোদের এ দেশে ব্যবসা নেই। দুবাই, সিঙ্গাপুর, জাকার্তায় তাঁর ব্যবসা রয়েছে।
হুরুন ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ২০২১ সালে বিনোদের সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। যার মূল্য ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ধনী ভারতীয়দের তালিকায় অষ্টম স্থানে ছিলেন বিনোদ। এক বছরে উঠে এসেছেন ষষ্ঠ স্থানে।
হুরুন ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল— এই পাঁচ বছরে বিনোদের সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৮৫০ শতাংশ। ওই পাঁচ বছরে গৌতমের দাদার সম্পত্তি বেড়েছে এক লক্ষ ৫১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
হুরুন ইন্ডিয়ার তালিকায় বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালে গৌতম আদানি এবং তাঁর পরিবারের সম্পত্তি বেড়েছে ১৫.৪ গুণ। আর বিনোদ এবং তাঁর পরিবারের সম্পত্তি বেড়েছে ৯.৫ গুণ।
২০১৮ সালে ধনী ভারতীয়দের তালিকায় ৪৯তম স্থানে ছিলেন বিনোদ। আর ২০২২ সালে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছেন। ২০২২ সালে প্রতি দিন তাঁর আয় ছিল ১০২ কোটি টাকা।
২০২২ সালে হুরুন ইন্ডিয়ার পেশ করা রিপোর্ট বলছে, গৌতম এবং বিনোদ, দুই ভাইয়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪০০ কোটি। ধনীদের তালিকায় প্রথম দশ জনের সম্পত্তি যোগ করলে যত হয়, তার ৪০ শতাংশই দুই ভাইয়ের।
২০২২ সালে হুরুন ইন্ডিয়া পেশ করা ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় ৯৪ জনের নাম রয়েছে। তালিকায় ৮৮ শতাংশ প্রবাসীই উত্তরাধিকার সূত্রে কোনও সম্পত্তি পাননি। সবটাই করেছেন নিজের চেষ্টায়।
২০২২ সালে প্রকাশিত ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় রয়েছে ৯৪ জনের নাম। তার মধ্যে ৪৮ জনই থাকেন আমেরিকায়। সেখান থেকেই ব্যবসা চালান।
গুজরাতের আমদাবাদে জন্ম বিনোদের। বাবার ছিল টেক্সটাইলের ব্যবসা। বিনোদও সেই ব্যবসাই শুরু করেন। যদিও ভাই গৌতম আশির দশকে হিরের ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
১৯৭৬ সালে মুম্বইয়ের ভিওয়াণ্ডিতে বিদ্যুৎচালিত কাপড়ের কল দিয়ে ব্যবসায় হাতেখড়ি। ক্রমেই আড়েবহরে বাড়তে থাকে সেই ব্যবসা। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দেন বিনোদ।
বিদেশে ব্যবসা দেখভালের জন্য সিঙ্গাপুরে দফতর খোলেন বিনোদ। ১৯৯৪ সালে দুবাইয়ে থিতু হন বিনোদ। সেখান থেকেই জাকার্তা আর সিঙ্গাপুরের ব্যবসা দেখতে শুরু করেন তিনি।
সাফল্যের পাশাপাশি বিতর্কেও নাম জড়িয়েছে বিনোদের। এক বার নয়, একাধিক বার। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় প্যান্ডোরার পেপার। কালো টাকা সাদা করার জন্য বিদেশে ভুয়ো সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, এমন কয়েক জনের নাম উঠে আসে রিপোর্টে। সেই তালিকায় ছিল বিনোদের নামও।
ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়, কর ফাঁকি করতে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডেও একটি ভুয়ো সংস্থা খুলে রেখেছেন বিনোদ। যদিও বিনোদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। একটি সংবাদ সংস্থাকে বিনোদ জানিয়েছিলেন, বহু বছর আগেই বন্ধ করা হয়েছে সেই ব্যবসা।
তার আগে ২০১৬ সালে পানামা রিপোর্টেও নাম ছিল বিনোদের। ওই রিপোর্টে অমিতাভ বচ্চন, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ-সহ বহু বিশিষ্ট জনের নাম ছিল। অভিযোগ করা হয়েছিল, কর কারচুপির জন্য ভুয়ো সংস্থা খুলেছেন এই বিশিষ্টরা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর কারচুপির জন্য ১৯৯৪ সালে বাহামায় ভুয়ো সংস্থা খুলেছেন বিনোদ। এর দু’মাস পরেই বিনোদ নাম বদলে নেন। নতুন নাম হয় বিনোদ শান্তিলাল শাহ। গৌতমের সংস্থা জানিয়ে দেয়, বিনোদের সংস্থার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই।